Ajker Patrika

যন্ত্রণার নাম জয়দেবপুর ক্রসিং

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫২
যন্ত্রণার নাম জয়দেবপুর ক্রসিং

হোয়াংহো নদীকে বলা হতো চীনের দুঃখ। আর গাজীপুরের দুঃখ বলা হয় জয়দেবপুর বেলক্রসিংকে। এখানে সিগন্যাল দেওয়ার কারণে সৃষ্ট যানজটে অতিষ্ঠ গাজীপুর মহানগর তথা জেলাবাসী।

রেলক্রসিং এলাকায় নেই কোনো পদচারী-সেতু। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে পদচারী-সেতুর অভাবে দৈনিক প্রায় ৯ ঘণ্টা কর্মসময় যানজটে আটকে নষ্ট হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পোড়তে হয় গাজীপুরবাসীকে। এখানে মাত্র একটি পদচারী-সেতু নির্মিত হলে বদলে যাবে গাজীপুরের লাখো মানুষের জীবনযাত্রা। তাই দ্রুত পদচারী-সেতু নির্মাণের দাবি গাজীপুরবাসীর।

গাজীপুর জেলার সব কার্যক্রম রাজবাড়ীকেন্দ্রিক। জেলা সদর বলতে এ রাজবাড়ীকেই বোঝায়। এখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ সরকারি অফিস, আদালত, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন অবস্থিত। এ ছাড়া আশপাশেই অন্যান্য নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবস্থিত। আর এসব জায়গায় যেতে-আসতে পার হতে হয় জয়দেবপুর রেলক্রসিং।

প্রতিবার যদি গড়ে ৬ মিনিট রেলক্রসিং বন্ধ থাকে, তাহলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৯ ঘণ্টা যানজটের কবলে পড়তে হয়। সড়কটি দিনের শুরু থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যানবাহনে ঠাসা থাকে। তবে অফিস সময়ের শুরুতে ও বিকেলে ছুটির পর বিভিন্ন যানবাহন ও রিকশায় যানজট ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ সময় হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।

এ সড়কে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘রেলক্রসিংয়ের কারণে আমাদের সব সময় ১০ মিনিট করে যাত্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে আমাদের লস হয়। এতে আয়ও কমে যায়।’

কামরুন্নাহার নামের নামের এক রিকশাযাত্রী সন্তানকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সকালে ব্যস্ততার সময় ট্রেন আসা যাওয়া করে। ফলে সন্তানকে নিয়ে প্রায়ই সময়মতো বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারেন না তিনি।

জয়দেবপুর রেল জংশনের স্টেশনমাস্টার রেজাউল করিম জানান, অত্যন্ত ব্যস্ত এ জংশন দিয়ে প্রতিদিন ৭০টি শিডিউল ট্রেন ৮৬ বার আপ-ডাউন পথে যাতায়াত করে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ডেমু ট্রেন ও তুরাগ ট্রেন এখান দিয়ে ২ বার করে ৪ বার যাতায়াত করে। এ ছাড়া আর্মি স্পেশাল ট্রেন, মালবাহী ট্রেন, কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন এ জংশন হয়ে যাতায়াত করে।

রেজাউল করিম বলেন, প্রতিবার ট্রেন যাতায়াত করার জন্য দৈনিক প্রায় ১০০ বার জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে সিগন্যাল বার নামানো হয়। এতে সর্বনিম্ন ৫ মিনিট থেকে কখনো ১৫ মিনিট পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। ফলে এ সময় রেললাইনের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ রেললাইনটি দিয়ে প্রতিদিনই ৭০টি ট্রেন যাতায়াত করে। এ কারণে ৯ ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং একটি দুঃসহ যানজট সৃষ্টি হয়। এটি নিরসনের জন্য এখানে একটি পদচারী-সেতু দরকার। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি খুব শিগগিরই রেললাইনের ওপর একটি পদচারী-সেতু নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ‘জয়দেবপুর রেলওয়ে পদচারী-সেতু নির্মাণে আমরা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রস্তাবটি বর্তমানে একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হলে আমরা আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি গাজীপুরবাসীকে সুখবর দিতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...