Ajker Patrika

আগামী নির্বাচনে ১৮০ আসনে সম্ভাবনা দেখছে আওয়ামী লীগ: জরিপ

তানিম আহমেদ, ঢাকা
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ১২
আগামী নির্বাচনে ১৮০ আসনে সম্ভাবনা দেখছে আওয়ামী লীগ: জরিপ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বিগত দুটি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া উতরে গেলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ দেখছে দলটি। বিষয়টি মাথায় রেখে ছক কষছে আওয়ামী লীগ। দেশব্যাপী ভোটারদের মধ্যে নৌকার গ্রহণযোগ্যতা কেমন, তা জানতে এরই মধ্যে দুই দফায় আসনভিত্তিক জরিপ করা হয়েছে। সেই জরিপের ভিত্তিতে ১৮০ থেকে ২০০ আসনে নৌকার অবস্থান ভালো বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে জরিপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুই দফা জরিপ হয়েছে। সেখানে আমরা দেখেছি, ১৮০ থেকে ২০০ আসনে আমাদের অবস্থান মোটামুটি ভালো। সেই আসনগুলোতে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আমরা মনোনয়ন দেব। বাকি আসনগুলোর প্রার্থীদের বলব, কে দাঁড়াবে দাঁড়াও। ওখানে জয়-পরাজয় নিয়ে আমাদের তেমন মাথাব্যথা থাকবে না।’

জানা গেছে, দলীয় সভাপতির নিজস্ব উইংয়ের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গোয়েন্দা সংস্থা এসব জরিপ করেছে। জরিপে ১৯৯১-২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে সিআরআইয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয় আজকের পত্রিকার। তাঁরা বলছেন, ‘আমরা ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে কিছু কাজ করেছি। সেখানে আমরা দেখেছি, ১৫০-এর বেশি আসনে আমাদের অবস্থান একেবারে ভালো। ৬০ থেকে ৭০ আসনে মার্জিনাল ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে বেশি আসনে আমরাই জিতেছি। অন্যদিকে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের অবস্থান নেতিবাচক রয়েছে।’

জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখে জরিপের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বৈঠকেও। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে এ বিষয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গণভবনে তৃণমূলের কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনায়ও এসব নিয়ে কথা বলেন তিনি।

এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে জানিয়ে দলের নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। এরই মধ্যে জরিপও করেছি। জরিপে যাদের অবস্থান ভালো এবং জয়ী হওয়ার মতো সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ ও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’

জরিপে দলের অবস্থান ভালো হলেও কিছু আসনে বর্তমান এমপিদের নামে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব এলাকায় বিতর্কিত এমপি আছে, তাদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের জনপ্রিয় এবং সাংগঠনিকভাবে দক্ষদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অতীত নির্বাচনের প্রার্থী দেখলে বোঝা যায়, এক-তৃতীয়াংশ পরিবর্তন হয়। এবার তার চেয়েও বাড়তে পারে। যার বদনাম আছে, তাকে প্রার্থী করা হবে না, এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, যাঁরা প্রার্থী হবেন তাঁরা যদি বর্তমান এমপি থাকেন, তাঁদের এলাকায় পারফরম্যান্স বিভিন্ন পয়েন্ট সিস্টেমে দেখা হবে। এলাকায় মানুষের সঙ্গে থাকেন কতটুকু, করোনার সময়, সম্মেলন এবং দলের কী কী ভূমিকা রেখেছিলেন, তা বিবেচনা করা হবে। এর মাধ্যমে যোগ্য এবং জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৪০ আসনে জয়লাভ করে বিএনপি এবং ৩০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ৮৮টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের আসনে বসে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালের সপ্তম নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৩৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ পেয়ে আওয়ামী লীগ ১৪৬ আসন এবং ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ ভোটে বিএনপি পেয়েছিল ১১৬ আসন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বিএনপি ১৯৩টি এবং ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৬২ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৫৯ আসনে বিজয়ী হয় এবং ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিএনপির ভাগ্যে জোটে ৩০ আসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত