Ajker Patrika

১১ বছরেও হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় মেলেনি

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
Thumbnail image

কক্সবাজারের রামু বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় ১১ বছরেও মেলেনি। ১৮ মামলার একটিরও বিচারকাজ শেষ হয়নি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিতে না আসা এবং মামলার তদন্তে ত্রুটি থাকার কারণে বিচারকাজে দেরি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রামু সদরের এক বৌদ্ধ যুবক পবিত্র কোরআন অবমাননা করেছেন, এমন গুজবের জের ধরে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধপল্লির ২৬টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হামলা চালানো হয়। পরদিন উখিয়া ও টেকনাফের আরও সাতটি বৌদ্ধবিহার পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়। এতে ৩৭৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে আসামি করা হয়। পরে আপসে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। হলেও ১৮ মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। 

রামুর বাসিন্দা সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী সুনীল বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই ঘটনায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি মামলার বাদী হননি। মামলাও করেছে পুলিশ, তদন্তও করেছে পুলিশ। এতে তারা ইচ্ছেমতো আসামি করেছে এবং অভিযোগপত্র থেকে বাদও দিয়েছে। ফলে মামলার তদন্তে ত্রুটি থেকে গেছে।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলোচিত ওই হামলার ১১ বছর পার হলেও ১৮টি মামলার একটিরও বিচারকাজ শেষ হয়নি।

রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বলেন, ‘রামুর ধর্মীয় সম্প্রীতি শত বছরের। এই সম্প্রীতিতে যারা আঘাত হেনেছিল তারা সফল হয়নি। যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, ১১ বছরে আমরা সবাই মিলে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। তবে দুঃখের বিষয় হলো, এ হামলার ১১ বছরেও জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।’

মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, ১৮টি মামলার মধ্যে দুটি সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে। তিনটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। এতে মামলার বিচারিক কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে। সরকারি এই কৌঁসুলি বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তিতে ব্যক্তিগতভাবেও আমি অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সাড়া কম।’

সেই যুবকের খোঁজ নেই: রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপি গ্রামের উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে বৌদ্ধবিহার ও পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১১ বছর পার হলেও উত্তম কোথায় আছেন তা পরিবার বা এলাকাবাসী কেউ জানেন না।

উত্তমের বাবা সুদত্ত বড়ুয়া ও মা মাধু বড়ুয়া বলেন, ঘটনার পর থেকে উত্তম কোথায় আছেন তা তাঁরা জানেন না। অপেক্ষায় আছেন ছেলে একদিন ফিরে আসবেন। উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়ুয়া ও ছেলে আদিত্য বড়ুয়াও তাঁর ফেরার অপেক্ষায়।

এদিকে গতকাল শুক্রবার রামু ট্র্যাজেডির দ্রুত বিচারের দাবিতে রামু লালচিং-সাদাচিং-মৈত্রীবিহার প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ। এ সময় বৌদ্ধ নেতা ও ইউপি সদস্য স্বপন বড়ুয়া, রাজেন্দ্র বড়ুয়া, বিপুল বড়ুয়া আব্বু, অর্ক বড়ুয়া, জিৎময় বড়ুয়াসহ অনেকে বক্তব্য দেন।

বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল এই রামু। কিন্তু ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক রাতেই পুড়ে গেছে আমাদের হাজার বছরের গর্বের ধন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পরপর সরকার ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার ও বসতঘর পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছে। সময়ের ব্যবধানে এবং সরকারের প্রচেষ্টায় বৌদ্ধ সম্প্রদায় সেই হারানো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বর্তমানে অনেকটা ফিরে পেয়েছেও। কিন্তু সেই ঘটনার ১৮টি মামলার একটিরও বিচারকাজ শেষ হয়নি। এটাই আমাদের জন্য আশঙ্কার বিষয়। কারণ অপরাধীর শাস্তি না হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকে যায়।’

এর আগে দিনটি উপলক্ষে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, ধর্ম সভায় দেশ-জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত