Ajker Patrika

বাঁশ-বেতের সামগ্রীর দুর্দিন

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার সুনামগঞ্জ
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৫৫
বাঁশ-বেতের সামগ্রীর দুর্দিন

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার শরীফপুর সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে বাঁশ–বেতের তৈরি জিনিস নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর–কষাকষি করছেন এক বিক্রেতা। তাঁর সামনে সাজানো বাঁশ-বেতের হাইঙ্গা, টুকরি, খাঁচা, পাতি, কোলা, পাতলা, চাটাই। তবে ক্রেতা না থাকায় বিক্রি তেমন নেই। ফলে উপার্জন কমেছে। সংসার চালাতে খাচ্ছেন হিমশিম। আয় কমে আসায় অনেকেই বদল করেছেন পেশা।

বাঁশ বেতের তৈরি জিনিস পত্রের বিক্রেতা অঞ্জলি দেবনাথ বলেন, ‘বাড়িতে হাইঙ্গা, টুকরি, খাঁচা তৈরি করি। পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করি। কিন্তু বর্তমানে এ সব জিনিস পত্রের বাজার তেমন ভালো যাচ্ছে না। ক্রেতার আনাগোনা তেমন নেই, মাঝেমধ্যে দু-একজন আসেন, দেখেন। কিন্তু কেনেন হাতে গোনা কয়েকজন। অনেকে দাম হাঁকিয়ে না কিনেই চলে যাচ্ছেন।’

কামারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী অঞ্জলি দেবনাথ। স্বামী থেকেও নেই, স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না, ভরণপোষণও দেন না। তাই দুই মেয়ে নিয়ে অঞ্জলি দেবনাথ থাকেন বাবার বাড়ি। বাঁশ বেত দিয়ে তৈরি এই সামগ্রী বিক্রি করে সন্তানদের পড়াশোনা খরচসহ সংসার চালাতে হয় তাঁর। কিন্তু ক্রেতা সংকটের কারণে আগের মতো বেচা বিক্রি না হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অঞ্জলি দেবনাথের।

ক্রেতা সংকট থাকায় তাঁর মতো আরও অনেকেই বাঁশবেতের তৈরি সামগ্রী নিয়ে ক্রেতার আশায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।

উপজেলার রাজনপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহির আলী বলেন, পাঁচ বছর ধরে এই পেশায় আছি। গ্রাম থেকে পাইকারি দামে এসব জিনিস কিনে বিভিন্ন হাটে খুচরা বিক্রি করি। করোনা ও বন্যার কারণে এখন বাজারে তেমন ক্রেতা নেই।’ লকডাউনের সময় বেচাকেনা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সারা দিন বসে থেকে অর্ধেক মালও বিক্রি করা যাচ্ছে না।’

বিক্রেতারা জানান, বাজারের একেকটি হাইঙ্গা সর্বোচ্চ ১২০ টাকা, পাতি ৬০ টাকা, খাঁচা ৮০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। আগে গড়ে দৈনিক ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত মালামাল বিক্রি হতো। এখন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার বেশি বিক্রি করা হচ্ছে না।

নৈনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মনির উদ্দিন বলেন, ‘চাটাই নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। কোনো ক্রেতা পাচ্ছি না। বিক্রি না করতে পারলে সংসারে জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনা দায় হয়ে যাবে। এ ভাবে চললে ধার দেনা করতে হবে।’

ত্রেতা সংকট থাকায় স্বল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা।

ক্রেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘তুলনামূলক ভাবে বেশ কম দামেই কয়েকটি খাঁচা কিনেছি। লকডাউনে এমনিতেই সবাই হাঁপিয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে আবার পাহাড়ি ঢলে বন্যা হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতা সবাই বিপাকে পড়েছেন। এবার বাজারে শুধু ক্রেতা নয়, বিক্রেতার উপস্থিতিও কম। আগে আরও বেশি জিনিস উঠত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত