Ajker Patrika

পড়ে স্কুলে, থাকে খায় কলেজে

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
পড়ে স্কুলে, থাকে খায় কলেজে

মো. আমান উল্লাহ একজন স্কুলশিক্ষার্থী। কিন্তু থাকে-খায় চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের হোস্টেলে। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রুহুল আমিন। তিনিও থাকেন ওই কলেজের হোস্টেলে।

এ রকম অর্ধশত শিক্ষার্থী আছেন, যাঁদের মধ্যে কেউ চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আবার কেউ চাকরিজীবী। নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রত্যেকের কাছ থেকে মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তাঁদের এই সুযোগ করে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শুধু এই অভিযোগ নয়, বন্ধের দিনে যখন কলেজে কেউ থাকেন না, তখন বিভিন্ন প্রকল্পের বই, গ্রন্থাগারের পুরোনো বই-খাতা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবহৃত খাতা, স্টিলের আলমারি, স্টিলের থাক, চেয়ার-টেবিল, রড, টিন, দরজা-জানালা, গ্রিল ও গেট ট্রাকে করে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে কলেজের অধ্যক্ষ এম নাছির উদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে।

২০১৯ সালে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এসব অনিয়ম করে আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সরেজমিনে হোস্টেলের নিবন্ধন খাতায় দেখা যায়, মো. আমান উল্লাহ আমান পড়ে খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ে। থাকে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের হোস্টেলে। একইভাবে রুহুল আমিনও টিচার্স ট্রেনিং কলেজে পড়েন না। তিনি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুই দিন খেয়ে ২০০ টাকা বিল দিয়েছেন। নিবন্ধন খাতায় হোস্টেলে অবস্থানের কারণ হিসেবে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করা হয়। তাঁদের মতো এম জাকির হোসেন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে এসে কলেজ থাকছেন, খাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রকম অর্ধশত মানুষ কলেজে থাকছেন, যাঁরা কেউ কলেজে পড়েন না।

মো. আমান উল্লাহ ও রুহুল আমিন টিচার্স ট্রেনিং কলেজে পড়েন না বলে আজকের পত্রিকাকে স্বীকার করেছেন। ওই হোস্টেলে টাকার বিনিময়ে খাচ্ছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। যদিও কলেজের অধ্যক্ষ এম নাছির উদ্দিন মজুমদার বহিরাগত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের প্রশাসনিক একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভের পর থেকে নাছির উদ্দিন মজুমদার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সরকারি নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ২০ লাখ টাকায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিভিন্ন সমাপ্ত প্রকল্পের বই, গ্রন্থাগারের পুরোনো বই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবহৃত খাতা, স্টিলের আলমারি, স্টিলের থাক, চেয়ার-টেবিল, রড ট্রাকে ভরে বাইরে বিক্রি করে দেন। ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কয়েক লাখ টাকার স্টিলের ফার্নিচার ও অন্যান্য মালামাল বিক্রি করে দেন।

জানা গেছে, সর্বশেষ চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর টিকিউআই-২ প্রকল্পের এক ট্রাক বই ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবহৃত খাতা বিক্রি করে দেন কলেজের অধ্যক্ষ। দীর্ঘদিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ফিজিক্যাল এডুকেশন কলেজের (বিপিএড কোর্স) ছাত্রদের এই কলেজের ছাত্রাবাসে ভাড়া দিয়ে আসছেন তিনি।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্নজনের কাছে সিট ভাড়া দেওয়ার এসব টাকার লেনদেন করেন কলেজের হিসাবরক্ষক ওমর ফারুক। তবে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ এম নাছির উদ্দিন মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনুরোধে বিভিন্ন প্রকল্পের লোকজন মাঝেমধ্যে কলেজের হোস্টেলে থাকেন, খান। এর বাইরে অন্য কেউ থাকেন না। এ ছাড়া কলেজের মালামাল সরকারি নিয়ম মেনে বিক্রি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত