Ajker Patrika

মাহমুদউল্লাহর চ্যালেঞ্জ আরও বড়

প্রিন্স রাসেল, ঢাকা
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২২, ১১: ২৩
মাহমুদউল্লাহর চ্যালেঞ্জ আরও বড়

সিরিজ-পূর্ব সাংবাদিক বৈঠকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন এলেন, তাঁর চোখমুখে চেনা হাসিটা দেখা গেল না। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের বিষণ্ন চেহারার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে দলের দুর্দশা। দলের নেতৃত্বে থাকায় ধারাবাহিক ৮ ম্যাচ হারের দায় এড়াতে পারেন না তিনি। ব্যাটিংয়ের এমন দশার কারণে আলাদাভাবেই কাঠগড়ায় অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। সর্বশেষ যোগ হয়েছে তাঁর পিচ্ছিল হাতও।

অধিনায়কের এমন হতশ্রী চেহারা ২০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবি বলা যেতে পারে। এমন কঠিন সময়ে আফগানিস্তান পরীক্ষা। মাহমুদউল্লাহর জন্য সিরিজটা আরও বড় পরীক্ষা। বলা যেতে পারে একরকম ‘অ্যাসিড টেস্ট’। সিরিজের দুই ম্যাচে অধিনায়কের সামনে এখন দুই চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, নেতৃত্ব। দ্বিতীয়ত, ব্যাটে রানখরা কাটানো।

গতকাল ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অনুমিতভাবেই প্রসঙ্গটা উঠেছে। সরাসরি একাদশে তাঁর থাকা নিয়েই সংশয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেন এক সংবাদকর্মী। উত্তরে মাহমুদউল্লাহর অভিমানী সুরে একরকম ক্ষোভ ফুটে উঠল। আবেগ সংবরণে ব্যর্থ অধিনায়ক প্রশ্নকর্তার উদ্দেশে উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনার কোনো সংশয় আছে আমার অবস্থান নিয়ে?’ এরপর যোগ করলেন, ‘আমার কোনো সংশয় নেই। আমি ঠিক পথেই আছি। ইনশা আল্লাহ আমি (রানে) ফিরে আসব। কারণ, আমার কাছে দলের চাহিদা ওই রকম থাকে। ওয়ানডেতে হয়তো পারিনি। চেষ্টা করব দলের প্রত্যাশা পূরণে।’

মাহমুদউল্লাহর কথায় বোঝা যাচ্ছে, একাদশে জায়গা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। কিন্তু সর্বশেষ বিশ্বকাপ থেকে তাঁর পারফরম্যান্স প্রত্যাশার ধারেকাছেও নেই। এই সংস্করণে বাংলাদেশ দলের হয়ে শেষ ৭ ম্যাচে পাননি ফিফটি। হতাশার গভীরতা কৃষ্ণগহ্বরে চলে যাওয়ার মতো তথ্য হচ্ছে, এসব ম্যাচে তিনি আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হওয়ার পর। তার ওপর স্ট্রাইকরেট টি-টোয়েন্টির চাহিদার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। এর প্রভাব পড়েছে ওয়ানডে সংস্করণেও।তিন দিন আগে শেষ হওয়া এক দিনের তিনটি ম্যাচ মিলিয়ে মাহমুদউল্লাহ বাউন্ডারি মেরেছেন মোটে একটি। সিরিজে তাঁর রানের যোগফল ৪৩। সব মিলিয়ে সময়টা কঠিন যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহর। দুঃসময়কে জবাব দেওয়ার এর চেয়ে ‘ভালো’ উপলক্ষ পেতে পারতেন না অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। মিরপুরেই বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। ৯ ম্যাচে ৮ ইনিংসে করেন ২৫৫ রান। ফিফটি একটি হলেও ব্যাটিং গড় ৩৬.৪২।

বাংলাদেশ দলের হয়ে পারফরম্যান্সটা ঠিক উল্টো। সর্বশেষ ৫ ম্যাচে করেছেন ৫০ রান! শেষ ফিফটিটা তিনি পেয়েছেন গত বছরের অক্টোবরে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেটিও আবার পাপুয়া নিউগিনির মতো দলের বিপক্ষে। এরপরই শুরু নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা। সুপার টুয়েলভের ম্যাচগুলোয় শুধু হতাশই করেছেন। চিত্রটা পাল্টায়নি ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজেও। এবার ভাগ্য বদলাবে তো? ফর্মে ফিরতে তাঁর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস আছে দুটি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পূর্ণ গ্যালারি আর বিপিএলে তাঁর পারফরম্যান্স।

মাহমুদউল্লাহর ফেরা কতটা জরুরি, সেটা বলে দিচ্ছে কঠিন বাস্তবতা। নেতৃত্ব ধরে রাখা ও একাদশে জায়গা পোক্ত করা—দুটিরই উপাদান মিলতে পারে আজ থেকে শুরু হওয়া আফগানিস্তান সিরিজে। এই সিরিজে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে না পারলে নিশ্চিতভাবেই মাহমুদউল্লাহর চাপ আরও বাড়বে। ব্যর্থতার খেসারত দিয়ে এ বছরের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলে নতুন নেতৃত্ব দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের আর্মব্যান্ড সাকিব আল হাসানের হাতে উঠতে পারে কি না, সর্বশেষ বিপিএল শেষে এই আলোচনায় কিন্তু জোর হাওয়া লেগেছে।

অন্য রকম সেঞ্চুরির আগে অনিশ্চিত মুশফিক

মুশফিকুর রহিমআফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামলেই অন্য রকম সেঞ্চুরি হবে মুশফিকুর রহিমের। কিন্তু চোট পাওয়ায় অপেক্ষা বাড়তে পারে এই ব্যাটারের। গতকাল বুধবার অনুশীলনের সময় ডান হাতের বুড়ো আঙুলে আঘাত পেয়েছেন তিনি। স্ক্যানে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটারকে।
চোট গুরুতর হলে আজ আফগানদের বিপক্ষে মাঠে দেখা যাবে না মুশফিককে। যদি সুস্থতা বোধ করেন, তাঁকে নিয়ে আর কোনো সংশয় থাকছে না। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে শততম টি-টোয়েন্টি খেলার রেকর্ড আছে শুধু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সেই রেকর্ডের কাছে দাঁড়িয়ে মুশফিক (৯৯)। আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই সেই রেকর্ড স্পর্শ করার সুযোগ তাঁর সামনে। কিন্তু তিনি চোটে পড়ায় এখন সেটি অনিশ্চিত। যদিও টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যথা কমলে মুশি খেলতে পারবেন। তবে এখনো ফোলা বোঝা যাচ্ছে না। এ ধরনের চোট-পরিস্থিতি সাধারণত ২৪ ঘণ্টা পর বোঝা যায়। তারা তাই অপেক্ষায় আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত