Ajker Patrika

গল্পেরই শুধু দাম বাড়েনি

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২২, ০৮: ৫৩
গল্পেরই শুধু দাম বাড়েনি

একটি কৌতূহল নিয়ে কয়েকজন চিত্রনাট্যকারকে ফোন করা হলো গত কয়েক দিনে। বাজারদরের সঙ্গে মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে গত কয়েক বছরে সবারই তো কমবেশি পারিশ্রমিক বেড়েছে, সেই তুলনায় কতটা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন চিত্রনাট্যকারেরা? বৃন্দাবন দাস, যিনি দুই যুগের বেশি সময় ধরে নাটকের গল্প লিখছেন, তিনি জানালেন, সম্মানী তো বাড়েইনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। একটা একক বা ধারাবাহিক নাটক লিখে ১০ বছর আগেও যে পারিশ্রমিক পেতেন তিনি, এখনো সেটাই পান। বৃন্দাবন দাস বললেন, ‘কদর, সম্মান কিংবা সম্মানী কিছুই বাড়েনি। গল্প যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তো অনেকে স্বীকারই করতে চান না। অনেক সময় নাট্যকারের নামই থাকে না পোস্টারে।’

আবদুল্লাহ জহির বাবুএকই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন নাট্যকার শফিকুর রহমান শান্তনু। এক যুগের বেশি সময় ধরে নাটক লেখার সঙ্গে জড়িত তিনি। শুরুর দিকে যে পারিশ্রমিক পেতেন, এখনো সেটা কাছাকাছিই আছে। অন্য কলাকুশলীদের তুলনায় পারিশ্রমিক বৃদ্ধির পরিমাণ তাঁর ক্ষেত্রে খুব সামান্য। কয়েক মাস আগে একটি নাটক লিখেছিলেন শান্তনু। শুটিংও হয়েছে ভালোভাবে। এরপর যখন পোস্টার হাতে পেলেন, দেখলেন সেখানে নাট্যকারের নামই নেই! নির্মাতার কাছে কারণ জানতে চাইলে যে উত্তর এল, তাতে শান্তনু আরেকবার বিস্মিত হলেন।

 বৃন্দাবন দাসপ্রযোজক নাকি সেই নির্মাতাকে বলেছেন, পোস্টারে নাম দেখতে হলে নাট্যকারকে নিজেই বিকল্প পোস্টার বানিয়ে নিতে হবে! শান্তনু বলেন, ‘এটা আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা। একটা সিনেমা বা নাটক করতে গেলে তার যে প্রধান উপাদান সেটা সুন্দর গল্প। অথচ এখানে গল্পের ওপর জোর দেওয়া হয় না। একজন নির্মাতা হয়তো তাঁর কাজে জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নিলেন, ভালো টেকনিক্যাল টিম নিলেন; তারপর তিনি মনে করলেন, এটাই তাঁকে উতরে দেবে। কিন্তু একটা বিষয় বোঝা জরুরি, গল্প বা চিত্রনাট্য যদি ভালো না হয়, দিন শেষে ওটা দর্শক পছন্দ করবে না।’

পারিশ্রমিক নিয়ে দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে নাটক-সিনেমার গল্পে একধরনের শূন্যতার জায়গা তৈরি হয়েছে। আরও বেশি সংকট তৈরি হয়েছে নতুন চিত্রনাট্যকার গড়ে 
ওঠার ক্ষেত্রে। 

এ সময়ের আরেক জনপ্রিয় নাট্যকার ইফফাত আরেফিন তন্বী। অসংখ্য নাটকের পাশাপাশি কয়েকটি সিনেমাও তৈরি হয়েছে তাঁর গল্প ও চিত্রনাট্যে। অভিযোগের সুরে তন্বী জানালেন, পারিশ্রমিক কম, এ সমস্যা তো আছেই। উপরন্তু একটা প্রজেক্টে চিত্রনাট্যকার সবার আগে কাজ শুরু করলেও তাঁকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় সবার শেষে। তন্বী বলেন, ‘পেশাদার ব্যাপারটা আমাদের এখানে এখনো গড়ে ওঠেনি, যতই আমরা ওটিটির দিকে যাচ্ছি বা যতই ইন্ডাস্ট্রির পরিসর বাড়ুক না কেন। চিত্রনাট্যকারেরা যদি তাঁদের সম্মান ও সম্মানী ঠিকমতো পেতেন, তাহলে আরও ভালো কাজ উপহার দিতে পারতেন।’

ইফফাত আরেফিন তন্বীনব্বইয়ের দশকে সিনেমার গল্প লিখতে শুরু করেছিলেন আবদুল্লাহ জহির বাবু। এ পর্যন্ত লিখেছেন প্রায় ৩০০ সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য। তিনি জানালেন, ২০১০ সালের পর থেকে চিত্রনাট্যকারদের সম্মানী বাড়েনি। বাবু বলেন, ‘বাংলাদেশে সব সময় সবচেয়ে নিগৃহীত সেক্টর হলো রাইটার। এসব নিয়ে আমরা অনেকবারই প্রযোজকদের সঙ্গে বসার চেষ্টা করেছি। আসলে কী হয়, একজন প্রযোজক অভিনয়শিল্পীর ব্যাপারটা নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন, গল্পের বিষয়ে অত চিন্তিত নন। আর আমাদের দেশে কপিরাইটের ব্যাপারটা অত স্ট্রং না। কপিরাইটটা যদি স্ট্রংলি ডিল করা যেত, তাহলে আমরা চিত্রনাট্যকারেরা আরও বেশি সুবিধা পেতাম।’

শফিকুর রহমান শান্তনুপারিশ্রমিক নিয়ে এই দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে নাটক-সিনেমার গল্পে একধরনের শূন্যতার জায়গা তৈরি হয়েছে। আরও বেশি সংকট তৈরি হয়েছে নতুন চিত্রনাট্যকার গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। মাসুম রেজা, পান্থ শাহরিয়ার, মাসুম শাহরিয়ার, জাকির হোসেন উজ্জ্বল কিংবা মেজবাহ উদ্দিন সুমনের মতো নাট্যকারেরা, যাঁরা চিত্রনাট্য লেখাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন একসময়; বর্তমানে সে প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। এ সেক্টরে তেমন নতুন প্রতিভা উঠে আসছে না বলে মত বৃন্দাবন দাসের। তাঁর মতে, ‘অনেকে নাটক বানাচ্ছেন, পাশাপাশি লিখছেন—এটা হচ্ছে। কিন্তু শুধু লেখাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার হার অনেক কমে গেছে। যাঁরা একসময় নাটক-সিনেমার গল্প লিখতেন, তাঁরা অনেকেই এখন বিকল্প পেশার সন্ধান করছেন। এতে ক্ষতিটা ইন্ডাস্ট্রিরই হচ্ছে।’ এ ক্ষেত্রটিকে আরও গুরুত্ব ও সম্মানের চোখে দেখা উচিত বলে মনে করেন জনপ্রিয় এই নাট্যকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত