Ajker Patrika

মিয়ানমারে আত্মরক্ষার নামে গণহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৫
মিয়ানমারে আত্মরক্ষার নামে গণহত্যা

চলতি বছরের জুলাই মাসে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকদের ওপর ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। যেখানে নৃশংস নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে অন্তত ৪০ জনকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানে উদ্‌ঘাটিত হয়েছে ভয়ংকর এই গণহত্যার ঘটনা।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি বলছে, সেনাসদস্যরা গ্রামের বাসিন্দাদের প্রথমে এক জায়গায় জড়ো করেন। এরপর সেখান থেকে পুরুষদের আলাদা করে তাঁদের হত্যা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, হত্যা করার আগে বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিকের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরপর মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তাঁদের লাশ পুঁতে ফেলা হয়। বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং জেলার কানি শহরাঞ্চলের কাছে চারটি আলাদা ঘটনায় গত জুলাইয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দমন-পীড়ন শুরু করে জান্তা সরকার। পাশাপাশি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়।

১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ও ছবির সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখেছে বিবিসি। মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অনুসন্ধান করা একটি এনজিও এসব ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করেছে।

বিবিসি বলছে, সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল ইয়িন গ্রামে, যেখানে কমপক্ষে ১৪ জন পুরুষকে নির্যাতন বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল এবং পরে তাঁদের মৃতদেহ একটি জঙ্গলে ফেলে দেন সেনাসদস্যরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হত্যা করার আগে ওই ব্যক্তিদের দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়েছিল। গ্রামটির এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা তাদের এটি (হত্যা) না করার জন্য অনুরোধ করলেও তারা পাত্তা দেয়নি।’ নারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এর মধ্যে (নিহতদের) কি তোমাদের স্বামী আছে? যদি থাকে তাহলে শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নাও।’

নিরাপত্তার স্বার্থে এসব তথ্য জানানো প্রত্যক্ষদর্শীদের পরিচয় গোপন রেখেছে বিবিসি। সেনাদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি জানান, হত্যা করার আগে আটক করা পুরুষদের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভয়ংকর নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘বেঁধে রেখে তাঁদের ওপর সারা দিন পাথর ছোড়া হয়েছিল এবং রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারধর করা হয়। কিছু সেনাকে যুবক মনে হয়েছে। তাদের বয়স হয়তো ১৭ বা ১৮ বছর। তবে বয়স্কও কয়েকজন ছিল। তাদের সঙ্গে একজন নারীও ছিলেন।’

এদিকে ইয়িন গ্রামের পার্শ্ববর্তী জি বিন ডুইন গ্রামে জুলাইয়ের শেষদিকে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়, যেখান থেকে ১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এক শিশু এবং এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মৃতদেহও ছিল। নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের লাশ বিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

বিবিসি বলছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বেসামরিক মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীর ওপর যে হামলা চালিয়ে আসছে, তার সম্মিলিত শাস্তি হিসেবেই মিয়ানমার সেনারা গ্রামে গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিজেদের প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগগুলো মিয়ানমারের তথ্য উপমন্ত্রী এবং সামরিক মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুনের কাছে উত্থাপন করেছে বিবিসি। সেনাদের গণহত্যা চালানোর বিষয়টি অস্বীকার না করলেও তিনি বলেছেন, ‘এটা (গণহত্যা) হতে পারে। যখন তারা আমাদের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করে, আমাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত