Ajker Patrika

শৈশবে যৌন নিগ্রহের শিকার ৩৮.৮৬ শতাংশ তরুণী

রবিউল আলম, ঢাকা
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১০: ১৭
Thumbnail image

পারিবারিক টানাপড়েন, উত্ত্যক্ত-যৌন হয়রানি, বডি শেমিং বা শরীর নিয়ে পরিহাস—ঘরে-বাইরে এ ধরনের নানা সমস্যার সম্মুখীন হন তরুণীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাইবার বুলিং বা অনলাইনে বিড়ম্বনা। এসব বিষয়ই চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যে।

তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা বলছে, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণীদের তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যৌন হয়রানির শিকার হন। এসব তরুণীরা বাসে চলাচলের সময় সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ থাকেন। এ ছাড়া ৪৩ শতাংশ তরুণী অনলাইনে বিড়ম্বনায় পড়েন এবং ৭০ শতাংশ শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হন।

দেশের বিভিন্ন জেলার ১ হাজার ১৪ জন তরুণীর অংশগ্রহণে ওই গবেষণা পরিচালনা করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। ‘তরুণীদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা জরিপটি আজ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশের কথা রয়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন, তাঁরা বিকৃত যৌন-ইচ্ছার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েছেন ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। যৌন হয়রানির মধ্যে আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হন ৬৪ দশমিক ৯২ শতাংশ তরুণী। তাঁদের মধ্যে ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ তরুণী একা চলার সময়ে এই ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।

এমনকি শৈশবেও যৌন নিগ্রহ থেকে রেহাই পাননি এসব তরুণী। ৩৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ তরুণীই শৈশবে যৌন নিগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এসব তরুণীর এক-তৃতীয়াংশের বেশিই আত্মীয়স্বজনের দ্বারা যৌন নিগ্রহমূলক আচরণের শিকার হন। তাঁরা আরও জানান, শৈশবের এসব বাজে অভিজ্ঞতা তাঁদের মনে সবার প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম দেয় এবং বড় একটা অংশের মধ্যেই পুরুষবিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টি হয়।

যৌন হয়রানির পাশাপাশি বডি শেমিংও বড় প্রভাব ফেলে তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যে। গবেষণার তথ্য বলছে, ৬৯ দশমিক ৯২ শতাংশ তরুণী শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ২৪ শতাংশকে আত্মীয়রাই কথায় ও ইঙ্গিতে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। বন্ধুবান্ধবের কাছে বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন ২২ শতাংশ।

শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও বিভিন্ন প্রয়োজনে নারীরা গণপরিবহন ব্যবহার করে থাকেন। ৪৫ দশমিক ২৭ শতাংশ তরুণী গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন।

এ ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ নিজেদের অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও পরিবার থেকে বিয়ের চাপের সম্মুখীন হন। কম বয়সী মেয়েদের ভালো বর হয়, এমন ধারণার কারণে ৮৬ জনের ওপর পারিবারিকভাবে বিয়ের চাপ আসে। এ ছাড়া ২২ দশমিক ২৯ শতাংশের মতামত তাঁর পরিবারে গুরুত্ব দেয় না। তাঁদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ২৫ শতাংশ তরুণী মনে করেন, শুধুমাত্র নারী হওয়ার দরুন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

নারীদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য সুনিশ্চিতকরণে আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তরুণীদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিতে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গণপরিবহন ও তার স্টপেজগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ ৮ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

নারীদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট তাঁদের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবার প্রতিষ্ঠিত নারীদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখনো যথাযথভাবে প্রস্তুত নয়। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাঁদের পর্যাপ্ত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।’

নারীর ক্ষমতায়নের যুগে নারীদের এমন আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপট বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ‘সমাজের একটি অংশ হিসেবে নারীদের যতটুকু সম্মান বা মর্যাদা পাওয়া উচিত, সেটা আধুনিক সময়ে এসেও আমাদের সমাজে এখনো নেই। ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়, এ জন্য প্রতিটি স্তরের নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত