Ajker Patrika

সয়াবিনের বাজারে নৈরাজ্য

বরিশাল প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১১: ২১
সয়াবিনের বাজারে নৈরাজ্য

বরিশালের সয়াবিন তেলের বাজারে নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়েছে। নানা দরে তেল বিক্রি হচ্ছে বাজারগুলোতে। বাণিজ্যিক এলাকা বাজার রোডে গত কয়েক দিন বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। বোতলজাত ওই সয়াবিন তেল ভেঙে এখন অলিগলিতে প্রতি লিটার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি চলছে। খোলা সয়াবিন তেল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকা দরে। যদিও সরকারি নির্দেশ মতে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা। তদারকি না থাকায় আকস্মিক তেলের এমন উচ্চ মূল্যে নগরবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন ও দল একের পর এক কর্মসূচিতে সোচ্চার হচ্ছে।

গত বুধবার রাতে বাজার রোডের একাধিক দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোতলজাত সয়াবিন তেল তাঁরা বিক্রি করছেন না। অধিকাংশ দোকানি সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন বোতলজাত তেল নেই। আর খোলা তেল প্রতি লিটার বিক্রি চলছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা দরে। কেন তেল নাই এ বিষয়টি খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, বোতলজাত তেল আর খোলা তেলের দামে পার্থক্য থাকায় বোতলজাত তেল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেগুলোই ভেঙে খোলা হয়েছে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও দাম চড়া।

বাজার রোডের পাইকারি দোকান বিশ্বনাথ ঘোষের কর্মচারী জানান, সয়াবিন তেল বোতলে নেই, খোলা আছে। একই কথা জানিয়েছে আশপাশের সব দোকান থেকে।

অবশ্য বাজার রোডে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকান থেকে গোপনে ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ৯০০ টাকা দরে বিক্রি করছে ক্রেতাদের কাছে। সেখানকার একাধিক দোকানদার এমন তথ্য স্বীকারও করেছেন।

এদিকে নগরীর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলও ২০০ টাকা লিটারে বিক্রি চলছে। বটতলাবাজার, চৌমাথা বাজারে এ দৃশ্য দেখা গেছে। চৌমাথা বাজারে তেল কিনতে আসা সরকারি কর্মচারী ইয়াছিন হাওলাদার জানান, সয়াবিন তেলের দাম আসলে যে কত তা কেউ বলতে পারছেন না। যে যা পারেন তাতেই বিক্রি করছেন। এ নিয়ে বাজারে তদারকি না থাকায় জনসাধারণ ঠকছেন।

জানতে চাইলে বরিশাল জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সাহ সোয়াইব মিয়া জানান, বরিশালে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তাঁদের তদারকি অব্যাহত আছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৬৮ টাকা। এর বেশি কারও কাছ থেকে নেওয়া হলে, যদিও ওই ব্যক্তি লিখিত দেন, তাহলে ব্যবস্থা নেবেন। নগরীতে সম্প্রতি কোনো মনিটরিং করেছেন কি না এ প্রসঙ্গে বলেন, শুক্রবার থেকে বাজারে বাজারে কার্যক্রম চালাবেন।

তেলের দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায় গত এক সপ্তাহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল নগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। গত ১ ও ২ মার্চ বিএনপি নগরে তেলসহ দ্রব্যমূল্য বাড়ায় বিক্ষোভ করেছে। একই দাবিতে ১ মার্চ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও ২ মার্চ গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল নগরে বিক্ষোভ ও মিছিল সমাবেশ করেছে।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে জেলা প্রশাসন তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা দেখবেন। কিন্তু তেমন কোনো মনিটরিং না থাকায় নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। টিসিবির ট্রাকে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের লাইন বাড়ছে। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে মানুষের সমর্থনও বাড়ছে। পাইকারি ও খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ জন্য জরুরি বাজারমুখী মনিটরিং দরকার।

এদিকে গরিবের টিসিবি পণ্য নিতেও বিধিনিষেধ আসছে। টিসিবি সম্প্রতি ১১০ টাকা প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করত। তবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দারের সভাপতিত্বে জানানো হয়েছে শিগগিরই টিসিবি পণ্য দেওয়া হবে কার্ডের মাধ্যমে। নগরে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এ কার্ড সরবরাহ করা হবে। নগরের ফড়িয়াপট্টির রানা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও টিসিবি ডিলার মাসুদ রানা বলেন, কার্ড দিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেবে। সবাই তো কাউন্সিলরের কাছে কার্ড চাইতে যাবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত