Ajker Patrika

শহর থেকে গ্রাম, টান পড়েছে রুটি-রুজিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

দেশজুড়ে প্রচণ্ড গরমের যন্ত্রণা বাড়িয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা সদর, গ্রাম-লোডশেডিং থেকে রেহাই নেই কোথাও। ব্যবধান শুধু ঘণ্টার। শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং অনেক বেশি। কোথাও ২৪ ঘণ্টায় চার–পাঁচ ঘণ্টা, আবার কোথাও ১০ ঘণ্টার বেশি।

বিদ্যুতের অভাবে পানির পাম্প না চলায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। গরম-লোডশেডিং-পানি সংকটে বিঘ্নিত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। কমেছে আয়।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট।

তবে সরবরাহ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৮ মেগাওয়াট। অর্থাৎ লোডশেডিং হয়েছে এক হাজার ৭৫৮ মেগাওয়াট। তবে প্রকৃত লোডশেডিং এর অনেক বেশি বলে ধারণা মানুষের।  

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সদরে এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় দোকানিরা পড়েছেন বিপাকে। রাজনগর বাজারের মাস্টার্স কম্পিউটার নামের দোকানের মালিক স্বপন দেব বলেন, তাঁর দোকানে কম্পিউটার কম্পোজসহ ফটোকপি করা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে তিনি কাজ করতে পারছেন না।

রাজনগর উপজেলা সদরের গৃহিণী শাপলা বেগম বলেন, দিনে–রাতে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই। এক সপ্তাহ ধরে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে তিন ঘণ্টা থাকে না। ফ্রিজে রাখা খাবার পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে।

গ্রামে অবস্থা আরও খারাপ। বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসে। সব মিলিয়ে আট–নয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন সূত্র বলেছে।

বিদ্যুতের অভাবে ব্যাটারিতে চার্জ দিতে না পারায় ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছেন না মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ভ্যানচালক শাহীন আলী। একই উপজেলার কৃষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, কয়েক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এসে এক ঘণ্টাও থাকছে না। এ কারণে ধানের জমিতে সেচ দিতে না পারায় আবাদ পুড়ে যাচ্ছে। দিনে তিন ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এসে আধা ঘণ্টাও থাকে না। রাতেও চলে আসা–যাওয়া।

তীব্র গরমে ময়মনসিংহ শহরে প্রয়োজন ছাড়া বাসা–বাড়ি থেকে মানুষ কম বের হচ্ছে। শহরের গাঙ্গিনারপাড়ের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, কিছু মানুষ বের হলেও লোডশেডিংয়ের কারণে দোকানে ঢুকছে না। তাঁরা নিজেরাই তো অস্থির। তাই মার্কেট ফাঁকা। বিক্রিও তেমন নেই। দিন–রাত মিলিয়ে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বগুড়া শহরের দত্তবাড়ি এলাকার রতন হোসেনের লন্ড্রিতে কাপড়ের স্তূপ জমে গেছে। কাপড় ইস্ত্রি করে দিতে না পারায় তাঁর আয়ও নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সিয়াম আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের যাওয়া–আসার খেলায় টিভি, ফ্যান ও রেফ্রিজারেটরের ক্ষতি হচ্ছে। রেফ্রিজারেটর ঠিকমতো কাজ করছে না। 

হাসপাতালে রোগী–স্বজনদের কষ্ট
বিভিন্ন জেলা–উপজেলা হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাঁদের স্বজনদের কষ্ট বাড়িয়েছে লোডশেডিং। গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এসে বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। গরমে হাঁসফাঁস করছেন।

গরম ও লোডশেডিংয়ে বরিশাল সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী বেড়েছে। ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে দিন–রাত মিলিয়ে সাত–আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালও লোডশেডিংয়ের বাইরে নয়। এক রোগীর স্বজন সেরাজুল ইসলাম বলেন, রোগী নিয়ে রাতে হাসপাতালে আসতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এত বড় হাসপাতালে জেনারেটর থেকেও নেই। গরমে রোগীর সঙ্গে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘জেনারেটরের ব্যাটারিতে সমস্যা থাকায় সাময়িক বিদ্যুৎসেবা বন্ধ থাকতে পারে।’ 

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল সব মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আতাউর রহমান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ১৮ রোগী ভর্তি রয়েছে। তাঁদের অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। বিদ্যুতের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

নোয়াখালীর মাইজদী হাসপাতাল সড়কের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া রোগ নির্ণয়ের কোনো যন্ত্র চালানো যায় না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে যন্ত্র বন্ধ থাকায় রোগীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। কিছু ইউপিএস নষ্ট হয়ে গেছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দেড় ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ ছিল। বেলা দেড়টায় আবার চলে গিয়ে দুইটায়ও বিদ্যুৎ আসেনি।

মেহেরপুর শহরের চক্রপাড়ার বৃদ্ধ নজির উদ্দীন বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরমে শ্বাসকষ্ট বাড়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন গাংনী (মেহেরপুর), রাজনগর (মৌলভীবাজার), চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট), পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা), হবিগঞ্জ, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি), মেহেরপুর, ঝিকরগাছা (যশোর), বরিশাল, মাগুরা, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ), টাঙ্গাইল, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), বিশ্বনাথ (সিলেট), ময়মনসিংহ, ভোলা, নান্দাইল (ময়মনসিংহ), ফুলছড়ি (গাইবান্ধা), মিঠাপুকুর (রংপুর), বরগুনা, গাইবান্ধা, লালপুর (নাটোর) কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), গঙ্গাচড়া (রংপুর), বগুড়া, দিনাজপুর, পাবনা, ঝিনাইদহ, তালা (সাতক্ষীরা), রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও), উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ), রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, নোয়াখালী, নবাবগঞ্জ ও দোহার (ঢাকা), মনিরামপুর (যশোর), শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি।)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত