রাশেদ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ থেকে
না, কোনো অঘটন ঘটেনি, হয়নি পরিবর্তন। আবারও নারায়ণগঞ্জবাসী মেয়র হিসেবে বেছে নিলেন পরীক্ষিত সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। ‘চাচা’ তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি নৌকায় উঠতে গিয়ে ডুবে গেছে। ডুবে গেছে তাঁর পরিবর্তনের আশা। অন্যদিকে লিখিত, অলিখিত, দৃশ্যমান, অদৃশ্য–সব যুদ্ধেই বিজয়ী ‘চুনকার বেটি’। শঙ্কা, অভিযোগ-অনুযোগ সব ছাপিয়ে আবারও জয়, মেয়র পদে জিতলেন আইভী।
বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে, ১৯২টি কেন্দ্রে গণনা শেষে আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট, আর তৈমুর পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট। সব মিলিয়ে হাতি মার্কার বিরুদ্ধে ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোটের ব্যবধানে জিতেছে নৌকা। ২০১১ সালে নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে নাসিকের মেয়রের পদে প্রথম জিতেছিলেন আইভী।
গতকাল রাত ৮টার আগেই বেসরকারি সূত্র থেকে ফলাফল নিশ্চিত হয়, আইভী জিতছেন। তাই যত বেশি কেন্দ্রের ফল আসতে থাকে, ততই আনন্দ ঝিলিক দিতে থাকে চুনকা কুটিরে। অন্যদিকে সন্ধ্যার আগেই ফিকে হয়ে যায় তৈমুরের বাড়ির আলো। ১৯২ কেন্দ্রের ফল আসার আগেই উৎসব শুরু হয় নৌকা শিবিরে। মিছিল নিয়ে দেওভোগের দিকে এগোতে থাকেন সমর্থকেরা।
গণনার শুরু থেকেই প্রার্থী কখনো পিছিয়ে না পড়ায় সমর্থকেরা ছিলেন বেশ খোশমেজাজে। বিজয় নিশ্চিত হতেই উৎফুল্ল সমর্থকদের পাশে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শহরের মানুষ আমাকে বিমুখ করেনি। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি সবাইকে নিয়ে নগর গড়তে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোট কাস্টিং আরও বেশি হলে ১ লাখের ব্যবধান পূরণ হতো। ইভিএমে প্রথম ভোটে কাস্টিং কম হয়েছে।’
বেসরকারি ফলাফলে তৈমুর বুঝতে পারেন, এ লড়াইয়ে তিনি ‘চুনকার বেটি’র কাছে হারছেন। পরে তিনি এই পরাজয়ের জন্য ইভিএম কারচুপি, ইন্টারনেটের জটিলতা, ভোটের আগে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি কারণকে দায়ী করেন। রাতে প্রেস ব্রিফিং করে এসব অভিযোগ করলেও দিনে তিনি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
গতকাল গোটা দেশের নজর ছিল রাজধানী লাগোয়া আলোচিত জনপদ নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। কী হবে—আইভী কি ধরে রাখবেন নিজের সাম্রাজ্য, নাকি ‘ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ’ নিয়ে তৈমুর পাল্টে দেবেন ইতিহাস? সব মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে আগে থেকেই নানা শঙ্কা ছিল; বিশেষ করে কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী ভোটের দিন সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের আশঙ্কা করছিলেন। ফলে ইতিহাস ছাপিয়ে স্থানীয় ভূগোল হয়ে ওঠে মুখ্য। দিনে দিনে সহিংসতা, বহিরাগত, ধরপাকড়—এই শব্দগুলো হয়ে উঠেছিল নাসিক নির্বাচনের সমার্থক। কিন্তু একসময়ের চেনা সেই সন্ত্রাসের জনপদে, এবার হলো অচেনা নির্বাচন। শান্ত, নিরিবিলি, সংঘাতহীন, আনন্দমুখর ভোটের দিন পার করল নারায়ণগঞ্জ। এরই সঙ্গে দীর্ঘদিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য বজায় রাখল এই নগর। গতকাল সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ডে। বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে বলা হয়, নাসিক নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। সামগ্রিকভাবে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে বলেও মনে করছে কমিশন। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ কথা বলেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে গতকালের ভোটের আসরে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। কয়েকটি জায়গায় অকারণ ভিড়ে লাঠিপেটা করেছে তারা। নিউ চাষাঢ়া এলাকার আদর্শ স্কুলের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না।’ এদিন প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ জন পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ১২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন ছিলেন। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহল ছিল নিয়মিত বিরতিতে।
[এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রেজা করিম, মারুফ কিবরিয়া, তানিম আহমেদ, আল-আমিন রাজু, সাখাওয়াত ফাহাদ, সাবিত আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম তনয়]
আরও পড়ুন:
না, কোনো অঘটন ঘটেনি, হয়নি পরিবর্তন। আবারও নারায়ণগঞ্জবাসী মেয়র হিসেবে বেছে নিলেন পরীক্ষিত সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। ‘চাচা’ তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি নৌকায় উঠতে গিয়ে ডুবে গেছে। ডুবে গেছে তাঁর পরিবর্তনের আশা। অন্যদিকে লিখিত, অলিখিত, দৃশ্যমান, অদৃশ্য–সব যুদ্ধেই বিজয়ী ‘চুনকার বেটি’। শঙ্কা, অভিযোগ-অনুযোগ সব ছাপিয়ে আবারও জয়, মেয়র পদে জিতলেন আইভী।
বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে, ১৯২টি কেন্দ্রে গণনা শেষে আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট, আর তৈমুর পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট। সব মিলিয়ে হাতি মার্কার বিরুদ্ধে ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোটের ব্যবধানে জিতেছে নৌকা। ২০১১ সালে নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে নাসিকের মেয়রের পদে প্রথম জিতেছিলেন আইভী।
গতকাল রাত ৮টার আগেই বেসরকারি সূত্র থেকে ফলাফল নিশ্চিত হয়, আইভী জিতছেন। তাই যত বেশি কেন্দ্রের ফল আসতে থাকে, ততই আনন্দ ঝিলিক দিতে থাকে চুনকা কুটিরে। অন্যদিকে সন্ধ্যার আগেই ফিকে হয়ে যায় তৈমুরের বাড়ির আলো। ১৯২ কেন্দ্রের ফল আসার আগেই উৎসব শুরু হয় নৌকা শিবিরে। মিছিল নিয়ে দেওভোগের দিকে এগোতে থাকেন সমর্থকেরা।
গণনার শুরু থেকেই প্রার্থী কখনো পিছিয়ে না পড়ায় সমর্থকেরা ছিলেন বেশ খোশমেজাজে। বিজয় নিশ্চিত হতেই উৎফুল্ল সমর্থকদের পাশে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শহরের মানুষ আমাকে বিমুখ করেনি। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি সবাইকে নিয়ে নগর গড়তে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোট কাস্টিং আরও বেশি হলে ১ লাখের ব্যবধান পূরণ হতো। ইভিএমে প্রথম ভোটে কাস্টিং কম হয়েছে।’
বেসরকারি ফলাফলে তৈমুর বুঝতে পারেন, এ লড়াইয়ে তিনি ‘চুনকার বেটি’র কাছে হারছেন। পরে তিনি এই পরাজয়ের জন্য ইভিএম কারচুপি, ইন্টারনেটের জটিলতা, ভোটের আগে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি কারণকে দায়ী করেন। রাতে প্রেস ব্রিফিং করে এসব অভিযোগ করলেও দিনে তিনি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
গতকাল গোটা দেশের নজর ছিল রাজধানী লাগোয়া আলোচিত জনপদ নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। কী হবে—আইভী কি ধরে রাখবেন নিজের সাম্রাজ্য, নাকি ‘ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ’ নিয়ে তৈমুর পাল্টে দেবেন ইতিহাস? সব মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে আগে থেকেই নানা শঙ্কা ছিল; বিশেষ করে কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী ভোটের দিন সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের আশঙ্কা করছিলেন। ফলে ইতিহাস ছাপিয়ে স্থানীয় ভূগোল হয়ে ওঠে মুখ্য। দিনে দিনে সহিংসতা, বহিরাগত, ধরপাকড়—এই শব্দগুলো হয়ে উঠেছিল নাসিক নির্বাচনের সমার্থক। কিন্তু একসময়ের চেনা সেই সন্ত্রাসের জনপদে, এবার হলো অচেনা নির্বাচন। শান্ত, নিরিবিলি, সংঘাতহীন, আনন্দমুখর ভোটের দিন পার করল নারায়ণগঞ্জ। এরই সঙ্গে দীর্ঘদিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য বজায় রাখল এই নগর। গতকাল সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ডে। বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে বলা হয়, নাসিক নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। সামগ্রিকভাবে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে বলেও মনে করছে কমিশন। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ কথা বলেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে গতকালের ভোটের আসরে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। কয়েকটি জায়গায় অকারণ ভিড়ে লাঠিপেটা করেছে তারা। নিউ চাষাঢ়া এলাকার আদর্শ স্কুলের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না।’ এদিন প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ জন পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ১২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন ছিলেন। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহল ছিল নিয়মিত বিরতিতে।
[এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রেজা করিম, মারুফ কিবরিয়া, তানিম আহমেদ, আল-আমিন রাজু, সাখাওয়াত ফাহাদ, সাবিত আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম তনয়]
আরও পড়ুন:
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪