জাহীদ রেজা নূর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে কোনো রকম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই। বিএনপি যতটা নির্বাচনবিরোধী হাঁকডাক দিয়েছে, নির্বাচনের মাঠে তার খুব বেশি প্রতিফলন দেখা যায়নি; বরং বিএনপি বলে একটি দল যে নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে, সেটা বোঝার কোনো উপায় ছিল না। এতে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি দেশ পরিচালনা করার জন্য তাদের প্রস্তুতিহীনতাও ধরা পড়েছে।
বিএনপির কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে, ক্ষমতা হাতে পাওয়াই বুঝি তাদের একমাত্র অ্যাজেন্ডা। এর সঙ্গে জনসম্পৃক্ততার কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের শাসনকালে যে দুর্নীতি হয়েছে, যে স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে বিএনপি, কিন্তু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা কীভাবে দাঁড়াবে, তার কোনো ইঙ্গিত নেই বিএনপির বর্তমান রাজনীতিতে। ফলে আওয়ামী শাসনে বিরক্ত যাঁরা, তাঁরাও নিজেদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে পছন্দের দল খুঁজে নিতে গিয়ে দ্বিধান্বিত হয়েছেন।
কিন্তু তাতে নির্বাচন যে শতভাগ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে, সে কথা বলা যাবে না। তার চেয়ে বড় কথা, ঈগলের ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগই নির্বাচনী খেলার মাঠ চাঙা রেখেছিল। ঘুরেফিরে মূলত আওয়ামী লীগই যে ছিল খেলার মাঠে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল একজন প্রতিমন্ত্রীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমনের সংসদ সদস্য হওয়া।বহুদিন ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল, আওয়ামী লীগের শক্ত এই ঘাঁটিতে একটা তুমুল আলোড়ন উঠতে পারে। ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাজির হয়ে ব্যারিস্টার সুমন যে রাজনীতির মাঠে আলোড়ন তুলতে পেরেছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে।
সাধারণত ফেসবুক বা অন্য কোনো যোগাযোগমাধ্যমের বিপ্লবটা আবর্তিত হয় ফেসবুকের মতো মাধ্যমগুলোতেই। বাস্তব জীবনে তার প্রভাব খুবই কম। কিন্তু কোনো কোনো সামাজিক ঘটনায় ফেসবুকীয় লেখালেখিতেও সরকারের টনক নড়েছে, এমন ঘটনাও কম নয়।
তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণ করা সুমন নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে দিতে পারেন, এ রকম একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল ভোটের আগেই। হবিগঞ্জ এলাকার তরুণেরা এবং চা-বাগানের শ্রমিকেরা এবার নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
দেশব্যাপী অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে ভোট পড়েছে কম। কিন্তু ব্যারিস্টার সুমনের আসনে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন এবং তিনি প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেছেন।
২. অনেকেই সুমনের মধ্যে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। আবার এরই বিপরীতে কেউ কেউ সুমনকে সস্তা কথার কারবারি বলে অভিহিত করছেন। আমরা সেই বিতর্ককে উসকে দেব না। শুধু বলব, অন্য ঈগলগুলোর চেয়ে এই ঈগলটা ব্যতিক্রমী। ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে সুমনের কথাবার্তা শোনার পর মনে হয়েছে, হয়তো এখনো কেউ সংসদ সদস্য হয়ে নিজ এলাকা এবং নিজ দেশের জন্য ব্যতিক্রমী কিছু করতে পারবেন।
ভুল বললাম, ব্যতিক্রমী কিছু করতে পারবেন বলাটা ঠিক হলো না। বলা উচিত ছিল, একজন সত্যিকার দেশপ্রেমী সংসদ সদস্যের যা করা দরকার, সে কাজটা করবেন। কারণ, দিনে দিনে আমরা ভুলেই যেতে বসেছি, রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো ক্ষমতায় এসে জনসেবা করা। নিজের আখের গোছানোর নাম রাজনীতি নয়, কিন্তু তাতেই বুঝি আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছি।
থাটা এমনিতে উঠল, এমন নয়। সিলেট অঞ্চলের পাঁচজন ডাকসাইটে মন্ত্রীকে এবার মন্ত্রিসভায় কেন রাখা হয়নি, তা নিয়ে আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। মূলত এই শক্তিশালী মন্ত্রীরা তাঁদের এপিএস এবং স্বজনদের যা খুশি করার অনুমতি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ রকম সুযোগ পেলে সংসদ সদস্যের কাছের মানুষেরাই যে ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে উঠতে পারেন, তার প্রমাণ খুঁজতে হাতে হারিকেন নিয়ে ছুটতে হবে না। প্রতিদিনই এমন ঘটনা আমাদের আশপাশে ঘটছে। মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের কাছের মানুষ মানেই বুঝি জনগণ বা প্রশাসনের জন্য জীবন্ত বিভীষিকা! সুমনের ওপর আস্থা রাখা যায় কি যায় না, সে কথা বলার আগে সুমনের বিপদ কী, তা নিয়ে দুটো কথা বলা জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পালন না করলে একজন জনপ্রতিনিধির ওপর আস্থা রাখে না মানুষ। রাজনীতিক বিভিন্ন সময় বাস্তবতা বুঝে বিভিন্ন কথা বলেন। সেগুলো যে নিছক বলার জন্য বলা, সে কথা আমজনতাও বোঝে। কিন্তু সুমনের সেই সুযোগ নেই। সুমন তাই রয়েছেন ঝুঁকিতে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রায় রবিনহুডের মতো সুমনের আবির্ভাব, তাই তিনি চাইলেই নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারবেন না।
এখন পর্যন্ত সুমনের বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি, যা পালন করতে অক্ষম। কিন্তু রাজনীতির মাঠ হয়তো ততটা মসৃণ নয়, যতটা মসৃণ হলে প্রতিশ্রুতিগুলো ঠিকভাবে পালন করা যায়।
৩. কেন একজন সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের আস্থা হারান? অতি আত্মবিশ্বাসের কথা বাদ দিলে আর যে কারণগুলো দেখা যায়, এর মধ্যে একটি হলো নির্বাচিত হওয়ার পর আর ভোটারের খোঁজ নেন না এই জনপ্রতিনিধিরা। বিভিন্ন উন্নয়নকাজে অযথা নাক গলানো এবং বরাদ্দের টাকার রহস্যময় আনাগোনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেন না। স্বজনেরা সবাই হয়ে ওঠেন এলাকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কাবিখাসহ নানা প্রকল্পের টাকার সুষ্ঠু বণ্টন হয় না এলাকায়। আর সবচেয়ে বড় কথা, নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিশ্রুতির সিংহভাগ ভুলে যান।
সুমন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা থেকে তিনি যদি সরে যান, তাহলে খুব দ্রুতই তাঁকে ভণ্ড বলে অভিহিত করা যাবে। তিনি মূলত আওয়ামী ঘরানার লোক হলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন এবং যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন, তাতে জনস্বার্থ লঙ্ঘিত হয়নি; বরং জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সুমনের কথাবার্তার মিল পাওয়া গেছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর সুমনের নেতৃত্বে এলাকার একটি জলাশয় (নদী) থেকে কচুরিপানা এবং আবর্জনা মুক্ত করা হয়েছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে যে তাঁর আছে, এ ঘটনা তারই ইঙ্গিত দেয়।
৪ লাখ টাকা খরচে একটি সেতু নির্মাণ করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন সরকারি কাজে কীভাবে খরচ বেড়ে যায়। সেতুটি তিনি নিজ খরচে করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় একই মাপের সরকারি সেতু নির্মাণ করতে ৭০ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি কাজের দুর্বলতা কিন্তু এখানেই প্রকাশ পায়। আমরা তো এ কথাও জানি যে সরকারি দরপত্রের মাধ্যমে কীভাবে ৫০০ টাকার জিনিস ২০ হাজার বা ততোধিক টাকা দিয়ে কেনা হয়। বেশি দূর যেতে হবে না, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের সরকারি কেনাকাটার তালিকাটি দেখলেই এই পুকুরচুরির ঘটনাগুলো চোখে পড়বে।
৪. সুমন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, প্রতিবাদ করা, সাধারণ মানুষের ভালো চাওয়ার মধ্যে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব বা চারিত্রিক শক্তি ফুটে উঠলেও রাজনীতির মাঠটি বড় পিচ্ছিল। তিনি বরাদ্দের টাকা ঠিকভাবে খরচ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করতে গেলে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের মোকাবিলা করে কাজটা করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এখানেই রয়েছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা। তাঁর আশপাশে যে মানুষেরা রয়েছেন, যাঁরা সুমনের প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না দেখবেন, তাঁরা কি সৎভাবে কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন? যাঁরা এমপি বা মন্ত্রী হয়ে আখের গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভাবেন, তাঁরা কি ব্যারিস্টার সুমনের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ-৪ এলাকাটিকে ব্যতিক্রমী একটি এলাকা হিসেবে বিনা বাধায় গড়ে উঠতে দেবেন?
সুমন এলাকায় নিজের লোক আর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামাল দিতে পারবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। পুরো সংসদে সুমনের নির্বাচিত হওয়া ও প্রতিশ্রুতিমাফিক কাজ করার অঙ্গীকার একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক পথের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু আমলাতন্ত্র, নিজের বিশ্বস্ত লোক আর প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম মোকাবিলা করে তিনি এগিয়ে যেতে পারেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
যদি তিনি উতরে যান, তাহলে দেশের আরও কিছু এলাকায় এই উদাহরণ ছড়িয়ে যাবে, যা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সুবাতাস আনতে পারে।সেই সঙ্গে অন্য সংসদ সদস্যদের ভাবনার জগতেও আনতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন। আর সুমন যদি ব্যর্থ হন, তাহলে ‘যেই লাউ সেই কদু’ রাজনীতি নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের; যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে কোনো রকম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই। বিএনপি যতটা নির্বাচনবিরোধী হাঁকডাক দিয়েছে, নির্বাচনের মাঠে তার খুব বেশি প্রতিফলন দেখা যায়নি; বরং বিএনপি বলে একটি দল যে নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে, সেটা বোঝার কোনো উপায় ছিল না। এতে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি দেশ পরিচালনা করার জন্য তাদের প্রস্তুতিহীনতাও ধরা পড়েছে।
বিএনপির কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে, ক্ষমতা হাতে পাওয়াই বুঝি তাদের একমাত্র অ্যাজেন্ডা। এর সঙ্গে জনসম্পৃক্ততার কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের শাসনকালে যে দুর্নীতি হয়েছে, যে স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে বিএনপি, কিন্তু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা কীভাবে দাঁড়াবে, তার কোনো ইঙ্গিত নেই বিএনপির বর্তমান রাজনীতিতে। ফলে আওয়ামী শাসনে বিরক্ত যাঁরা, তাঁরাও নিজেদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে পছন্দের দল খুঁজে নিতে গিয়ে দ্বিধান্বিত হয়েছেন।
কিন্তু তাতে নির্বাচন যে শতভাগ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে, সে কথা বলা যাবে না। তার চেয়ে বড় কথা, ঈগলের ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগই নির্বাচনী খেলার মাঠ চাঙা রেখেছিল। ঘুরেফিরে মূলত আওয়ামী লীগই যে ছিল খেলার মাঠে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল একজন প্রতিমন্ত্রীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমনের সংসদ সদস্য হওয়া।বহুদিন ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল, আওয়ামী লীগের শক্ত এই ঘাঁটিতে একটা তুমুল আলোড়ন উঠতে পারে। ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাজির হয়ে ব্যারিস্টার সুমন যে রাজনীতির মাঠে আলোড়ন তুলতে পেরেছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে।
সাধারণত ফেসবুক বা অন্য কোনো যোগাযোগমাধ্যমের বিপ্লবটা আবর্তিত হয় ফেসবুকের মতো মাধ্যমগুলোতেই। বাস্তব জীবনে তার প্রভাব খুবই কম। কিন্তু কোনো কোনো সামাজিক ঘটনায় ফেসবুকীয় লেখালেখিতেও সরকারের টনক নড়েছে, এমন ঘটনাও কম নয়।
তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণ করা সুমন নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে দিতে পারেন, এ রকম একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল ভোটের আগেই। হবিগঞ্জ এলাকার তরুণেরা এবং চা-বাগানের শ্রমিকেরা এবার নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
দেশব্যাপী অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে ভোট পড়েছে কম। কিন্তু ব্যারিস্টার সুমনের আসনে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন এবং তিনি প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেছেন।
২. অনেকেই সুমনের মধ্যে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। আবার এরই বিপরীতে কেউ কেউ সুমনকে সস্তা কথার কারবারি বলে অভিহিত করছেন। আমরা সেই বিতর্ককে উসকে দেব না। শুধু বলব, অন্য ঈগলগুলোর চেয়ে এই ঈগলটা ব্যতিক্রমী। ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে সুমনের কথাবার্তা শোনার পর মনে হয়েছে, হয়তো এখনো কেউ সংসদ সদস্য হয়ে নিজ এলাকা এবং নিজ দেশের জন্য ব্যতিক্রমী কিছু করতে পারবেন।
ভুল বললাম, ব্যতিক্রমী কিছু করতে পারবেন বলাটা ঠিক হলো না। বলা উচিত ছিল, একজন সত্যিকার দেশপ্রেমী সংসদ সদস্যের যা করা দরকার, সে কাজটা করবেন। কারণ, দিনে দিনে আমরা ভুলেই যেতে বসেছি, রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো ক্ষমতায় এসে জনসেবা করা। নিজের আখের গোছানোর নাম রাজনীতি নয়, কিন্তু তাতেই বুঝি আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছি।
থাটা এমনিতে উঠল, এমন নয়। সিলেট অঞ্চলের পাঁচজন ডাকসাইটে মন্ত্রীকে এবার মন্ত্রিসভায় কেন রাখা হয়নি, তা নিয়ে আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। মূলত এই শক্তিশালী মন্ত্রীরা তাঁদের এপিএস এবং স্বজনদের যা খুশি করার অনুমতি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ রকম সুযোগ পেলে সংসদ সদস্যের কাছের মানুষেরাই যে ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে উঠতে পারেন, তার প্রমাণ খুঁজতে হাতে হারিকেন নিয়ে ছুটতে হবে না। প্রতিদিনই এমন ঘটনা আমাদের আশপাশে ঘটছে। মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের কাছের মানুষ মানেই বুঝি জনগণ বা প্রশাসনের জন্য জীবন্ত বিভীষিকা! সুমনের ওপর আস্থা রাখা যায় কি যায় না, সে কথা বলার আগে সুমনের বিপদ কী, তা নিয়ে দুটো কথা বলা জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পালন না করলে একজন জনপ্রতিনিধির ওপর আস্থা রাখে না মানুষ। রাজনীতিক বিভিন্ন সময় বাস্তবতা বুঝে বিভিন্ন কথা বলেন। সেগুলো যে নিছক বলার জন্য বলা, সে কথা আমজনতাও বোঝে। কিন্তু সুমনের সেই সুযোগ নেই। সুমন তাই রয়েছেন ঝুঁকিতে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রায় রবিনহুডের মতো সুমনের আবির্ভাব, তাই তিনি চাইলেই নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারবেন না।
এখন পর্যন্ত সুমনের বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি, যা পালন করতে অক্ষম। কিন্তু রাজনীতির মাঠ হয়তো ততটা মসৃণ নয়, যতটা মসৃণ হলে প্রতিশ্রুতিগুলো ঠিকভাবে পালন করা যায়।
৩. কেন একজন সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের আস্থা হারান? অতি আত্মবিশ্বাসের কথা বাদ দিলে আর যে কারণগুলো দেখা যায়, এর মধ্যে একটি হলো নির্বাচিত হওয়ার পর আর ভোটারের খোঁজ নেন না এই জনপ্রতিনিধিরা। বিভিন্ন উন্নয়নকাজে অযথা নাক গলানো এবং বরাদ্দের টাকার রহস্যময় আনাগোনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেন না। স্বজনেরা সবাই হয়ে ওঠেন এলাকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কাবিখাসহ নানা প্রকল্পের টাকার সুষ্ঠু বণ্টন হয় না এলাকায়। আর সবচেয়ে বড় কথা, নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিশ্রুতির সিংহভাগ ভুলে যান।
সুমন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা থেকে তিনি যদি সরে যান, তাহলে খুব দ্রুতই তাঁকে ভণ্ড বলে অভিহিত করা যাবে। তিনি মূলত আওয়ামী ঘরানার লোক হলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন এবং যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন, তাতে জনস্বার্থ লঙ্ঘিত হয়নি; বরং জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সুমনের কথাবার্তার মিল পাওয়া গেছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর সুমনের নেতৃত্বে এলাকার একটি জলাশয় (নদী) থেকে কচুরিপানা এবং আবর্জনা মুক্ত করা হয়েছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে যে তাঁর আছে, এ ঘটনা তারই ইঙ্গিত দেয়।
৪ লাখ টাকা খরচে একটি সেতু নির্মাণ করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন সরকারি কাজে কীভাবে খরচ বেড়ে যায়। সেতুটি তিনি নিজ খরচে করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় একই মাপের সরকারি সেতু নির্মাণ করতে ৭০ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি কাজের দুর্বলতা কিন্তু এখানেই প্রকাশ পায়। আমরা তো এ কথাও জানি যে সরকারি দরপত্রের মাধ্যমে কীভাবে ৫০০ টাকার জিনিস ২০ হাজার বা ততোধিক টাকা দিয়ে কেনা হয়। বেশি দূর যেতে হবে না, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের সরকারি কেনাকাটার তালিকাটি দেখলেই এই পুকুরচুরির ঘটনাগুলো চোখে পড়বে।
৪. সুমন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, প্রতিবাদ করা, সাধারণ মানুষের ভালো চাওয়ার মধ্যে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব বা চারিত্রিক শক্তি ফুটে উঠলেও রাজনীতির মাঠটি বড় পিচ্ছিল। তিনি বরাদ্দের টাকা ঠিকভাবে খরচ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করতে গেলে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের মোকাবিলা করে কাজটা করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এখানেই রয়েছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা। তাঁর আশপাশে যে মানুষেরা রয়েছেন, যাঁরা সুমনের প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না দেখবেন, তাঁরা কি সৎভাবে কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন? যাঁরা এমপি বা মন্ত্রী হয়ে আখের গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভাবেন, তাঁরা কি ব্যারিস্টার সুমনের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ-৪ এলাকাটিকে ব্যতিক্রমী একটি এলাকা হিসেবে বিনা বাধায় গড়ে উঠতে দেবেন?
সুমন এলাকায় নিজের লোক আর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামাল দিতে পারবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। পুরো সংসদে সুমনের নির্বাচিত হওয়া ও প্রতিশ্রুতিমাফিক কাজ করার অঙ্গীকার একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক পথের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু আমলাতন্ত্র, নিজের বিশ্বস্ত লোক আর প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম মোকাবিলা করে তিনি এগিয়ে যেতে পারেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
যদি তিনি উতরে যান, তাহলে দেশের আরও কিছু এলাকায় এই উদাহরণ ছড়িয়ে যাবে, যা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সুবাতাস আনতে পারে।সেই সঙ্গে অন্য সংসদ সদস্যদের ভাবনার জগতেও আনতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন। আর সুমন যদি ব্যর্থ হন, তাহলে ‘যেই লাউ সেই কদু’ রাজনীতি নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের; যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪