Ajker Patrika

বড়ালের উৎসমুখে পানি নেই

সনি আজাদ, চারঘাট 
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ২২
বড়ালের উৎসমুখে পানি নেই

খরস্রোতা নদী বড়াল যৌবনের চিহ্ন হারিয়েছে অনেক আগে। তবে এবার কার্তিক মাসেই বড়ালের উৎপত্তিস্থল পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

গত শনিবার সরেজমিন বড়ালের উৎসমুখে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদী থেকে বড়ালে কোনো পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। উৎসমুখে বালুচর জেগে পদ্মার সঙ্গে বড়ালের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা উৎসমুখে বড়ালের দুই পাড় সমান করে গম, আখ, মসুরসহ যাবতীয় রবিশস্য বপন শুরু করেছে। তাতে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি সংকটে বড়ালের সঙ্গে সংযুক্ত খাল-বিল ও সেচকাজে পানি সংকট দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বড়াল পদ্মার শাখা নদী। রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে বড়ালের উৎপত্তি। আঁকাবাঁকা পথে চারঘাট, বাঘা, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম উপজেলার মধ্য দিয়ে পাবনা পেরিয়ে সিরাজগঞ্জে যমুনায় মিলিত হয়েছে।

জানা যায়, কয়েক যুগ আগেও বড়ালের যৌবন ছিল। এ নদী বর্ষা মৌসুমে বন্যায় কানায় কানায় পূর্ণ হতো। প্রখর স্রোত ছিল। কোনো কোনো সময় দুই কূল বন্যায় প্লাবিত হয়ে পলিমিশ্রিত পানি বিভিন্ন মাঠে প্রবেশ করত। কৃষকেরা পলিমিশ্রিত উর্বর জমিতে দ্বিগুণ ফসল ফলাত। সারা বছর জেলেরা নদীতে ছোট-বড় মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাত।

সেই দিনগুলো ক্ষীণ হয়ে আসে ১৯৮০ সালের দিকে। স্লুইস গেট দেওয়ার পর বড়াল তার খরস্রোতা রূপ হারায়। আর এখন দখলে বড়াল হয়ে উঠেছে সরু নালা। ২০১০ সালে নদী খননের নামে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেওয়া ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প কোনো কাজে আসেনি। নদী খনন করে সেই বালু নদীতে স্তূপ করে রাখার কারণে বন্যার পানিতে তা আবার নদীতে চলে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বড়ালে পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বড়াল নদীকে ঘিরে গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ‘নাটোরের নারদ ও মুসা খান (আংশিক) নদী ও রাজশাহীর চারঘাটের রেগুলেটরের ইনটেক চ্যানেল খনন’ নামের ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রায় ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদীখনন ও প্রবেশমুখে খনন করতে এই অর্থ ব্যয় করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারঘাট বড়াল নদীর ইনটেক চ্যানেল খননকাজ শেষ হয়। ইনটেক চ্যানেল খননকাজ হলেও বড়ালের সুদিন আর ফেরেনি। এবার কার্তিক মাসেই বড়ালের উৎসমুখ পানিশূন্য হয়ে গেছে।

স্থানীয় জেলে কমিটির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন জানান, বড়াল নদীর আশপাশে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁরা নদী দখল করে সেখানে ধান, গম, মসুর, আখসহ বিভিন্ন শস্য চাষ করেন। প্রভাবশালীরাও আছেন এই তালিকায়। ফলে মূল পদ্মা থেকে পানি যাতে বড়ালে আসতে না পারে, সে জন্য মাটি ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।

চারঘাট বড়াল নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা জানান, বিভিন্ন স্থানে স্লুইস গেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে বড়াল নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। বিভিন্নভাবে দখল আর দূষণে এবার শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই বড়ালের উৎসমুখ পানিশূন্য হয়েছে। এতে বড়াল নদী বিলীন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বড়াল নদী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেসুর রহমান বলেন, বড়াল নদী পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে সে অনুযায়ী বড়াল নদীতে পানিপ্রবাহের কার্যক্রম নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সেনাসদস্যের বাড়িতে হামলা-আগুন দেওয়ার অভিযোগ

ফেসবুকে কমেন্টের জেরে বাড়িতে গিয়ে হুমকি, পরদিন ঢাবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ

সরকারি অফিসে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ, নারীসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ অধিনায়কের হাতে যে কারণে ‘তামিম নিখোঁজ’ প্ল্যাকার্ড

ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক: লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত