মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
যাঁর কথা বলছিলাম, তিনি প্রায় ২৫ কোটি পাকিস্তানির কাছে পরিচিত এক নাম—আবদুল কাদির খান। পাকিস্তানিদের কাছে তিনি এক কিংবদন্তি, জাতীয় বীর। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক হিসেবে পরিচিত তিনি। ১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া এই পরমাণুবিজ্ঞানী ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে তিনিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
আবদুল কাদির খান অতি গোপনে ও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এই তিন দেশের মধ্যে উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষিত সামরিক মর্যাদার সেই প্রতীক, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হয়।
ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি। পাকিস্তান যাতে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে না পারে, তা ঠেকাতে ইসরায়েল নানাভাবে আবদুল কাদির খানকে হত্যাচেষ্টা ও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার এই পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ায়।
পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের দেখানো পথ অনুসরণ করে। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘স্মাইলিং বুদ্ধ।’ এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন, তাঁর দেশও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে।
ভুট্টো বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস খাব, পাতা খাব, না খেয়ে থাকব, তবুও নিজেদের পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্বে রয়েছে খ্রিষ্টান বোমা, ইহুদি বোমা, হিন্দু বোমা। তাহলে ইসলামি বোমা কেন থাকবে না?’
ব্রিটিশ শাসিত উপমহাদেশে জন্ম নেওয়া আবদুল কাদির খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন। পরে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি আমস্টারডামে ইউরেনকো নামে একটি বড় পরমাণু জ্বালানি সংস্থায় চাকরি পান।
এই কোম্পানি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ করত। খান ওই প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গোপনীয় এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পান এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির নকশাও হাতে পান, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে অস্ত্র তৈরির জন্য উপযোগী করে তোলে।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি হঠাৎ নেদারল্যান্ডস ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। বলেন, তিনি এমন এক প্রস্তাব পেয়েছেন, যেটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পরে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের নকশা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
সে বছরের জুলাইয়ে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন, যা পাকিস্তানের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করত। প্রথম দিকে পুরো প্রকল্পটি অত্যন্ত গোপনে চলছিল। ভুয়া কোম্পানির নামে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হতো, বাইরে প্রচার করা হতো এগুলো টেক্সটাইল কারখানার জন্য।
প্রমাণ আছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই প্রকল্পে আবদুল কাদির খানকে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল। তবে তখনকার বেসামরিক সরকারগুলো এসবের কিছুই জানত না। ব্যতিক্রম শুধু প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এমনকি তাঁর কন্যা, পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টোও বিষয়টি জানতেন না। ১৯৮৯ সালে তেহরানে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি যখন তাঁকে ‘বিশেষ প্রতিরক্ষাবিষয়ক’ চুক্তি নবায়নের কথা বলেন, বেনজির ভুট্টো তখন হতবাক হয়ে জানতে চান, তিনি কী বলতে চাচ্ছেন। রাফসানজানি স্পষ্ট করে বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তি, ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, পারমাণবিক প্রযুক্তি।’ বেনজির ভুট্টো হতভম্ব হয়ে যান।
১৯৭৯ সালের জুনে ‘এইট ডেজ’ নামের একটি ম্যাগাজিন পাকিস্তানের এই গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির খবর প্রকাশ করে। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইসরায়েল ডাচ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে এক ডাচ আদালত খানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও পরে কারিগরি কারণে সেই রায় বাতিল হয়ে যায়। তবে প্রকল্প থেমে থাকেনি।
১৯৮৬ সালের মধ্যে খান নিশ্চিত হন, পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের পেছনে আদর্শিক চিন্তাধারাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকান আর ব্রিটিশদের এত সাধু সাজার অধিকার কে দিয়েছে? এরা কি পৃথিবীর স্বঘোষিত অভিভাবক?’
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই প্রকল্প থামাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। ইউরোপের যেসব কোম্পানি খানের সঙ্গে ব্যবসা করছিল, তাদের নির্বাহীদের টার্গেট করা হয়। জার্মানিতে এক নির্বাহীর বাড়িতে বোমা পাঠানো হয়। যদিও তিনি বেঁচে যান, কিন্তু তাঁর কুকুরটি মারা যায়।
আরেকটি বোমা হামলা হয় সুইজারল্যান্ডের কোর-আ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর। এই কোম্পানি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে যুক্ত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, মোসাদ বারবার হুমকি দিয়েছে, হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর হওয়া ঠেকাতে পারেনি।
সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী সিগফ্রিড শার্টলার জানিয়েছেন, মোসাদের এজেন্টরা তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের ফোন করে হুমকি দিত। এমনকি জার্মানিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, এই পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানের সাবেক পারমাণবিক কর্মকর্তা ফিরোজ খান জানিয়েছেন, ইসরায়েল কোনো মুসলিম দেশের হাতে পারমাণবিক বোমা দেখতে চায়নি।
১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কাছে কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুমোদনও দেন। ইসরায়েলি এফ-১৬ ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে ওই হামলা চালানোর কথা ছিল। কিন্তু পরে ইন্দিরা গান্ধী সিদ্ধান্ত বদলে পরিকল্পনা বাতিল করেন।
ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৭ সালে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল সুন্দরজি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করেন, যাতে ওই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো যায়। ৫ লাখ ভারতীয় সেনা, শত শত ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনও গোপনে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে। চীন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, ট্রিটিয়াম ও বিজ্ঞানী পাঠায়। আর যুক্তরাষ্ট্র তখন শীতল যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানকে পাশে পেতে চায়। ১৯৭৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করলেও কয়েক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেয় এবং পুরো কর্মসূচির দিকে চোখ বন্ধ রাখে।
কিন্তু শীতল যুদ্ধ শেষ হতেই চিত্র বদলে যায়। ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তান জানায়, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ থামাবে। কিন্তু কাদির খান পরে জানান, প্রকৃতপক্ষে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ গোপনে চলতেই থাকে।
১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। একই মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের ওপরই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাকিস্তান হয়ে ওঠে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। কাদির খান তখন জাতীয় নায়ক। তাঁর গাড়িবহর ছিল প্রধানমন্ত্রীর মতোই, নিরাপত্তা দিত সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা। তাঁর নামে রাস্তা, স্কুল এমনকি ক্রিকেট দলও গড়া হয়।
টেলিভিশনে এসে কাদির খান ঘোষণা দেন, ‘পারমাণবিক বোমা কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি। ক্ষেপণাস্ত্র কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি।’ কিন্তু এর বাইরেও তিনি আরেকটি দুঃসাহসী কাজ করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়াকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন সরবরাহ করা হতো। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রপাতি আনাতেন। অতিরিক্ত অংশগুলো তিনি অন্য দেশে বিক্রি করতেন।
ইরানের বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি পারমাণবিক বোমাকে ইসলামে নিষিদ্ধ মনে করলেও দেশটির সরকার পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হকের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ইরানকে পরমাণু বোমা তৈরির কিছু যন্ত্রপাতি দেয়, যদিও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাদির খান পাকিস্তানের জন্য রেখে দেন।
মোসাদ কাদির খানের ওপর নজরদারি করলেও তিনি আসলে কী করছেন, তা তারা বুঝতে পারেনি। পরে মোসাদের প্রধান শাভিত বলেন, যদি তিনি আগে বুঝতেন, তাহলে ‘ইতিহাস বদলাতে খানকে হত্যা করার কথা ভাবতেন।’
এরপর, ২০০৩ সালে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি মার্কিন সমর্থন পাওয়ার জন্য পুরো নেটওয়ার্ক ফাঁস করে দেন। তিনি জানান, কাদির খান লিবিয়ার জন্যও পরমাণু স্থাপনা বানাচ্ছিলেন। আর এই কাজ চলছিল কিছু স্থাপনা ছাগলের খামার বা মুরগির খামারের ছদ্মবেশে। মিসরের সুয়েজ খাল দিয়ে পাঠানোর সময় যুক্তরাষ্ট্র সেসব যন্ত্রপাতি জব্দ করে। ইসলামাবাদের একটি ড্রাই ক্লিনারের ব্যাগে অস্ত্রের নকশাও পাওয়া যায়।
পরে ২০০৪ সালে কাদির খান স্বীকার করেন, তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এককভাবে তিনি কাজ করেছেন, পাকিস্তান সরকার জড়িত নয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাঁকে ‘আমার বীর’ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে মার্কিন চাপের মুখে খানকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়, যা ২০০৯ পর্যন্ত চলে।
গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির পর কাদির খান বলেন, তিনি প্রথমবার পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি দিয়ে বাঁচিয়েছেন, দ্বিতীয়বার পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দেশকে রক্ষা করেছেন। ২০০৬ সালে তাঁর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, অস্ত্রোপচারে তিনি সুস্থ হন। প্রচুর ধনী হয়ে ওঠা কাদির খান জীবনের শেষদিকে ইসলামাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টার বানান। তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাষায়, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন—যা করেছেন, তা সঠিক ছিল। তিনি পশ্চিমাদের চোখ রাঙিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।
এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘তিনি বলতেন, মুসলিম দেশকে প্রযুক্তি দেওয়া কোনো অপরাধ নয়।’ ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁকে ‘জাতীয় প্রতীক’ বলে অভিহিত করেন। এখনো অধিকাংশ পাকিস্তানির কাছে তিনি সেভাবেই স্মরণীয়। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশবাসী নিশ্চিত থাকতে পারে, পাকিস্তান একটি নিরাপদ পারমাণবিক শক্তি। কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।’

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
যাঁর কথা বলছিলাম, তিনি প্রায় ২৫ কোটি পাকিস্তানির কাছে পরিচিত এক নাম—আবদুল কাদির খান। পাকিস্তানিদের কাছে তিনি এক কিংবদন্তি, জাতীয় বীর। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক হিসেবে পরিচিত তিনি। ১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া এই পরমাণুবিজ্ঞানী ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে তিনিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
আবদুল কাদির খান অতি গোপনে ও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এই তিন দেশের মধ্যে উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষিত সামরিক মর্যাদার সেই প্রতীক, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হয়।
ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি। পাকিস্তান যাতে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে না পারে, তা ঠেকাতে ইসরায়েল নানাভাবে আবদুল কাদির খানকে হত্যাচেষ্টা ও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার এই পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ায়।
পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের দেখানো পথ অনুসরণ করে। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘স্মাইলিং বুদ্ধ।’ এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন, তাঁর দেশও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে।
ভুট্টো বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস খাব, পাতা খাব, না খেয়ে থাকব, তবুও নিজেদের পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্বে রয়েছে খ্রিষ্টান বোমা, ইহুদি বোমা, হিন্দু বোমা। তাহলে ইসলামি বোমা কেন থাকবে না?’
ব্রিটিশ শাসিত উপমহাদেশে জন্ম নেওয়া আবদুল কাদির খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন। পরে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি আমস্টারডামে ইউরেনকো নামে একটি বড় পরমাণু জ্বালানি সংস্থায় চাকরি পান।
এই কোম্পানি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ করত। খান ওই প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গোপনীয় এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পান এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির নকশাও হাতে পান, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে অস্ত্র তৈরির জন্য উপযোগী করে তোলে।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি হঠাৎ নেদারল্যান্ডস ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। বলেন, তিনি এমন এক প্রস্তাব পেয়েছেন, যেটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পরে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের নকশা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
সে বছরের জুলাইয়ে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন, যা পাকিস্তানের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করত। প্রথম দিকে পুরো প্রকল্পটি অত্যন্ত গোপনে চলছিল। ভুয়া কোম্পানির নামে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হতো, বাইরে প্রচার করা হতো এগুলো টেক্সটাইল কারখানার জন্য।
প্রমাণ আছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই প্রকল্পে আবদুল কাদির খানকে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল। তবে তখনকার বেসামরিক সরকারগুলো এসবের কিছুই জানত না। ব্যতিক্রম শুধু প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এমনকি তাঁর কন্যা, পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টোও বিষয়টি জানতেন না। ১৯৮৯ সালে তেহরানে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি যখন তাঁকে ‘বিশেষ প্রতিরক্ষাবিষয়ক’ চুক্তি নবায়নের কথা বলেন, বেনজির ভুট্টো তখন হতবাক হয়ে জানতে চান, তিনি কী বলতে চাচ্ছেন। রাফসানজানি স্পষ্ট করে বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তি, ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, পারমাণবিক প্রযুক্তি।’ বেনজির ভুট্টো হতভম্ব হয়ে যান।
১৯৭৯ সালের জুনে ‘এইট ডেজ’ নামের একটি ম্যাগাজিন পাকিস্তানের এই গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির খবর প্রকাশ করে। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইসরায়েল ডাচ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে এক ডাচ আদালত খানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও পরে কারিগরি কারণে সেই রায় বাতিল হয়ে যায়। তবে প্রকল্প থেমে থাকেনি।
১৯৮৬ সালের মধ্যে খান নিশ্চিত হন, পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের পেছনে আদর্শিক চিন্তাধারাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকান আর ব্রিটিশদের এত সাধু সাজার অধিকার কে দিয়েছে? এরা কি পৃথিবীর স্বঘোষিত অভিভাবক?’
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই প্রকল্প থামাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। ইউরোপের যেসব কোম্পানি খানের সঙ্গে ব্যবসা করছিল, তাদের নির্বাহীদের টার্গেট করা হয়। জার্মানিতে এক নির্বাহীর বাড়িতে বোমা পাঠানো হয়। যদিও তিনি বেঁচে যান, কিন্তু তাঁর কুকুরটি মারা যায়।
আরেকটি বোমা হামলা হয় সুইজারল্যান্ডের কোর-আ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর। এই কোম্পানি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে যুক্ত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, মোসাদ বারবার হুমকি দিয়েছে, হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর হওয়া ঠেকাতে পারেনি।
সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী সিগফ্রিড শার্টলার জানিয়েছেন, মোসাদের এজেন্টরা তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের ফোন করে হুমকি দিত। এমনকি জার্মানিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, এই পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানের সাবেক পারমাণবিক কর্মকর্তা ফিরোজ খান জানিয়েছেন, ইসরায়েল কোনো মুসলিম দেশের হাতে পারমাণবিক বোমা দেখতে চায়নি।
১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কাছে কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুমোদনও দেন। ইসরায়েলি এফ-১৬ ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে ওই হামলা চালানোর কথা ছিল। কিন্তু পরে ইন্দিরা গান্ধী সিদ্ধান্ত বদলে পরিকল্পনা বাতিল করেন।
ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৭ সালে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল সুন্দরজি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করেন, যাতে ওই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো যায়। ৫ লাখ ভারতীয় সেনা, শত শত ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনও গোপনে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে। চীন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, ট্রিটিয়াম ও বিজ্ঞানী পাঠায়। আর যুক্তরাষ্ট্র তখন শীতল যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানকে পাশে পেতে চায়। ১৯৭৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করলেও কয়েক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেয় এবং পুরো কর্মসূচির দিকে চোখ বন্ধ রাখে।
কিন্তু শীতল যুদ্ধ শেষ হতেই চিত্র বদলে যায়। ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তান জানায়, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ থামাবে। কিন্তু কাদির খান পরে জানান, প্রকৃতপক্ষে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ গোপনে চলতেই থাকে।
১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। একই মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের ওপরই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাকিস্তান হয়ে ওঠে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। কাদির খান তখন জাতীয় নায়ক। তাঁর গাড়িবহর ছিল প্রধানমন্ত্রীর মতোই, নিরাপত্তা দিত সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা। তাঁর নামে রাস্তা, স্কুল এমনকি ক্রিকেট দলও গড়া হয়।
টেলিভিশনে এসে কাদির খান ঘোষণা দেন, ‘পারমাণবিক বোমা কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি। ক্ষেপণাস্ত্র কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি।’ কিন্তু এর বাইরেও তিনি আরেকটি দুঃসাহসী কাজ করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়াকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন সরবরাহ করা হতো। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রপাতি আনাতেন। অতিরিক্ত অংশগুলো তিনি অন্য দেশে বিক্রি করতেন।
ইরানের বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি পারমাণবিক বোমাকে ইসলামে নিষিদ্ধ মনে করলেও দেশটির সরকার পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হকের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ইরানকে পরমাণু বোমা তৈরির কিছু যন্ত্রপাতি দেয়, যদিও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাদির খান পাকিস্তানের জন্য রেখে দেন।
মোসাদ কাদির খানের ওপর নজরদারি করলেও তিনি আসলে কী করছেন, তা তারা বুঝতে পারেনি। পরে মোসাদের প্রধান শাভিত বলেন, যদি তিনি আগে বুঝতেন, তাহলে ‘ইতিহাস বদলাতে খানকে হত্যা করার কথা ভাবতেন।’
এরপর, ২০০৩ সালে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি মার্কিন সমর্থন পাওয়ার জন্য পুরো নেটওয়ার্ক ফাঁস করে দেন। তিনি জানান, কাদির খান লিবিয়ার জন্যও পরমাণু স্থাপনা বানাচ্ছিলেন। আর এই কাজ চলছিল কিছু স্থাপনা ছাগলের খামার বা মুরগির খামারের ছদ্মবেশে। মিসরের সুয়েজ খাল দিয়ে পাঠানোর সময় যুক্তরাষ্ট্র সেসব যন্ত্রপাতি জব্দ করে। ইসলামাবাদের একটি ড্রাই ক্লিনারের ব্যাগে অস্ত্রের নকশাও পাওয়া যায়।
পরে ২০০৪ সালে কাদির খান স্বীকার করেন, তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এককভাবে তিনি কাজ করেছেন, পাকিস্তান সরকার জড়িত নয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাঁকে ‘আমার বীর’ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে মার্কিন চাপের মুখে খানকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়, যা ২০০৯ পর্যন্ত চলে।
গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির পর কাদির খান বলেন, তিনি প্রথমবার পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি দিয়ে বাঁচিয়েছেন, দ্বিতীয়বার পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দেশকে রক্ষা করেছেন। ২০০৬ সালে তাঁর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, অস্ত্রোপচারে তিনি সুস্থ হন। প্রচুর ধনী হয়ে ওঠা কাদির খান জীবনের শেষদিকে ইসলামাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টার বানান। তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাষায়, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন—যা করেছেন, তা সঠিক ছিল। তিনি পশ্চিমাদের চোখ রাঙিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।
এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘তিনি বলতেন, মুসলিম দেশকে প্রযুক্তি দেওয়া কোনো অপরাধ নয়।’ ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁকে ‘জাতীয় প্রতীক’ বলে অভিহিত করেন। এখনো অধিকাংশ পাকিস্তানির কাছে তিনি সেভাবেই স্মরণীয়। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশবাসী নিশ্চিত থাকতে পারে, পাকিস্তান একটি নিরাপদ পারমাণবিক শক্তি। কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।’
মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
যাঁর কথা বলছিলাম, তিনি প্রায় ২৫ কোটি পাকিস্তানির কাছে পরিচিত এক নাম—আবদুল কাদির খান। পাকিস্তানিদের কাছে তিনি এক কিংবদন্তি, জাতীয় বীর। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক হিসেবে পরিচিত তিনি। ১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া এই পরমাণুবিজ্ঞানী ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে তিনিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
আবদুল কাদির খান অতি গোপনে ও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এই তিন দেশের মধ্যে উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষিত সামরিক মর্যাদার সেই প্রতীক, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হয়।
ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি। পাকিস্তান যাতে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে না পারে, তা ঠেকাতে ইসরায়েল নানাভাবে আবদুল কাদির খানকে হত্যাচেষ্টা ও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার এই পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ায়।
পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের দেখানো পথ অনুসরণ করে। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘স্মাইলিং বুদ্ধ।’ এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন, তাঁর দেশও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে।
ভুট্টো বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস খাব, পাতা খাব, না খেয়ে থাকব, তবুও নিজেদের পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্বে রয়েছে খ্রিষ্টান বোমা, ইহুদি বোমা, হিন্দু বোমা। তাহলে ইসলামি বোমা কেন থাকবে না?’
ব্রিটিশ শাসিত উপমহাদেশে জন্ম নেওয়া আবদুল কাদির খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন। পরে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি আমস্টারডামে ইউরেনকো নামে একটি বড় পরমাণু জ্বালানি সংস্থায় চাকরি পান।
এই কোম্পানি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ করত। খান ওই প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গোপনীয় এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পান এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির নকশাও হাতে পান, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে অস্ত্র তৈরির জন্য উপযোগী করে তোলে।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি হঠাৎ নেদারল্যান্ডস ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। বলেন, তিনি এমন এক প্রস্তাব পেয়েছেন, যেটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পরে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের নকশা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
সে বছরের জুলাইয়ে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন, যা পাকিস্তানের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করত। প্রথম দিকে পুরো প্রকল্পটি অত্যন্ত গোপনে চলছিল। ভুয়া কোম্পানির নামে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হতো, বাইরে প্রচার করা হতো এগুলো টেক্সটাইল কারখানার জন্য।
প্রমাণ আছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই প্রকল্পে আবদুল কাদির খানকে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল। তবে তখনকার বেসামরিক সরকারগুলো এসবের কিছুই জানত না। ব্যতিক্রম শুধু প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এমনকি তাঁর কন্যা, পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টোও বিষয়টি জানতেন না। ১৯৮৯ সালে তেহরানে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি যখন তাঁকে ‘বিশেষ প্রতিরক্ষাবিষয়ক’ চুক্তি নবায়নের কথা বলেন, বেনজির ভুট্টো তখন হতবাক হয়ে জানতে চান, তিনি কী বলতে চাচ্ছেন। রাফসানজানি স্পষ্ট করে বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তি, ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, পারমাণবিক প্রযুক্তি।’ বেনজির ভুট্টো হতভম্ব হয়ে যান।
১৯৭৯ সালের জুনে ‘এইট ডেজ’ নামের একটি ম্যাগাজিন পাকিস্তানের এই গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির খবর প্রকাশ করে। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইসরায়েল ডাচ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে এক ডাচ আদালত খানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও পরে কারিগরি কারণে সেই রায় বাতিল হয়ে যায়। তবে প্রকল্প থেমে থাকেনি।
১৯৮৬ সালের মধ্যে খান নিশ্চিত হন, পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের পেছনে আদর্শিক চিন্তাধারাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকান আর ব্রিটিশদের এত সাধু সাজার অধিকার কে দিয়েছে? এরা কি পৃথিবীর স্বঘোষিত অভিভাবক?’
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই প্রকল্প থামাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। ইউরোপের যেসব কোম্পানি খানের সঙ্গে ব্যবসা করছিল, তাদের নির্বাহীদের টার্গেট করা হয়। জার্মানিতে এক নির্বাহীর বাড়িতে বোমা পাঠানো হয়। যদিও তিনি বেঁচে যান, কিন্তু তাঁর কুকুরটি মারা যায়।
আরেকটি বোমা হামলা হয় সুইজারল্যান্ডের কোর-আ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর। এই কোম্পানি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে যুক্ত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, মোসাদ বারবার হুমকি দিয়েছে, হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর হওয়া ঠেকাতে পারেনি।
সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী সিগফ্রিড শার্টলার জানিয়েছেন, মোসাদের এজেন্টরা তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের ফোন করে হুমকি দিত। এমনকি জার্মানিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, এই পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানের সাবেক পারমাণবিক কর্মকর্তা ফিরোজ খান জানিয়েছেন, ইসরায়েল কোনো মুসলিম দেশের হাতে পারমাণবিক বোমা দেখতে চায়নি।
১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কাছে কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুমোদনও দেন। ইসরায়েলি এফ-১৬ ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে ওই হামলা চালানোর কথা ছিল। কিন্তু পরে ইন্দিরা গান্ধী সিদ্ধান্ত বদলে পরিকল্পনা বাতিল করেন।
ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৭ সালে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল সুন্দরজি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করেন, যাতে ওই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো যায়। ৫ লাখ ভারতীয় সেনা, শত শত ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনও গোপনে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে। চীন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, ট্রিটিয়াম ও বিজ্ঞানী পাঠায়। আর যুক্তরাষ্ট্র তখন শীতল যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানকে পাশে পেতে চায়। ১৯৭৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করলেও কয়েক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেয় এবং পুরো কর্মসূচির দিকে চোখ বন্ধ রাখে।
কিন্তু শীতল যুদ্ধ শেষ হতেই চিত্র বদলে যায়। ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তান জানায়, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ থামাবে। কিন্তু কাদির খান পরে জানান, প্রকৃতপক্ষে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ গোপনে চলতেই থাকে।
১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। একই মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের ওপরই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাকিস্তান হয়ে ওঠে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। কাদির খান তখন জাতীয় নায়ক। তাঁর গাড়িবহর ছিল প্রধানমন্ত্রীর মতোই, নিরাপত্তা দিত সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা। তাঁর নামে রাস্তা, স্কুল এমনকি ক্রিকেট দলও গড়া হয়।
টেলিভিশনে এসে কাদির খান ঘোষণা দেন, ‘পারমাণবিক বোমা কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি। ক্ষেপণাস্ত্র কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি।’ কিন্তু এর বাইরেও তিনি আরেকটি দুঃসাহসী কাজ করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়াকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন সরবরাহ করা হতো। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রপাতি আনাতেন। অতিরিক্ত অংশগুলো তিনি অন্য দেশে বিক্রি করতেন।
ইরানের বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি পারমাণবিক বোমাকে ইসলামে নিষিদ্ধ মনে করলেও দেশটির সরকার পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হকের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ইরানকে পরমাণু বোমা তৈরির কিছু যন্ত্রপাতি দেয়, যদিও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাদির খান পাকিস্তানের জন্য রেখে দেন।
মোসাদ কাদির খানের ওপর নজরদারি করলেও তিনি আসলে কী করছেন, তা তারা বুঝতে পারেনি। পরে মোসাদের প্রধান শাভিত বলেন, যদি তিনি আগে বুঝতেন, তাহলে ‘ইতিহাস বদলাতে খানকে হত্যা করার কথা ভাবতেন।’
এরপর, ২০০৩ সালে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি মার্কিন সমর্থন পাওয়ার জন্য পুরো নেটওয়ার্ক ফাঁস করে দেন। তিনি জানান, কাদির খান লিবিয়ার জন্যও পরমাণু স্থাপনা বানাচ্ছিলেন। আর এই কাজ চলছিল কিছু স্থাপনা ছাগলের খামার বা মুরগির খামারের ছদ্মবেশে। মিসরের সুয়েজ খাল দিয়ে পাঠানোর সময় যুক্তরাষ্ট্র সেসব যন্ত্রপাতি জব্দ করে। ইসলামাবাদের একটি ড্রাই ক্লিনারের ব্যাগে অস্ত্রের নকশাও পাওয়া যায়।
পরে ২০০৪ সালে কাদির খান স্বীকার করেন, তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এককভাবে তিনি কাজ করেছেন, পাকিস্তান সরকার জড়িত নয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাঁকে ‘আমার বীর’ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে মার্কিন চাপের মুখে খানকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়, যা ২০০৯ পর্যন্ত চলে।
গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির পর কাদির খান বলেন, তিনি প্রথমবার পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি দিয়ে বাঁচিয়েছেন, দ্বিতীয়বার পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দেশকে রক্ষা করেছেন। ২০০৬ সালে তাঁর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, অস্ত্রোপচারে তিনি সুস্থ হন। প্রচুর ধনী হয়ে ওঠা কাদির খান জীবনের শেষদিকে ইসলামাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টার বানান। তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাষায়, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন—যা করেছেন, তা সঠিক ছিল। তিনি পশ্চিমাদের চোখ রাঙিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।
এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘তিনি বলতেন, মুসলিম দেশকে প্রযুক্তি দেওয়া কোনো অপরাধ নয়।’ ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁকে ‘জাতীয় প্রতীক’ বলে অভিহিত করেন। এখনো অধিকাংশ পাকিস্তানির কাছে তিনি সেভাবেই স্মরণীয়। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশবাসী নিশ্চিত থাকতে পারে, পাকিস্তান একটি নিরাপদ পারমাণবিক শক্তি। কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।’

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
যাঁর কথা বলছিলাম, তিনি প্রায় ২৫ কোটি পাকিস্তানির কাছে পরিচিত এক নাম—আবদুল কাদির খান। পাকিস্তানিদের কাছে তিনি এক কিংবদন্তি, জাতীয় বীর। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক হিসেবে পরিচিত তিনি। ১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া এই পরমাণুবিজ্ঞানী ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে তিনিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
আবদুল কাদির খান অতি গোপনে ও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এই তিন দেশের মধ্যে উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষিত সামরিক মর্যাদার সেই প্রতীক, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হয়।
ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি। পাকিস্তান যাতে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে না পারে, তা ঠেকাতে ইসরায়েল নানাভাবে আবদুল কাদির খানকে হত্যাচেষ্টা ও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার এই পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ায়।
পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের দেখানো পথ অনুসরণ করে। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘স্মাইলিং বুদ্ধ।’ এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন, তাঁর দেশও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে।
ভুট্টো বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস খাব, পাতা খাব, না খেয়ে থাকব, তবুও নিজেদের পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্বে রয়েছে খ্রিষ্টান বোমা, ইহুদি বোমা, হিন্দু বোমা। তাহলে ইসলামি বোমা কেন থাকবে না?’
ব্রিটিশ শাসিত উপমহাদেশে জন্ম নেওয়া আবদুল কাদির খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন। পরে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি আমস্টারডামে ইউরেনকো নামে একটি বড় পরমাণু জ্বালানি সংস্থায় চাকরি পান।
এই কোম্পানি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ করত। খান ওই প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গোপনীয় এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পান এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির নকশাও হাতে পান, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে অস্ত্র তৈরির জন্য উপযোগী করে তোলে।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি হঠাৎ নেদারল্যান্ডস ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। বলেন, তিনি এমন এক প্রস্তাব পেয়েছেন, যেটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পরে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের নকশা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
সে বছরের জুলাইয়ে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন, যা পাকিস্তানের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করত। প্রথম দিকে পুরো প্রকল্পটি অত্যন্ত গোপনে চলছিল। ভুয়া কোম্পানির নামে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হতো, বাইরে প্রচার করা হতো এগুলো টেক্সটাইল কারখানার জন্য।
প্রমাণ আছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই প্রকল্পে আবদুল কাদির খানকে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল। তবে তখনকার বেসামরিক সরকারগুলো এসবের কিছুই জানত না। ব্যতিক্রম শুধু প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এমনকি তাঁর কন্যা, পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টোও বিষয়টি জানতেন না। ১৯৮৯ সালে তেহরানে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি যখন তাঁকে ‘বিশেষ প্রতিরক্ষাবিষয়ক’ চুক্তি নবায়নের কথা বলেন, বেনজির ভুট্টো তখন হতবাক হয়ে জানতে চান, তিনি কী বলতে চাচ্ছেন। রাফসানজানি স্পষ্ট করে বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তি, ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, পারমাণবিক প্রযুক্তি।’ বেনজির ভুট্টো হতভম্ব হয়ে যান।
১৯৭৯ সালের জুনে ‘এইট ডেজ’ নামের একটি ম্যাগাজিন পাকিস্তানের এই গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির খবর প্রকাশ করে। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইসরায়েল ডাচ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে এক ডাচ আদালত খানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও পরে কারিগরি কারণে সেই রায় বাতিল হয়ে যায়। তবে প্রকল্প থেমে থাকেনি।
১৯৮৬ সালের মধ্যে খান নিশ্চিত হন, পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের পেছনে আদর্শিক চিন্তাধারাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকান আর ব্রিটিশদের এত সাধু সাজার অধিকার কে দিয়েছে? এরা কি পৃথিবীর স্বঘোষিত অভিভাবক?’
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই প্রকল্প থামাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। ইউরোপের যেসব কোম্পানি খানের সঙ্গে ব্যবসা করছিল, তাদের নির্বাহীদের টার্গেট করা হয়। জার্মানিতে এক নির্বাহীর বাড়িতে বোমা পাঠানো হয়। যদিও তিনি বেঁচে যান, কিন্তু তাঁর কুকুরটি মারা যায়।
আরেকটি বোমা হামলা হয় সুইজারল্যান্ডের কোর-আ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর। এই কোম্পানি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে যুক্ত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, মোসাদ বারবার হুমকি দিয়েছে, হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর হওয়া ঠেকাতে পারেনি।
সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী সিগফ্রিড শার্টলার জানিয়েছেন, মোসাদের এজেন্টরা তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের ফোন করে হুমকি দিত। এমনকি জার্মানিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, এই পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানের সাবেক পারমাণবিক কর্মকর্তা ফিরোজ খান জানিয়েছেন, ইসরায়েল কোনো মুসলিম দেশের হাতে পারমাণবিক বোমা দেখতে চায়নি।
১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কাছে কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুমোদনও দেন। ইসরায়েলি এফ-১৬ ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে ওই হামলা চালানোর কথা ছিল। কিন্তু পরে ইন্দিরা গান্ধী সিদ্ধান্ত বদলে পরিকল্পনা বাতিল করেন।
ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৭ সালে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল সুন্দরজি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করেন, যাতে ওই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো যায়। ৫ লাখ ভারতীয় সেনা, শত শত ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনও গোপনে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে। চীন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, ট্রিটিয়াম ও বিজ্ঞানী পাঠায়। আর যুক্তরাষ্ট্র তখন শীতল যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানকে পাশে পেতে চায়। ১৯৭৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করলেও কয়েক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেয় এবং পুরো কর্মসূচির দিকে চোখ বন্ধ রাখে।
কিন্তু শীতল যুদ্ধ শেষ হতেই চিত্র বদলে যায়। ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তান জানায়, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ থামাবে। কিন্তু কাদির খান পরে জানান, প্রকৃতপক্ষে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ গোপনে চলতেই থাকে।
১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। একই মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের ওপরই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাকিস্তান হয়ে ওঠে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। কাদির খান তখন জাতীয় নায়ক। তাঁর গাড়িবহর ছিল প্রধানমন্ত্রীর মতোই, নিরাপত্তা দিত সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা। তাঁর নামে রাস্তা, স্কুল এমনকি ক্রিকেট দলও গড়া হয়।
টেলিভিশনে এসে কাদির খান ঘোষণা দেন, ‘পারমাণবিক বোমা কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি। ক্ষেপণাস্ত্র কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি।’ কিন্তু এর বাইরেও তিনি আরেকটি দুঃসাহসী কাজ করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়াকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন সরবরাহ করা হতো। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রপাতি আনাতেন। অতিরিক্ত অংশগুলো তিনি অন্য দেশে বিক্রি করতেন।
ইরানের বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি পারমাণবিক বোমাকে ইসলামে নিষিদ্ধ মনে করলেও দেশটির সরকার পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হকের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ইরানকে পরমাণু বোমা তৈরির কিছু যন্ত্রপাতি দেয়, যদিও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাদির খান পাকিস্তানের জন্য রেখে দেন।
মোসাদ কাদির খানের ওপর নজরদারি করলেও তিনি আসলে কী করছেন, তা তারা বুঝতে পারেনি। পরে মোসাদের প্রধান শাভিত বলেন, যদি তিনি আগে বুঝতেন, তাহলে ‘ইতিহাস বদলাতে খানকে হত্যা করার কথা ভাবতেন।’
এরপর, ২০০৩ সালে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি মার্কিন সমর্থন পাওয়ার জন্য পুরো নেটওয়ার্ক ফাঁস করে দেন। তিনি জানান, কাদির খান লিবিয়ার জন্যও পরমাণু স্থাপনা বানাচ্ছিলেন। আর এই কাজ চলছিল কিছু স্থাপনা ছাগলের খামার বা মুরগির খামারের ছদ্মবেশে। মিসরের সুয়েজ খাল দিয়ে পাঠানোর সময় যুক্তরাষ্ট্র সেসব যন্ত্রপাতি জব্দ করে। ইসলামাবাদের একটি ড্রাই ক্লিনারের ব্যাগে অস্ত্রের নকশাও পাওয়া যায়।
পরে ২০০৪ সালে কাদির খান স্বীকার করেন, তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এককভাবে তিনি কাজ করেছেন, পাকিস্তান সরকার জড়িত নয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাঁকে ‘আমার বীর’ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে মার্কিন চাপের মুখে খানকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়, যা ২০০৯ পর্যন্ত চলে।
গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির পর কাদির খান বলেন, তিনি প্রথমবার পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি দিয়ে বাঁচিয়েছেন, দ্বিতীয়বার পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দেশকে রক্ষা করেছেন। ২০০৬ সালে তাঁর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, অস্ত্রোপচারে তিনি সুস্থ হন। প্রচুর ধনী হয়ে ওঠা কাদির খান জীবনের শেষদিকে ইসলামাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টার বানান। তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাষায়, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন—যা করেছেন, তা সঠিক ছিল। তিনি পশ্চিমাদের চোখ রাঙিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।
এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘তিনি বলতেন, মুসলিম দেশকে প্রযুক্তি দেওয়া কোনো অপরাধ নয়।’ ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁকে ‘জাতীয় প্রতীক’ বলে অভিহিত করেন। এখনো অধিকাংশ পাকিস্তানির কাছে তিনি সেভাবেই স্মরণীয়। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশবাসী নিশ্চিত থাকতে পারে, পাকিস্তান একটি নিরাপদ পারমাণবিক শক্তি। কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট কমিটির কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার শাসনভার হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় সক্রিয় অন্য সংগঠনগুলোও কায়রো বৈঠকের এই সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামদানি বহু বছর ধরে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমোর মতে এটি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগ’।
৭ ঘণ্টা আগে
স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক আলজেরীয় নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি আদালত। দেশটিতে এই প্রথম কোনো নারীকে এমন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাহুল একাই দুই মেয়েকে নিয়ে রওনা দেন। পথে বুলধানা জেলার আঞ্চারওয়াড়ি এলাকার একটি জঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে দুই শিশুকে সেখানে নিয়ে যান। পরে নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করেন।
৮ ঘণ্টা আগেএএফপি, কায়রো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট কমিটির কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার শাসনভার হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় সক্রিয় অন্য সংগঠনগুলোও কায়রো বৈঠকের এই সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।
হামাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাধীন টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত অস্থায়ী এই কমিটি আরব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় কাজ করবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকায় যেন প্রশাসনিক কোনো শূন্যতা না থাকে, সে জন্য অবিলম্বে কাজ শুরু করবে তারা।
গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সামনে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সব গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন আহ্বানের প্রস্তাব এসেছে। ওই সম্মেলনে জাতীয় কৌশল নির্ধারণ এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কায়রোতে হামাস ও ফাতাহর প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ আগামী দিনগুলোতেও বৈঠক চালিয়ে যাবে এবং ইসরায়েলি চাপ মোকাবিলা করে অভ্যন্তরীণ ঐক্য জোরদারে কাজ করবে।
এই আলোচনার সমান্তরালে মিসরের গোয়েন্দাপ্রধান হাসান রাশাদ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এর মধ্যে হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ, পিএলওর অন্তর্ভুক্ত ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে হামাস ও ফাতাহ যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা যৌথভাবে পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠনে রাজি হয়েছিল। তবে ফাতাহর অনেক নেতা তখন সেই চুক্তির সমালোচনা করেন। এখন ট্রাম্প-সমর্থিত প্রস্তাব ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মুখে দীর্ঘদিন থেকে হামাস বলে আসছে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তারা আর সরাসরি উপত্যকার শাসনকাজ পরিচালনায় আগ্রহী নয়। তবে পশ্চিমাদের দাবি অনুযায়ী নিজেদের যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। তারা বলছে, একমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলেই তাদের যোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অস্ত্র সমর্পণের পর তাঁদের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা হবে।
এদিকে গাজায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে পাঁচ হাজার সদস্যের একটি বাহিনী গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরিকল্পনায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে তুরস্কের আগ্রহ থাকলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছে ইসরায়েল। তাদের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এই বহুজাতিক বাহিনীর জাতীয়তা নিয়ে ইসরায়েলের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা একটি আবশ্যকীয় শর্ত।
ইসরায়েলের অভিযোগ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ। ফলে গাজায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর বাহিনী থেকে তুরস্ককে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। অন্যদিকে এই বাহিনীতে তুরস্কের উপস্থিতি চায় হামাস।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট কমিটির কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার শাসনভার হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় সক্রিয় অন্য সংগঠনগুলোও কায়রো বৈঠকের এই সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।
হামাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাধীন টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত অস্থায়ী এই কমিটি আরব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় কাজ করবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকায় যেন প্রশাসনিক কোনো শূন্যতা না থাকে, সে জন্য অবিলম্বে কাজ শুরু করবে তারা।
গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সামনে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সব গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন আহ্বানের প্রস্তাব এসেছে। ওই সম্মেলনে জাতীয় কৌশল নির্ধারণ এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কায়রোতে হামাস ও ফাতাহর প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ আগামী দিনগুলোতেও বৈঠক চালিয়ে যাবে এবং ইসরায়েলি চাপ মোকাবিলা করে অভ্যন্তরীণ ঐক্য জোরদারে কাজ করবে।
এই আলোচনার সমান্তরালে মিসরের গোয়েন্দাপ্রধান হাসান রাশাদ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এর মধ্যে হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ, পিএলওর অন্তর্ভুক্ত ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে হামাস ও ফাতাহ যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা যৌথভাবে পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠনে রাজি হয়েছিল। তবে ফাতাহর অনেক নেতা তখন সেই চুক্তির সমালোচনা করেন। এখন ট্রাম্প-সমর্থিত প্রস্তাব ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মুখে দীর্ঘদিন থেকে হামাস বলে আসছে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তারা আর সরাসরি উপত্যকার শাসনকাজ পরিচালনায় আগ্রহী নয়। তবে পশ্চিমাদের দাবি অনুযায়ী নিজেদের যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। তারা বলছে, একমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলেই তাদের যোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অস্ত্র সমর্পণের পর তাঁদের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা হবে।
এদিকে গাজায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে পাঁচ হাজার সদস্যের একটি বাহিনী গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরিকল্পনায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে তুরস্কের আগ্রহ থাকলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছে ইসরায়েল। তাদের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এই বহুজাতিক বাহিনীর জাতীয়তা নিয়ে ইসরায়েলের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা একটি আবশ্যকীয় শর্ত।
ইসরায়েলের অভিযোগ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ। ফলে গাজায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর বাহিনী থেকে তুরস্ককে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। অন্যদিকে এই বাহিনীতে তুরস্কের উপস্থিতি চায় হামাস।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
২৬ জুন ২০২৫
নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামদানি বহু বছর ধরে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমোর মতে এটি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগ’।
৭ ঘণ্টা আগে
স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক আলজেরীয় নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি আদালত। দেশটিতে এই প্রথম কোনো নারীকে এমন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাহুল একাই দুই মেয়েকে নিয়ে রওনা দেন। পথে বুলধানা জেলার আঞ্চারওয়াড়ি এলাকার একটি জঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে দুই শিশুকে সেখানে নিয়ে যান। পরে নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করেন।
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামদানি বহু বছর ধরে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমোর মতে এটি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগ’।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে কুমো বলেন, ‘জোহরান মামদানি পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার জন্য প্রস্তাবিত আইনের উদ্যোক্তা। এই আইন পাস হলে সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ আরও শোষণের শিকার হবেন এবং মানব পাচারকারীরা, গ্যাং সদস্যরা ও সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র আরও শক্তিশালী হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গভর্নর হিসেবে আমি এই বিলের বিরুদ্ধে বহু বছর লড়াই করেছি।’
কুমো অভিযোগ করেন, নিউইয়র্ক সিটি এরই মধ্যে কুইন্সে ‘মার্কেট অব সুইটহার্টস’-এর মতো এলাকাগুলোতে পতিতাবৃত্তি, অপরাধ ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। এই আইন পাস হলে শহরের প্রতিটি কোণে আবারও পতিতাবৃত্তি শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘এটি জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে মামদানির অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় এটি আশ্চর্যের কিছু নয়। তিনি এনওয়াইপিডির অর্থায়ন কমানোর পক্ষে ছিলেন, এমনকি পুলিশ যেন গার্হস্থ্য পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সেটিরও পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি পুলিশকে বর্ণবাদী, সমকামবিরোধী এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।’
কুমো বলেন, ‘মামদানি যে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য, এই সংগঠনও একই নীতির সমর্থক।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমার কথা মনে রাখুন, বাস্তব জগতে এই আইন পাস হলে বিপদের দরজা খুলে যাবে। মামদানি হয়তো নিউইয়র্ক সিটির পুরোনো অন্ধকার সময়টা মনে রাখেন না, যখন টাইমস স্কয়ার ছিল অপরাধপ্রবণ, পতিতাবৃত্তির কেন্দ্র এবং মানুষ জানত, কোন এলাকাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা সেই সময়ের ভয়াবহতা জানি এবং কেউই সেই যুগে ফিরে যেতে চায় না।’
কুমো বলেন, ‘আমাদের আরও বেশি করে সাহায্য করতে হবে সেই মানুষদের, যাঁরা জোরপূর্বক বা শোষণের শিকার হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত হয়েছেন। নিউইয়র্ককে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে—তাদের জন্য পথ সহজ করা নয়।’

নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামদানি বহু বছর ধরে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমোর মতে এটি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগ’।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে কুমো বলেন, ‘জোহরান মামদানি পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার জন্য প্রস্তাবিত আইনের উদ্যোক্তা। এই আইন পাস হলে সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ আরও শোষণের শিকার হবেন এবং মানব পাচারকারীরা, গ্যাং সদস্যরা ও সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র আরও শক্তিশালী হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গভর্নর হিসেবে আমি এই বিলের বিরুদ্ধে বহু বছর লড়াই করেছি।’
কুমো অভিযোগ করেন, নিউইয়র্ক সিটি এরই মধ্যে কুইন্সে ‘মার্কেট অব সুইটহার্টস’-এর মতো এলাকাগুলোতে পতিতাবৃত্তি, অপরাধ ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। এই আইন পাস হলে শহরের প্রতিটি কোণে আবারও পতিতাবৃত্তি শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘এটি জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে মামদানির অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় এটি আশ্চর্যের কিছু নয়। তিনি এনওয়াইপিডির অর্থায়ন কমানোর পক্ষে ছিলেন, এমনকি পুলিশ যেন গার্হস্থ্য পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সেটিরও পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি পুলিশকে বর্ণবাদী, সমকামবিরোধী এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।’
কুমো বলেন, ‘মামদানি যে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য, এই সংগঠনও একই নীতির সমর্থক।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমার কথা মনে রাখুন, বাস্তব জগতে এই আইন পাস হলে বিপদের দরজা খুলে যাবে। মামদানি হয়তো নিউইয়র্ক সিটির পুরোনো অন্ধকার সময়টা মনে রাখেন না, যখন টাইমস স্কয়ার ছিল অপরাধপ্রবণ, পতিতাবৃত্তির কেন্দ্র এবং মানুষ জানত, কোন এলাকাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা সেই সময়ের ভয়াবহতা জানি এবং কেউই সেই যুগে ফিরে যেতে চায় না।’
কুমো বলেন, ‘আমাদের আরও বেশি করে সাহায্য করতে হবে সেই মানুষদের, যাঁরা জোরপূর্বক বা শোষণের শিকার হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত হয়েছেন। নিউইয়র্ককে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে—তাদের জন্য পথ সহজ করা নয়।’

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
২৬ জুন ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট কমিটির কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার শাসনভার হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় সক্রিয় অন্য সংগঠনগুলোও কায়রো বৈঠকের এই সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক আলজেরীয় নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি আদালত। দেশটিতে এই প্রথম কোনো নারীকে এমন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাহুল একাই দুই মেয়েকে নিয়ে রওনা দেন। পথে বুলধানা জেলার আঞ্চারওয়াড়ি এলাকার একটি জঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে দুই শিশুকে সেখানে নিয়ে যান। পরে নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করেন।
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক আলজেরীয় নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি আদালত। দেশটিতে এই প্রথম কোনো নারীকে এমন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) আদালত অভিযুক্ত দাহবিয়া বেঙ্কিরেদকে (২৭) দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন। মামলার নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২২ সালে ১২ বছর বয়সী লোলা দাভিয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করেছিলেন দাহবিয়া বেঙ্কিরেদ। এই ঘটনা সে সময় পুরো ফ্রান্সকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং বেঙ্কিরেদের অবৈধ অভিবাসী পরিচয় ঘিরে দেশটিতে তীব্র অভিবাসনবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
দাহবিয়া বেঙ্কিরেদকে গ্রেপ্তার করা হয় লোলা নিখোঁজ হওয়ার পর। এরপর শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায় প্যারিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের লবিতে রাখা ট্রাঙ্কে। ওই ভবনেই কেয়ারটেকারের কাজ করতেন লোলার বাবা-মা।
রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারক বলেন, ‘অপরাধটি ছিল অতি নিষ্ঠুর ও নৃশংস। এটি প্রকৃত অর্থে একধরনের নির্যাতন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন ভয়াবহ ও অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার যে মানসিক আঘাত পেয়েছে, আদালত তা বিবেচনায় নিয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রায় ঘোষণার আগে যুক্তি দেন, বেঙ্কিরেদের অপরাধের ‘চরম ভয়াবহতা’ ও ‘অমানবিক নিষ্ঠুরতা’ বিবেচনায় তার জন্য ‘যাবজ্জীবন’ শাস্তিই প্রাপ্য।
প্রসঙ্গত, ফরাসি দণ্ডবিধির অধীনে যাবজ্জীবন দেশটিতে সর্বোচ্চ সাজা এবং এতে কোনো শর্তে মুক্তি বা শাস্তি কমানোর সুযোগ থাকে না।
তদন্তে জানা গেছে, বেঙ্কিরেদ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর লোলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
বিচার চলাকালে বেঙ্কিরেদ আদালতে নিজের অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যা করেছি, তা ভয়াবহ।’ তবে তিনজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর মধ্যে ‘মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিপজ্জনক বা সাইকোপ্যাথিক প্রবণতা’ রয়েছে এবং তাঁর মানসিক অবস্থাকে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
ঘটনার পর ফ্রান্সের রক্ষণশীল ও অতি ডানপন্থী রাজনীতিকেরা কড়া অভিবাসন আইনের দাবি তুলেছেন। কারণ বেঙ্কিরেদ স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ফ্রান্সে অবস্থান করছিলেন এবং দেশ ছাড়ার নির্দেশনা মানেননি। তবে নিহত লোলার মা রাজনীতিবিদদের অনুরোধ করেছেন, যেন তাঁরা তাঁর মেয়ের মৃত্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করেন।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এর আগে এমন সাজা পেয়েছিলেন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার মিশেল ফুরনিরে এবং ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার অন্যতম অভিযুক্ত সালাহ আবদেসলেম। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩০ জন।

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক আলজেরীয় নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি আদালত। দেশটিতে এই প্রথম কোনো নারীকে এমন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) আদালত অভিযুক্ত দাহবিয়া বেঙ্কিরেদকে (২৭) দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন। মামলার নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২২ সালে ১২ বছর বয়সী লোলা দাভিয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করেছিলেন দাহবিয়া বেঙ্কিরেদ। এই ঘটনা সে সময় পুরো ফ্রান্সকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং বেঙ্কিরেদের অবৈধ অভিবাসী পরিচয় ঘিরে দেশটিতে তীব্র অভিবাসনবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
দাহবিয়া বেঙ্কিরেদকে গ্রেপ্তার করা হয় লোলা নিখোঁজ হওয়ার পর। এরপর শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায় প্যারিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের লবিতে রাখা ট্রাঙ্কে। ওই ভবনেই কেয়ারটেকারের কাজ করতেন লোলার বাবা-মা।
রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারক বলেন, ‘অপরাধটি ছিল অতি নিষ্ঠুর ও নৃশংস। এটি প্রকৃত অর্থে একধরনের নির্যাতন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন ভয়াবহ ও অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার যে মানসিক আঘাত পেয়েছে, আদালত তা বিবেচনায় নিয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রায় ঘোষণার আগে যুক্তি দেন, বেঙ্কিরেদের অপরাধের ‘চরম ভয়াবহতা’ ও ‘অমানবিক নিষ্ঠুরতা’ বিবেচনায় তার জন্য ‘যাবজ্জীবন’ শাস্তিই প্রাপ্য।
প্রসঙ্গত, ফরাসি দণ্ডবিধির অধীনে যাবজ্জীবন দেশটিতে সর্বোচ্চ সাজা এবং এতে কোনো শর্তে মুক্তি বা শাস্তি কমানোর সুযোগ থাকে না।
তদন্তে জানা গেছে, বেঙ্কিরেদ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর লোলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
বিচার চলাকালে বেঙ্কিরেদ আদালতে নিজের অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যা করেছি, তা ভয়াবহ।’ তবে তিনজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর মধ্যে ‘মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিপজ্জনক বা সাইকোপ্যাথিক প্রবণতা’ রয়েছে এবং তাঁর মানসিক অবস্থাকে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
ঘটনার পর ফ্রান্সের রক্ষণশীল ও অতি ডানপন্থী রাজনীতিকেরা কড়া অভিবাসন আইনের দাবি তুলেছেন। কারণ বেঙ্কিরেদ স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ফ্রান্সে অবস্থান করছিলেন এবং দেশ ছাড়ার নির্দেশনা মানেননি। তবে নিহত লোলার মা রাজনীতিবিদদের অনুরোধ করেছেন, যেন তাঁরা তাঁর মেয়ের মৃত্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করেন।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এর আগে এমন সাজা পেয়েছিলেন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার মিশেল ফুরনিরে এবং ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার অন্যতম অভিযুক্ত সালাহ আবদেসলেম। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩০ জন।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
২৬ জুন ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট কমিটির কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার শাসনভার হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় সক্রিয় অন্য সংগঠনগুলোও কায়রো বৈঠকের এই সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামদানি বহু বছর ধরে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমোর মতে এটি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগ’।
৭ ঘণ্টা আগে
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাহুল একাই দুই মেয়েকে নিয়ে রওনা দেন। পথে বুলধানা জেলার আঞ্চারওয়াড়ি এলাকার একটি জঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে দুই শিশুকে সেখানে নিয়ে যান। পরে নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করেন।
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মহারাষ্ট্রে ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছেন এক ব্যক্তি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে দুই বছরের যমজ কন্যাসন্তানের গলা কেটে হত্যা করেছেন ওয়াসিম জেলার এক বাসিন্দা। পরে নিজেই থানায় গিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন ওই ব্যক্তি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম রাহুল চাভান। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছিলেন চাভান। পথে স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল বাগ্বিতণ্ডা হয় তাঁর। ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাহুল একাই দুই মেয়েকে নিয়ে রওনা দেন। পথে বুলধানা জেলার আঞ্চারওয়াড়ি এলাকার একটি জঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে দুই শিশুকে সেখানে নিয়ে যান। পরে নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করেন।
ঘটনার পর রাহুল সরাসরি ওয়াসিম থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুদের মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হত্যার পর রাহুল প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে মরদেহে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছিলেন। আংশিকভাবে দগ্ধ অবস্থায় দুই শিশুর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে বুলধানা জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দগ্ধ হওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি ফরেনসিক পরীক্ষা ও ময়নাতদন্তের পর স্পষ্ট হবে।
ওয়াসিম জেলার ডিএসপি মনীষা কদম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলের নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।

মহারাষ্ট্রে ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছেন এক ব্যক্তি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে দুই বছরের যমজ কন্যাসন্তানের গলা কেটে হত্যা করেছেন ওয়াসিম জেলার এক বাসিন্দা। পরে নিজেই থানায় গিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন ওই ব্যক্তি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম রাহুল চাভান। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছিলেন চাভান। পথে স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল বাগ্বিতণ্ডা হয় তাঁর। ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাহুল একাই দুই মেয়েকে নিয়ে রওনা দেন। পথে বুলধানা জেলার আঞ্চারওয়াড়ি এলাকার একটি জঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে দুই শিশুকে সেখানে নিয়ে যান। পরে নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করেন।
ঘটনার পর রাহুল সরাসরি ওয়াসিম থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুদের মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হত্যার পর রাহুল প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে মরদেহে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছিলেন। আংশিকভাবে দগ্ধ অবস্থায় দুই শিশুর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে বুলধানা জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দগ্ধ হওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি ফরেনসিক পরীক্ষা ও ময়নাতদন্তের পর স্পষ্ট হবে।
ওয়াসিম জেলার ডিএসপি মনীষা কদম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলের নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।
২৬ জুন ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট কমিটির কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার শাসনভার হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় সক্রিয় অন্য সংগঠনগুলোও কায়রো বৈঠকের এই সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামদানি বহু বছর ধরে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমোর মতে এটি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগ’।
৭ ঘণ্টা আগে
স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক আলজেরীয় নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি আদালত। দেশটিতে এই প্রথম কোনো নারীকে এমন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।
৭ ঘণ্টা আগে