Ajker Patrika

আমড়া লবণ দ্রুত যাবে ঢাকায়

মো. আ. রহিম রেজা, ঝালকাঠি
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১২: ১২
আমড়া লবণ দ্রুত যাবে ঢাকায়

আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবরে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির মানুষ বেজায় খুশি। নতুন আশার আলো দেখছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর ঝালকাঠির বিসিক শিল্পনগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি পেয়ারা, আমড়া, শীতলপাটি, আটা-ময়দা ও লবণ সহজে ও দ্রুত যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এতে যেমন খুশি কৃষক, তেমনি ব্যবসায়ীরাও।

ইতিমধ্যে জেলার নদী ও সড়ক যোগাযোগের সুবিধাজনক স্থানে অনেক শিল্প উদ্যোক্তাই জমি কিনতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া ঝালকাঠি থেকে ঢাকা অনেক কম সময়ে পৌঁছানো যাবে।

জানা যায়, পেয়ারা-আমড়া এত দিন নদীপথেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে আসছিল। ঢাকাসহ অন্য জেলা থেকে বেশির ভাগ পণ্যও আসত নদীপথেই। সময় নষ্ট, ফেরিতে আটকা পড়া, পণ্য পচে যাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল দীর্ঘ সময়ের। কিন্তু পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে সব প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটবে বলে জেলাবাসীর মুখে এখন হাসি।

ডুমরিয়া গ্রামের আমড়াচাষি সুনীল হালদার বলেন, এ অঞ্চলে পেয়ারার সঙ্গে কৃষকেরা আমড়া, লেবু, কলাসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করে থাকেন। সবজি ঝালকাঠিতে স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয়ে গেলেও আমড়া, লেবু, কলা এবং ডাব চালান হয় ঢাকায়। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব চাষের সঙ্গে জড়িতরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। চাষিদের সঙ্গে লাভবান হবেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ডহরশংকর গ্রামের অসিম চন্দ্র দে (৩৭) বলেন, ‘শীতলপাটি তৈরি করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে কোনো রকমের সংসার চলে আমাদের। এখন পদ্মা সেতু হলে নিজেরাই ঢাকায় নিয়ে বড় বাজারে ও দোকানগুলোতে বিক্রি করতে পারব। সকালে পণ্য নিয়ে ঢাকায় গিয়ে বিক্রি করে রাতেই বাড়িতে ফিরে আসতে পারব।’

ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মু. মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ঝালকাঠি জেলার ব্যবসায়ীদের জন্য পদ্মা সেতু একটি মহা আশীর্বাদ। সেতু চালু হওয়ার কারণে ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের দূরত্ব কমবে ৯০ কিলোমিটার। সময় কমবে কয়েক ঘণ্টা। ঝালকাঠির ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে লবণ, রড, সিমেন্ট ও টিন ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন সবচেয়ে বেশি। ঝালকাঠিতে এক সময় ৪০টি লবণের কারখানা ছিল। যার মধ্যে বর্তমানে ১০-১২টি চালু আছে। পদ্মা সেতুর প্রভাবে বন্ধ হওয়া লবণ কারখানাগুলো চালু হলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।

ঝালকাঠির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালাহউদ্দিন আহম্মেদ সালেক বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের জেলায় শিল্পকারখানা বেড়ে যাবে। উদ্যোক্তাও বাড়বে। আগে ঢাকায় গিয়ে এখানকার মানুষ চাকরি করতেন, এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঝালকাঠিতে চাকরি করতে আসবেন।’

ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, ‘এক সময় ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হতো। পদ্মা সেতু চালু হলে পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। আবারও ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধি লাভ করবে ঝালকাঠি। মানুষের আয়ের বিভিন্ন পথ সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব কমে আসবে। বেশি বেশি উন্নয়ন হবে।’

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। ঝালকাঠি থেকে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারব। এটা মানুষের দীর্ঘ দিনের একটি স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হতে চলছে। এর ফলে এলাকার কৃষি পণ্য সহজেই ঢাকায় পৌঁছে যাবে। শিল্পকলকারখানা বেড়ে যাবে। সব শ্রেণির মানুষের উপকার হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত