রাশেদ খান মেনন
১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে স্বৈরাচারের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর কীভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটবে, এ নিয়ে একটা সংকট সব সময় ছিল। পরবর্তীকালে এরশাদের পতনের পর কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তা নিয়েও সংকট সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐকমত্য ছিল না। তখন এ কে খন্দকারকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করারও প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু তিনি এরশাদের সময়ে মন্ত্রী ছিলেন বলে আমরা তাতে মত দিইনি। পরবর্তীকালে আমাদের উদ্যোগে ছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা যায় কি না। তবে তিনি এ দায়িত্ব নেবেন কি না, আমরা তা তখনো জানতাম না। তখন ৫ দলের প্রধান হিসেবে অন্যদের নিয়ে আমরা (আমি, হায়দার আকবর খান রনো ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম) বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে যাই। তখন তিনি ফের বিচার অঙ্গনে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার শর্তে রাজি হতে পারেন বলে জানান। এটা তখন অস্বাভাবিক ছিল যে তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আবার কীভাবে স্বপদে ফেরত আসবেন। তখন স্থির হয় প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে তাঁর জন্য এই ব্যবস্থা করা যাবে।
সে হিসেবে যখন মওদুদ পদত্যাগ করলেন তখন সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে কার্যত সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন এবং সেই নির্বাচনে যারা বিজয়ী হন তাঁদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন। কিন্তু আবার সংকট শুরু হয় যখন সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রশ্নটি আসে। বিএনপি কোনোমতেই সংসদীয় পদ্ধতিতে উত্তরণের প্রশ্নে রাজি হচ্ছিল না।
তখন সংবিধান সংশোধনে বিশেষ একটি কমিটি হয়। আমরা বিরোধী দল থেকে সেখানে ছিলাম। সেখানে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত চলে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হচ্ছিল না। তখন সাহাবুদ্দীন আহমদ সংসদে একটা বক্তব্য দেন যে যদি এর সমাধানে আমরা উপনীত না হতে পারি তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন এবং নতুন সংকট শুরু হবে। তাঁর বক্তব্যের পর তখন বিএনপি রাজি হয়। তখন দ্বাদশ সংশোধনী সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এর ভিত্তিতে আজ পর্যন্ত যে সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থা সেই বিষয়টি এসেছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার গঠনের পদ্ধতি এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এসেছিল। পরে সংবিধানে সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি বিচারপতি পদে ফিরে গিয়েছিলেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কিন্তু থেকে যেতে পারতেন, কিন্তু তিনি থাকেননি। তাঁর শর্ত মেনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তিনি স্বপদে ফিরে গিয়েছিলেন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ও নির্মোহ মানসিকতার ছিলেন।
একটি সংকটের সময়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় নিজের স্বার্থ না দেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এই কাজটি করেছিলেন। এবং যে নির্বাচন হয়েছিল সেটা ছিল প্রশ্নাতীত নির্বাচন। সাহাবুদ্দীন আহমদ অত্যন্ত শক্তভাবে সেই নির্বাচন পরিচালনায় সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ’৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ক্ষমতায় আসার পর এই বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন। এমনকি সরকারের সঙ্গে তিনি দ্বিমত হয়েছেন। অনেক সময় তাঁর ভূমিকার জন্য সরকারের নতুন করে বিভিন্ন আইনকে সামনে আনতে হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রপতি ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। তিনি যে অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন, জাতি চিরদিন তা মনে রাখবে।
এটা দুর্ভাগ্য যে তিনি অনেকটা নীরবেই চলে গেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। পরবর্তী জীবনে তাঁর খুব একটা ভূমিকা ছিল না। কারণ, তাঁর সঙ্গে অনেকেরই মিল হয়নি। তাঁর মতো বীরোচিত লোককে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি।
লেখক: সভাপতি, ওয়ার্কার্স পার্টি
১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে স্বৈরাচারের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর কীভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটবে, এ নিয়ে একটা সংকট সব সময় ছিল। পরবর্তীকালে এরশাদের পতনের পর কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তা নিয়েও সংকট সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐকমত্য ছিল না। তখন এ কে খন্দকারকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করারও প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু তিনি এরশাদের সময়ে মন্ত্রী ছিলেন বলে আমরা তাতে মত দিইনি। পরবর্তীকালে আমাদের উদ্যোগে ছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা যায় কি না। তবে তিনি এ দায়িত্ব নেবেন কি না, আমরা তা তখনো জানতাম না। তখন ৫ দলের প্রধান হিসেবে অন্যদের নিয়ে আমরা (আমি, হায়দার আকবর খান রনো ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম) বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে যাই। তখন তিনি ফের বিচার অঙ্গনে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার শর্তে রাজি হতে পারেন বলে জানান। এটা তখন অস্বাভাবিক ছিল যে তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আবার কীভাবে স্বপদে ফেরত আসবেন। তখন স্থির হয় প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে তাঁর জন্য এই ব্যবস্থা করা যাবে।
সে হিসেবে যখন মওদুদ পদত্যাগ করলেন তখন সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে কার্যত সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন এবং সেই নির্বাচনে যারা বিজয়ী হন তাঁদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন। কিন্তু আবার সংকট শুরু হয় যখন সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রশ্নটি আসে। বিএনপি কোনোমতেই সংসদীয় পদ্ধতিতে উত্তরণের প্রশ্নে রাজি হচ্ছিল না।
তখন সংবিধান সংশোধনে বিশেষ একটি কমিটি হয়। আমরা বিরোধী দল থেকে সেখানে ছিলাম। সেখানে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত চলে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হচ্ছিল না। তখন সাহাবুদ্দীন আহমদ সংসদে একটা বক্তব্য দেন যে যদি এর সমাধানে আমরা উপনীত না হতে পারি তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন এবং নতুন সংকট শুরু হবে। তাঁর বক্তব্যের পর তখন বিএনপি রাজি হয়। তখন দ্বাদশ সংশোধনী সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এর ভিত্তিতে আজ পর্যন্ত যে সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থা সেই বিষয়টি এসেছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার গঠনের পদ্ধতি এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এসেছিল। পরে সংবিধানে সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি বিচারপতি পদে ফিরে গিয়েছিলেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কিন্তু থেকে যেতে পারতেন, কিন্তু তিনি থাকেননি। তাঁর শর্ত মেনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তিনি স্বপদে ফিরে গিয়েছিলেন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ও নির্মোহ মানসিকতার ছিলেন।
একটি সংকটের সময়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় নিজের স্বার্থ না দেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এই কাজটি করেছিলেন। এবং যে নির্বাচন হয়েছিল সেটা ছিল প্রশ্নাতীত নির্বাচন। সাহাবুদ্দীন আহমদ অত্যন্ত শক্তভাবে সেই নির্বাচন পরিচালনায় সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ’৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ক্ষমতায় আসার পর এই বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন। এমনকি সরকারের সঙ্গে তিনি দ্বিমত হয়েছেন। অনেক সময় তাঁর ভূমিকার জন্য সরকারের নতুন করে বিভিন্ন আইনকে সামনে আনতে হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রপতি ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। তিনি যে অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন, জাতি চিরদিন তা মনে রাখবে।
এটা দুর্ভাগ্য যে তিনি অনেকটা নীরবেই চলে গেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। পরবর্তী জীবনে তাঁর খুব একটা ভূমিকা ছিল না। কারণ, তাঁর সঙ্গে অনেকেরই মিল হয়নি। তাঁর মতো বীরোচিত লোককে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি।
লেখক: সভাপতি, ওয়ার্কার্স পার্টি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
৮ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪