Ajker Patrika

পুনর্বাসন কেন্দ্রে দুর্ভোগ

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩: ১৩
পুনর্বাসন কেন্দ্রে দুর্ভোগ

ভালো নেই পদ্মা সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দারা। পরিকল্পিত এবং আধুনিক সুবিধা নিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু হলেও বর্তমানে কেন্দ্রের বাসিন্দারা রয়েছেন দুর্ভোগে। আগে সরকারের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেওয়া হলেও এখন আর কেউ খোঁজ খবর নেন না বলে অভিযোগ জমি হারানো বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ‘বাখরেরকান্দি’ এলাকায় পদ্মা সেতু পুনর্বাসনের একটি কেন্দ্র রয়েছে।

সেখানে কথা হয় বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্রের আব্দুস ছাত্তার মাতুব্বরের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে পদ্মা সেতুর বেড়িবাঁধের জন্যে আমার ৯৮ শতাংশ জমি ও ১৬ শতাংশ বাড়ির জায়গা অধিগ্রহণ করে নিয়ে যায় সরকার। এরপরে বাখরেরকান্দি এলাকায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাত্র ৫ শতাংশ জমি পাই। যা প্রায় এক লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করে পাই। এই ৫ শতাংশ জায়গায় আমার ৪ ছেলে ও তাদের পরিবার নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করছি। তিনটা ঘর তুলছি কোনো রকমে। শ্বাস নেওয়ারও জায়গা পাই না। তাও কোনো রকম আছি। আর থাকার জায়গাও নেই।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র আড়াই শতাংশ জায়গার ওপর ঘর করছে আগের ফেরি ঘাট থেকে সরে আসা মৃত আলমগীর খানের ছেলে শাহজাহান খান। তিনি একটি দোচালা টিনের ঘর করছেন। এত দিন কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় বর্তমানে ঘর করছেন। ভিটামাটি সব পদ্মা সেতুর জন্যে দিতে হয়েছে শাহজাহান খানকে। এখন তিন ভাই ও এক বোনকে নিয়ে ঘর তুলে এখানে বসবাস করবেন।

এব্যাপারে শাহজাহান খান বলেন, ‘এতদিন ঘর করেননি। এখন কোনো রকম টিনের ঘর তুলেছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতে হবে তাই। আমাদের জন্য মাত্র আড়াই শতাংশ জায়গা পাইছি পুনর্বাসন কেন্দ্রে। তবে এখানে আধুনিক কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। কয়েকটা রাস্তা করে দিয়েছে। আর বিদ্যুতের লাইন দিয়েছে। সব আমাদের টাকায় করতে হয়।’ তার সঙ্গে একই কথা বলেন শাহজাহান খানের চাচা সরোয়ার খান।

পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে জানা যায়, শিবচর বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্রে আড়াই শতাংশ, পাঁচ শতাংশ আর সাড়ে সাত শতাংশ জায়গার প্লট রয়েছে ৬১১টি। এ পর্যন্ত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৬০৩টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একেন্দ্রে সরকারিভাবে একটি মসজিদ, একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির লাইনসহ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। তবে সরকারকে জমি দিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রে। বর্তমানে কেন্দ্রের ড্রেন ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেই। দুর্গন্ধ আর মশা মাছির প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সব সময় চিকিৎসক থাকে না। বিস্তর অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রের বাসিন্দাদের।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সবাই অলস সময় পার করছেন। কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মৌমিতা ইসলাম হাসপাতালে নেই। তার সহকারী ডা. প্রতাপ চন্দ্র দাস কাজ করছেন। তাকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কেন্দ্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল আছে মোট ৯ জন।

এর মধ্যে একজন মেডিকেল অফিসার, উপমেডিকেল অফিসার ১ জন, নার্স ১ জন, ফার্মাসিস্ট ১ জন, ক্লিনার ১ জন, কম্পিউটারিস্ট ১ জন, গার্ডেনার ১ জন, পিয়ন ১ জন ও নাইট গার্ড ১ জন। বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপমেডিকেল অফিসার ডা. প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, এটি কোনো পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নয়। এখান থেকে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য সচেতনামূলক পরামর্শ ও কার্যক্রম, টিকাদান কর্মসূচি ও রেফারেল সার্ভিস দেওয়া হবে।

বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সারফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতুর জন্য যাদের জায়গা নিয়েছি, তাদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রে জায়গার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ওখানে রাস্তা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিয়েছি। এসব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বসবাসকারীদের। আমরা তাদের সব করে দেব, এমনটা সঠিক নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

জুলাই অভ্যুত্থান: নিজেদের মামলা তদন্তে ‘বেশি সতর্ক’ পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত