Ajker Patrika

২০ গ্রামের মানুষের ভরসা সাঁকো

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০৬
২০ গ্রামের মানুষের ভরসা সাঁকো

বরগুনার তালতলী উপজেলায় ২০ গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য রয়েছে কেবল একটি নড়বড়ে সাঁকো। উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের কলারং ও চড়কগাছিয়া গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের ওপর একমাত্র সাঁকোই ভরসা।

সাঁকোটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয়।

জানা যায়, পচাঁকোড়ালিয়া, আরপঙ্গাশিয়া, চান্দখালী, কলারং, ঘোপখালীসহ ওই এলাকার একুশটি গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরসহ জেলার অন্যান্য স্থানের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কলারং থেকে চড়কগাছিয়া বাঁশের তৈরি সাঁকোটি। স্থানীয় জনতা প্রতিবছরই এই সাঁকো মেরামত করে পারাপারের ব্যবস্থা করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ এবং দৈনন্দিন কর্মসংস্থানের কারণে সাঁকো পেরিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। ওই গ্রামগুলোর কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করাসহ রোগীর জরুরি চিকিৎসার জন্য নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এতে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয় ওই এলাকার শিশু, নারী, বৃদ্ধ, রোগী ও গর্ভবতী নারীদের।

প্রায় ৩০ বছর আগে খালে খেয়ানৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে ওই বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। এলাকাবাসীর দাবি এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই খালের ওপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই পাড়ের হাজার মানুষের জীবনযাত্রা। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচন শেষ হলে তা আর বাস্তবায়ন করেন না তাঁরা। এখন পর্যন্ত সেতু হয়নি, তাই এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এ বাঁশের সাঁকো স্থাপন করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের কলারং থেকে চড়কগাছিয়া গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এ সাঁকো। গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করছে। এ সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন পূর্ব চড়কগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়কগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাহলান বাড়ি কওমি মাদ্রাসা ও ড. মো. শহিদুল ইসলাম কলেজের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে যাতায়াত করতে হয়।

শুধু শিক্ষার্থী নয়, ওই সাঁকো চড়কগাছিয়া গ্রামের দুই শতাধিক লোক দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে। তেমনি কলারং গ্রামের শতাধিক কৃষকও তাঁদের কৃষিকাজ করার জন্য সাঁকোটি ব্যবহার করেন। একদিকে যেমন ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো পার হতে হয়, তেমনি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হয় এলাকাবাসীকে।

চড়কগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা মহসিন বলেন, ‘আমাদের চাষাবাদের জমি খালের ওপারে হওয়ায় এই সাঁকো দিয়ে ফসল আনা–নেওয়া করতে হয়। প্রতিদিনই এখান দিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করে। আমি গত কয়েক দিন আগে সাঁকো ভেঙে পড়ে গিয়েছিলাম। এই সাঁকোয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

কলারং গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, ‘এই বাঁশের সাঁকো দুই গ্রামবাসীর দুঃখ। ছোটবেলা থেকেই দেখছি এখানে বাঁশের সাঁকো। কবে এখানে সেতু হবে তা জানি না। সেতুটি নির্মাণ করা হলে আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন উপকৃত হবে।’

ড. মো. শহিদুল ইসলাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘কলারং খালের দুপাশে দুই উপজেলা হওয়ায় সেতু নির্মাণে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কথা ভেবে দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

তালতলীর পঁচাকোড়ালিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাফর মিয়া বলেন, ‘সাঁকোটি অনেক বড় হওয়াতে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তাই ওপারের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে এলজিইডিতে সুপারিশ করা হবে, যাতে দ্রুত এই সেতুটি নির্মাণ করা যায়।’

আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউপির চেয়ারম্যান সোহেলি পারভীন মালা বলেন, ‘আমার স্বামী চেয়ারম্যান থাকার সময় এ খালে সেতু নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেটা কি অবস্থায় আছে খোঁজখবর নিব। তা ছাড়া পঁচাকোড়ালিয়ার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সেতু নির্মাণের চেষ্টা করব।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এত বড় বাঁশের সাঁকো আছে আমার জানা ছিল না। আমাকে কেউ বলেনি এ সাঁকোর কথা। তবে এখন দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে এলজিইডিতে আবেদন করতে বলব। আমিও চেষ্টা করব যাতে ওখানে একটি সেতু হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত