Ajker Patrika

শিশুশিক্ষার্থীর প্রাণহানির পরও হয়নি নতুন সেতু

মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, সুবর্ণচর (নোয়াখালী)
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১১: ২০
Thumbnail image

একটি ভাঙা সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে। বিকল্প পথ না থাকায় উপজেলার চরজুবলী ও চরজব্বার ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের মানুষকে সাত-আট বছর ধরে ওই সেতুটিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। পাংকার বাজার জালাল সারেং মসজিদ এলাকায় ভুলুয়া নদীর শাখা খালের ওপরের ভাঙা সেতুটি বর্ষাকালে ডুবে যায়। শুকনো মৌসুমে সেতুর ভাঙা অংশে বাঁশ ও কাঠ বেঁধে ঝুঁকি নিয়ে পার হন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ২০০১ সালে চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের অধীনে আট লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সাত-আট বছর আগে সেতুটি ভেঙে পড়ে। বর্ষাকালে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হলেও শুকনো মৌসুমে বাঁশ ও কাঠ বেঁধে সেতুটি পার হয় মানুষ। ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের।

গত বছরের ১৭ অক্টোবর সেতুটি পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে মারা যায় জাহিদ হাসান নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। উপজেলার মধ্যব্যাগ্যা গ্রামের মাসুদের ছেলে জাহিদ হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় সেতুটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জোরালো হয়; কিন্তু দুর্ঘটনার এক বছর পার হলেও সেতুটি রয়েছে আগের মতোই, দুর্ভোগ কমেনি মানুষের। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন; কিন্তু নিরুপায় স্থানীয়রা জোড়াতালি দিয়ে সেটি ব্যবহার করছেন।

উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের পশ্চিম চরজব্বার, উত্তর ব্যাগ্যা, সমিতির বাজার, চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যব্যাগ্যা ও একরামনগর গ্রাম এই সেতুটির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সেতু নির্মাণ হলে একরামনগর-পাংকার বাজার সড়কের সঙ্গে গ্রামগুলো সরাসরি সংযুক্ত হতো।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চরজব্বার ও চরজুবলী ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পাংকার বাজার হয়ে একরামনগর-আটকপালিয়া সড়ক দিয়ে জেলা সদর ও ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন। ভাঙা সেতুর কারণে যানবাহন নিয়ে ওই এলাকাগুলোতে যাওয়া যায় না। এ ছাড়া বর্ষাকালে সেতুটি ডুবে যায়। তখন শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় যাওয়া সম্ভব হয় না।

উত্তর ব্যাগ্যার বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, সেতুটি ভেঙে পড়ার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা, চাল ও ধান সংগ্রহ করে প্রায় লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। পরে এটি রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয়রা দেখাশোনা করলেও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মনোমালিন্যের কারণে এখন কেউ তদারকি করেন না।

পাংকার বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘১৫-২০ বছর ধরে আমরা নতুন সেতুর জন্য দাবি জানিয়ে আসছি; কিন্তু এখনো তা হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে করি না।’

মধ্যব্যাগ্যার কৃষক বজলুর রহমান বলেন, ভোট এলে সব দলের নেতাই প্রতিশ্রুতি দেন, বাঁশের সাঁকো আর থাকবে না। কষ্ট করতে হবে না। খালের ওপর কালভার্ট হবে; কিন্তু দল পাল্টায়, বাঁশের সাঁকো আর সেতু হয় না। ৫০ হাজার মানুষের দুঃখ-কষ্টও ঘোচে না।

চরজব্বার ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মঞ্জুর আলম বলেন, একে একে সব দপ্তরে ধরনা দিয়েও সেতুটি হয়নি। সেতু আর প্রশস্ত সড়ক না থাকায় গ্রামটিতে কোনো রিকশা-ভ্যান চলাচল করতে পারে না। এ কারণে উৎপাদিত পণ্যের পরিবহন আর রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল্ল্যাহ খসরু বলেন, সেতু না থাকায় ওই সড়কের সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ নেই। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহজালাল বলেন, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন ও কাগজপত্র পাঠিয়েছেন। অনুমোদন হলে সেতুটি নির্মাণ করা হবে।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত