চিররঞ্জন সরকার

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। সর্বশেষ ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দামের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।
নতুন এই পদ্ধতি চালুর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ; অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। কারও কাছে থাকা ১ লাখ টাকার মান এখন ৯৩ হাজার ৬৪০ টাকায় নেমেছে। এ কারণে হঠাৎ করে বিপাকে পড়ে গেছেন আমদানিকারকেরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঘোষণায় ছোট ও মাঝারি ধরনের আমদানিকারকদের এলসি পেমেন্টে অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে কোটি টাকার ওপরে। বড় আমদানিকারকদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। এর আগে দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের ওপর। কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো পণ্য আমদানিতে এত দিন ১১০ টাকা দামে ডলার দিত বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ একটা সময় ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেঁধে রেখেছিল। অর্থনীতিবিদেরা এত দিন একটি ভাসমান বিনিময় হারের কথা বলে আসছিলেন। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে মূলত রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হওয়ায় রপ্তানিকারকেরা এই আয় থেকে বাড়তি ৭ টাকা বেশি হাতে পাবেন। এতে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে এই নীতি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কতটুকু সুফল নিয়ে আসবে, সেটা দেখার বিষয়।
তবে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। টাকার অবমূল্যায়নের আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ উপার্জন করতেন, এখনো তা-ই করছেন। তাঁরা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন না। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভ্রমণ, বিদেশে লেখাপড়া ও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাবে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। যদিও এগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেষ বিচারে এর সুফল ফলবে বলেই অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন।
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে আসছিলেন। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে কান দেননি। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের একধরনের স্পর্শকাতরতা লক্ষ করা গেছে। তাঁরা মনে করেছেন একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ঠিক বলা যায় না। এ ছাড়া এটা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারের প্রতি একধরনের অবিশ্বাস বা অনাস্থার কারণেই এত দিন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজারকে বিশ্বাস করা হয়নি। নানা রকম ব্যর্থ টোটকার পর এখন বাজারের হাতেই ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া হলো। যেটা আগে করা যেত, সেটা অনেক পরে করা হলো। মাঝখান থেকে ক্ষত আর ক্ষতি যা হয়েছে, তা কিন্তু মোটেও সামান্য নয়!
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কান দেয়নি। এখন শেষ পর্যন্ত বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিরাট প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার তাগাদা দিয়ে আসছিল।
উল্লেখ্য, ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলারের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডলার-সংকট চলছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে আগেই। যদিও খোলাবাজারে লেনদেন হচ্ছিল আরও বেশি দামে। ডলার-সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।
২০২১ সালের আগস্টে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সংকটের কারণে সেটি এখন ২০ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাজারে সংকট কাটেনি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন উপায়ে ডলারের বাজার ব্যবস্থাপনার যে চেষ্টা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছিল, তা সংকট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি।
সমস্যা হলো, ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময় মূল্য কমার প্রভাব সরাসরি পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রল, ডিজেল, এলএনজির দাম চড়া। পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি মানেই একদিকে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির পরোক্ষ প্রভাব। এ ছাড়া বহু পণ্য নিয়মিত আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে কিছু সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছায়, কিছু অন্তর্বর্তী পণ্য। সেগুলোরও দাম বাড়ে। আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও আবশ্যিক পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে।
সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশের মধ্যে দেখানো হলেও বাস্তবে তা দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে বলেই অর্থনীতিবিদদের অনুমান। টাকার দাম কমায় মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। মূল্যস্ফীতিকে একধরনের ‘কর’ হিসেবে দেখা হয়। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি বা আয় না বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। তাঁদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা অনেক মানুষের আবার গরিব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টাকার ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ এক দিনে টাকার অঙ্কে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ঋণ পরিশোধের টাকার অঙ্কও বাড়ছে।
এই মুহূর্তে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করতে হবে। এর পাশাপাশি দরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ। ডলার খরচ করে যেসব কম গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্প হচ্ছে, এতেও ধীরে চলা নীতি নিতে হবে। ডলার-সংকট নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের ভয়াবহ বিপদে পড়তে হতে পারে। একই সঙ্গে বাজারের ওপর কঠোর নজরদারিও থাকতে হবে।
কারণ বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি যতটা না ডলার-সংকটের ওপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, বাজারের ওপর নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণের অভাব, সরবরাহ না থাকা, মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগামহীন লাভ করার মানসিকতা, চাঁদাবাজির মতো বিষয়গুলোর ওপর। বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা না ছাপানোর মতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তবে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই বাংলাদেশে ডলার-সংকটের একমাত্র সমাধান নয়; বরং যেসব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশে ডলার, বিশেষ করে রেমিট্যান্স আসছে, সেগুলো বন্ধ করা না গেলে ডলার-সংকটের সমাধান সম্ভব নয়; বিশেষ করে হুন্ডি বন্ধ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ‘অ্যাগ্রেসিভ অ্যাকশন’ নিতে হবে। যদি কয়েকজনকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা যায়, তাহলে এটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নইলে তো এটা চলতেই থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘শর্ষের ভূত’ তাড়াতে হবে। শর্ষের মধ্যে ভূত রেখে কখনো প্রেতাত্মা তাড়ানো যায় না!
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। সর্বশেষ ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দামের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।
নতুন এই পদ্ধতি চালুর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ; অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। কারও কাছে থাকা ১ লাখ টাকার মান এখন ৯৩ হাজার ৬৪০ টাকায় নেমেছে। এ কারণে হঠাৎ করে বিপাকে পড়ে গেছেন আমদানিকারকেরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঘোষণায় ছোট ও মাঝারি ধরনের আমদানিকারকদের এলসি পেমেন্টে অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে কোটি টাকার ওপরে। বড় আমদানিকারকদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। এর আগে দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের ওপর। কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো পণ্য আমদানিতে এত দিন ১১০ টাকা দামে ডলার দিত বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ একটা সময় ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেঁধে রেখেছিল। অর্থনীতিবিদেরা এত দিন একটি ভাসমান বিনিময় হারের কথা বলে আসছিলেন। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে মূলত রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হওয়ায় রপ্তানিকারকেরা এই আয় থেকে বাড়তি ৭ টাকা বেশি হাতে পাবেন। এতে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে এই নীতি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কতটুকু সুফল নিয়ে আসবে, সেটা দেখার বিষয়।
তবে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। টাকার অবমূল্যায়নের আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ উপার্জন করতেন, এখনো তা-ই করছেন। তাঁরা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন না। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভ্রমণ, বিদেশে লেখাপড়া ও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাবে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। যদিও এগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেষ বিচারে এর সুফল ফলবে বলেই অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন।
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে আসছিলেন। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে কান দেননি। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের একধরনের স্পর্শকাতরতা লক্ষ করা গেছে। তাঁরা মনে করেছেন একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ঠিক বলা যায় না। এ ছাড়া এটা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারের প্রতি একধরনের অবিশ্বাস বা অনাস্থার কারণেই এত দিন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজারকে বিশ্বাস করা হয়নি। নানা রকম ব্যর্থ টোটকার পর এখন বাজারের হাতেই ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া হলো। যেটা আগে করা যেত, সেটা অনেক পরে করা হলো। মাঝখান থেকে ক্ষত আর ক্ষতি যা হয়েছে, তা কিন্তু মোটেও সামান্য নয়!
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কান দেয়নি। এখন শেষ পর্যন্ত বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিরাট প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার তাগাদা দিয়ে আসছিল।
উল্লেখ্য, ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলারের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডলার-সংকট চলছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে আগেই। যদিও খোলাবাজারে লেনদেন হচ্ছিল আরও বেশি দামে। ডলার-সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।
২০২১ সালের আগস্টে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সংকটের কারণে সেটি এখন ২০ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাজারে সংকট কাটেনি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন উপায়ে ডলারের বাজার ব্যবস্থাপনার যে চেষ্টা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছিল, তা সংকট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি।
সমস্যা হলো, ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময় মূল্য কমার প্রভাব সরাসরি পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রল, ডিজেল, এলএনজির দাম চড়া। পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি মানেই একদিকে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির পরোক্ষ প্রভাব। এ ছাড়া বহু পণ্য নিয়মিত আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে কিছু সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছায়, কিছু অন্তর্বর্তী পণ্য। সেগুলোরও দাম বাড়ে। আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও আবশ্যিক পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে।
সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশের মধ্যে দেখানো হলেও বাস্তবে তা দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে বলেই অর্থনীতিবিদদের অনুমান। টাকার দাম কমায় মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। মূল্যস্ফীতিকে একধরনের ‘কর’ হিসেবে দেখা হয়। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি বা আয় না বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। তাঁদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা অনেক মানুষের আবার গরিব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টাকার ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ এক দিনে টাকার অঙ্কে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ঋণ পরিশোধের টাকার অঙ্কও বাড়ছে।
এই মুহূর্তে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করতে হবে। এর পাশাপাশি দরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ। ডলার খরচ করে যেসব কম গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্প হচ্ছে, এতেও ধীরে চলা নীতি নিতে হবে। ডলার-সংকট নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের ভয়াবহ বিপদে পড়তে হতে পারে। একই সঙ্গে বাজারের ওপর কঠোর নজরদারিও থাকতে হবে।
কারণ বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি যতটা না ডলার-সংকটের ওপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, বাজারের ওপর নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণের অভাব, সরবরাহ না থাকা, মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগামহীন লাভ করার মানসিকতা, চাঁদাবাজির মতো বিষয়গুলোর ওপর। বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা না ছাপানোর মতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তবে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই বাংলাদেশে ডলার-সংকটের একমাত্র সমাধান নয়; বরং যেসব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশে ডলার, বিশেষ করে রেমিট্যান্স আসছে, সেগুলো বন্ধ করা না গেলে ডলার-সংকটের সমাধান সম্ভব নয়; বিশেষ করে হুন্ডি বন্ধ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ‘অ্যাগ্রেসিভ অ্যাকশন’ নিতে হবে। যদি কয়েকজনকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা যায়, তাহলে এটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নইলে তো এটা চলতেই থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘শর্ষের ভূত’ তাড়াতে হবে। শর্ষের মধ্যে ভূত রেখে কখনো প্রেতাত্মা তাড়ানো যায় না!
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। সর্বশেষ ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দামের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।
নতুন এই পদ্ধতি চালুর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ; অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। কারও কাছে থাকা ১ লাখ টাকার মান এখন ৯৩ হাজার ৬৪০ টাকায় নেমেছে। এ কারণে হঠাৎ করে বিপাকে পড়ে গেছেন আমদানিকারকেরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঘোষণায় ছোট ও মাঝারি ধরনের আমদানিকারকদের এলসি পেমেন্টে অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে কোটি টাকার ওপরে। বড় আমদানিকারকদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। এর আগে দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের ওপর। কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো পণ্য আমদানিতে এত দিন ১১০ টাকা দামে ডলার দিত বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ একটা সময় ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেঁধে রেখেছিল। অর্থনীতিবিদেরা এত দিন একটি ভাসমান বিনিময় হারের কথা বলে আসছিলেন। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে মূলত রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হওয়ায় রপ্তানিকারকেরা এই আয় থেকে বাড়তি ৭ টাকা বেশি হাতে পাবেন। এতে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে এই নীতি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কতটুকু সুফল নিয়ে আসবে, সেটা দেখার বিষয়।
তবে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। টাকার অবমূল্যায়নের আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ উপার্জন করতেন, এখনো তা-ই করছেন। তাঁরা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন না। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভ্রমণ, বিদেশে লেখাপড়া ও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাবে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। যদিও এগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেষ বিচারে এর সুফল ফলবে বলেই অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন।
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে আসছিলেন। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে কান দেননি। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের একধরনের স্পর্শকাতরতা লক্ষ করা গেছে। তাঁরা মনে করেছেন একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ঠিক বলা যায় না। এ ছাড়া এটা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারের প্রতি একধরনের অবিশ্বাস বা অনাস্থার কারণেই এত দিন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজারকে বিশ্বাস করা হয়নি। নানা রকম ব্যর্থ টোটকার পর এখন বাজারের হাতেই ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া হলো। যেটা আগে করা যেত, সেটা অনেক পরে করা হলো। মাঝখান থেকে ক্ষত আর ক্ষতি যা হয়েছে, তা কিন্তু মোটেও সামান্য নয়!
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কান দেয়নি। এখন শেষ পর্যন্ত বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিরাট প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার তাগাদা দিয়ে আসছিল।
উল্লেখ্য, ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলারের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডলার-সংকট চলছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে আগেই। যদিও খোলাবাজারে লেনদেন হচ্ছিল আরও বেশি দামে। ডলার-সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।
২০২১ সালের আগস্টে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সংকটের কারণে সেটি এখন ২০ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাজারে সংকট কাটেনি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন উপায়ে ডলারের বাজার ব্যবস্থাপনার যে চেষ্টা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছিল, তা সংকট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি।
সমস্যা হলো, ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময় মূল্য কমার প্রভাব সরাসরি পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রল, ডিজেল, এলএনজির দাম চড়া। পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি মানেই একদিকে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির পরোক্ষ প্রভাব। এ ছাড়া বহু পণ্য নিয়মিত আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে কিছু সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছায়, কিছু অন্তর্বর্তী পণ্য। সেগুলোরও দাম বাড়ে। আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও আবশ্যিক পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে।
সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশের মধ্যে দেখানো হলেও বাস্তবে তা দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে বলেই অর্থনীতিবিদদের অনুমান। টাকার দাম কমায় মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। মূল্যস্ফীতিকে একধরনের ‘কর’ হিসেবে দেখা হয়। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি বা আয় না বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। তাঁদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা অনেক মানুষের আবার গরিব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টাকার ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ এক দিনে টাকার অঙ্কে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ঋণ পরিশোধের টাকার অঙ্কও বাড়ছে।
এই মুহূর্তে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করতে হবে। এর পাশাপাশি দরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ। ডলার খরচ করে যেসব কম গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্প হচ্ছে, এতেও ধীরে চলা নীতি নিতে হবে। ডলার-সংকট নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের ভয়াবহ বিপদে পড়তে হতে পারে। একই সঙ্গে বাজারের ওপর কঠোর নজরদারিও থাকতে হবে।
কারণ বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি যতটা না ডলার-সংকটের ওপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, বাজারের ওপর নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণের অভাব, সরবরাহ না থাকা, মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগামহীন লাভ করার মানসিকতা, চাঁদাবাজির মতো বিষয়গুলোর ওপর। বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা না ছাপানোর মতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তবে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই বাংলাদেশে ডলার-সংকটের একমাত্র সমাধান নয়; বরং যেসব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশে ডলার, বিশেষ করে রেমিট্যান্স আসছে, সেগুলো বন্ধ করা না গেলে ডলার-সংকটের সমাধান সম্ভব নয়; বিশেষ করে হুন্ডি বন্ধ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ‘অ্যাগ্রেসিভ অ্যাকশন’ নিতে হবে। যদি কয়েকজনকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা যায়, তাহলে এটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নইলে তো এটা চলতেই থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘শর্ষের ভূত’ তাড়াতে হবে। শর্ষের মধ্যে ভূত রেখে কখনো প্রেতাত্মা তাড়ানো যায় না!
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। সর্বশেষ ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দামের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।
নতুন এই পদ্ধতি চালুর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ; অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। কারও কাছে থাকা ১ লাখ টাকার মান এখন ৯৩ হাজার ৬৪০ টাকায় নেমেছে। এ কারণে হঠাৎ করে বিপাকে পড়ে গেছেন আমদানিকারকেরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঘোষণায় ছোট ও মাঝারি ধরনের আমদানিকারকদের এলসি পেমেন্টে অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে কোটি টাকার ওপরে। বড় আমদানিকারকদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। এর আগে দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের ওপর। কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো পণ্য আমদানিতে এত দিন ১১০ টাকা দামে ডলার দিত বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ একটা সময় ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেঁধে রেখেছিল। অর্থনীতিবিদেরা এত দিন একটি ভাসমান বিনিময় হারের কথা বলে আসছিলেন। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে মূলত রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হওয়ায় রপ্তানিকারকেরা এই আয় থেকে বাড়তি ৭ টাকা বেশি হাতে পাবেন। এতে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে এই নীতি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কতটুকু সুফল নিয়ে আসবে, সেটা দেখার বিষয়।
তবে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। টাকার অবমূল্যায়নের আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ উপার্জন করতেন, এখনো তা-ই করছেন। তাঁরা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন না। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভ্রমণ, বিদেশে লেখাপড়া ও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাবে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। যদিও এগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেষ বিচারে এর সুফল ফলবে বলেই অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন।
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে আসছিলেন। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে কান দেননি। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের একধরনের স্পর্শকাতরতা লক্ষ করা গেছে। তাঁরা মনে করেছেন একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ঠিক বলা যায় না। এ ছাড়া এটা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারের প্রতি একধরনের অবিশ্বাস বা অনাস্থার কারণেই এত দিন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজারকে বিশ্বাস করা হয়নি। নানা রকম ব্যর্থ টোটকার পর এখন বাজারের হাতেই ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া হলো। যেটা আগে করা যেত, সেটা অনেক পরে করা হলো। মাঝখান থেকে ক্ষত আর ক্ষতি যা হয়েছে, তা কিন্তু মোটেও সামান্য নয়!
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কান দেয়নি। এখন শেষ পর্যন্ত বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিরাট প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার তাগাদা দিয়ে আসছিল।
উল্লেখ্য, ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলারের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডলার-সংকট চলছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে আগেই। যদিও খোলাবাজারে লেনদেন হচ্ছিল আরও বেশি দামে। ডলার-সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।
২০২১ সালের আগস্টে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সংকটের কারণে সেটি এখন ২০ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাজারে সংকট কাটেনি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন উপায়ে ডলারের বাজার ব্যবস্থাপনার যে চেষ্টা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছিল, তা সংকট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি।
সমস্যা হলো, ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময় মূল্য কমার প্রভাব সরাসরি পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রল, ডিজেল, এলএনজির দাম চড়া। পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি মানেই একদিকে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির পরোক্ষ প্রভাব। এ ছাড়া বহু পণ্য নিয়মিত আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে কিছু সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছায়, কিছু অন্তর্বর্তী পণ্য। সেগুলোরও দাম বাড়ে। আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও আবশ্যিক পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে।
সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশের মধ্যে দেখানো হলেও বাস্তবে তা দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে বলেই অর্থনীতিবিদদের অনুমান। টাকার দাম কমায় মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। মূল্যস্ফীতিকে একধরনের ‘কর’ হিসেবে দেখা হয়। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি বা আয় না বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। তাঁদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা অনেক মানুষের আবার গরিব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টাকার ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ এক দিনে টাকার অঙ্কে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ঋণ পরিশোধের টাকার অঙ্কও বাড়ছে।
এই মুহূর্তে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করতে হবে। এর পাশাপাশি দরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ। ডলার খরচ করে যেসব কম গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্প হচ্ছে, এতেও ধীরে চলা নীতি নিতে হবে। ডলার-সংকট নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের ভয়াবহ বিপদে পড়তে হতে পারে। একই সঙ্গে বাজারের ওপর কঠোর নজরদারিও থাকতে হবে।
কারণ বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি যতটা না ডলার-সংকটের ওপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, বাজারের ওপর নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণের অভাব, সরবরাহ না থাকা, মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগামহীন লাভ করার মানসিকতা, চাঁদাবাজির মতো বিষয়গুলোর ওপর। বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা না ছাপানোর মতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তবে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই বাংলাদেশে ডলার-সংকটের একমাত্র সমাধান নয়; বরং যেসব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশে ডলার, বিশেষ করে রেমিট্যান্স আসছে, সেগুলো বন্ধ করা না গেলে ডলার-সংকটের সমাধান সম্ভব নয়; বিশেষ করে হুন্ডি বন্ধ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ‘অ্যাগ্রেসিভ অ্যাকশন’ নিতে হবে। যদি কয়েকজনকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা যায়, তাহলে এটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নইলে তো এটা চলতেই থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘শর্ষের ভূত’ তাড়াতে হবে। শর্ষের মধ্যে ভূত রেখে কখনো প্রেতাত্মা তাড়ানো যায় না!
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৪ মে ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৪ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৪ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৪ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫