Ajker Patrika

‘আগে বুঝলে সহায়তার জন্য হাত পাততাম না’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ০৯: ৫১
Thumbnail image

করোনাভাইরাস মহামারিকালে খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ায় সরকারি সহায়তা নম্বর ৩৩৩-এ ফোন দিয়েছিলেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (৬৫)। সেই একটি ফোনকল যে তাঁর জীবনে ঝড় বয়ে আনবে, তা ভাবতে পারেননি তিনি। ঘটনার এক বছর পর এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁর পরিবারকে।

গত বছরের ২০ মে জাতীয় ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্যসহায়তা চান সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের নাগবাড়ি এলাকার ফরিদ উদ্দিন। খাদ্যসহায়তা করতে গিয়ে তৎকালীন ইউএনও আরিফা জহুরা ফরিদ উদ্দিনের চারতলা বাড়ি দেখতে পেয়ে জরিমানা করেন। ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে অযথা হয়রানি করার দায়ে শাস্তি হিসেবে দুই দিনের মধ্যে ১০০ গরিব লোককে খাদ্যসহায়তার নির্দেশ দেন। ইউএনওর এমন নির্দেশে ফরিদ সেই রাতেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে এবং ধার-দেনা করে ৬৫ হাজার টাকার ত্রাণসহায়তা তুলে দেন ইউএনওর কাছে।

এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে সর্বত্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা ত্রাণের সমমূল্যের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হয় ফরিদ উদ্দিনকে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নির্দোষ প্রমাণিত হন ইউএনও আরিফা জহুরা।

গতকাল শনিবার নাগবাড়ি এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয় ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের। অসমাপ্ত চারতলা ভবনের ছাদে টিনশেডের দুটি কক্ষে বসবাস করে ফরিদ উদ্দিনের পরিবার।

স্বামী, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ছোট একটি পরিবার। এর মধ্যে ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র ফরিদ উদ্দিন। বড় মেয়ে সরকারি মহিলা কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত। ছোট ছেলের নামে তিন মাস পরপর ২ হাজার ২০০ টাকার একটি সরকারি ভাতা আসে।

বাড়িতে পাওয়া যায়নি ফরিদ উদ্দিনকে। তিনি রয়েছেন সেই পুরোনো কর্মস্থলে। হোসিয়ারি কারখানায় কাটিংয়ের কাজ করেন এখনো। স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে ভারী কাজ করা সম্ভব হয় না তাঁর। সেখান থেকে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন। এই টাকা দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ চলে।

আলাপচারিতায় ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রী উম্মে কুলসুম (৫০) বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ ভালো রাখছেন। খেয়েপরে বেঁচে আছি।’

জরিমানার পর কী কী সহায়তা এসেছিল জানতে চাইলে কুলসুম বলেন, ‘ঢাকা থেকে এক ছাত্রনেতা (গোলাম রাব্বানী) আইসা সহায়তা করল। আর খন্দকার কাউন্সিলরের লোকজনও কিছু চাল-ডাল দিছিল। সব মিলায়া তিন মাসের খাবার হইছিল আমাদের।’

ওই ঘটনার পর কোনো আক্ষেপ বা ক্ষোভ আছে কি না জানতে চাইলে চোখ ভিজে আসে উম্মে কুলসুমের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার কারও প্রতি ক্ষোভ নাই। কপালে ছিল তাই হইছে। তয় আগে যদি জানতাম, ফোন দিলে এত কিছু হইবো, তাইলে সাহায্যের জন্য হাত পাততাম না। একটা ফোনে কত কিছু ঘইটা গেল।’

কর্মস্থল থেকে মুঠোফোনে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই ঘটনা নিয়ে আমাদের এখন আর ক্ষোভ বা আক্ষেপ নেই। তবে আমার ছেলেটা অচল, আমারও অনেক বয়স হয়েছে। একটু ভালো চাকরি বা আয়ের সুযোগ থাকলে ভালো হতো আমার জন্য। কেউ যদি স্বেচ্ছায় আমার উপকারে এগিয়ে আসেন, তাহলে কিছুটা উপকৃত হব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত