Ajker Patrika

ভাঙল বইয়ের হাট

সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৩, ১০: ১৯
ভাঙল বইয়ের হাট

শেষ হলো ফেব্রুয়ারি। ফুরিয়ে গেল মেলার সময়। এক মাসের বর্ণিল আয়োজন যেন নিমেষেই শেষ! কত গল্প, ভালোবাসা, স্মৃতি এই মেলা ঘিরে। সেই সব আবেগ আগামীর জন্য স্মৃতি হয়ে রইল। এমন আনন্দের উপলক্ষ শেষ হয়ে যাওয়ায় খানিক কষ্ট হলো সবার। প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটা এবং নতুন মলাটবদ্ধ বইয়ের ঘ্রাণ বুকভরে নেওয়ার জন্য আবারও বছরের অপেক্ষা শুরু।

গতকাল মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ছিল পাঠক-দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। বিকেল থেকেই মেলার প্রতিটি প্রবেশমুখে ছিল পাঠকদের দীর্ঘ লাইন। সেই লাইন সন্ধ্যা নাগাদ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। টিএসসি-সংলগ্ন প্রবেশমুখে মানুষের সারি চলে গেছে মূল সড়ক পর্যন্ত। দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, মেলার শেষ দিনের স্মৃতি মনে রেখে দিতে চান তাঁরা।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বছিলা থেকে মেলায় আসা আশজাদুর রহমান শাকিল জানিয়েছেন, নিজে কয়েকবার মেলায় এলেও পরিবার নিয়ে এবার মেলায় আসার সুযোগ হয়নি তাঁর। গতকাল মেলার শেষ দিনে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। শাকিল বলেন, ‘আগে বাবা আমাকে মেলায় নিয়ে আসতেন। বই কিনে দিতেন। সেটা খুব আনন্দের ছিল। এখন আমিই বাবা; মেয়েকে নিয়ে আসা হয়নি এবার। মেয়ের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখা যায় না; তাই শেষ বেলায় এলাম।’

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, এবার মেলায় এসেছিলেন প্রায় ৬৫ লাখ দর্শনার্থী! আর মেলায় প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ৩ হাজার ৭৩০টি নতুন বই। পুরোনো বইয়ের লাইব্রেরি আরেকটু ভারী করে নিয়েছেন কেউ কেউ। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘শুরুতে নানান প্রতিবন্ধকতা থাকলেও প্রতিনিয়ত সেসব সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে সুন্দর একটি মেলা আয়োজন সম্ভব হয়। মেলা ভালো হয়েছে। আগামীবার আরও কীভাবে ভালো করা যায়, তা নিয়ে আমরা সবার সঙ্গে মতবিনিময় করব।’

বিকেল ৫টায় বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘বিন্যাস ও আঙ্গিকগত দিক দিয়ে এবারের বইমেলা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে।’

তবু মেলায় আর সেই আগের মতো মানুষের আড্ডা, ছোটাছুটি নেই বলে জানিয়েছেন অঙ্কুর প্রকাশনীর প্রকাশক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, আগে মানুষ মেলায় এসে বই খুঁজত। বই পড়ে লেখকদের চিনত। এখন পাঠকেরা পরিচিত লেখকের বই খোঁজে। তিনি বলেন, ‘মেলায় দর্শক বেড়েছে, তবে পাঠক বাড়েনি।’ প্রকাশনীটি থেকে মেলার একেবারে শেষ দিনে প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক ও লেখক বিভুরঞ্জন সরকার সম্পাদিত মুনীরুজ্জামানের ‘চেনা জগৎ জানা কথা’। মেলার একেবারে শেষ দিনেও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ২৬৭টি নতুন বই। এগুলোর মধ্যে ১২১টি কবিতা, ১১টি প্রবন্ধ ও ২৪টি গল্পের বই রয়েছে।

সন্ধ্যা মিলিয়ে গেলে মেলার পথ পেছনে ফেলে বের হয়ে আসতে হলো। তখন আতশবাজি ফুটছে আকাশে। মুক্ত আকাশে আলো জ্বেলে যেন বিদায় নিতে চাইছে বইমেলা। শেষবার ফিরে তাকিয়ে তখন আমার মতো মেলাকে বিদায় জানাচ্ছিলেন হাজারো বইপ্রেমী, পাঠক, প্রকাশক, শিল্পী, সাহিত্যিক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত