Ajker Patrika

একজন প্রধান শিক্ষকের বাড়াবাড়ি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০৭: ১৮
একজন প্রধান শিক্ষকের বাড়াবাড়ি

ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকছে। বিশ্বাস করতে মন চায় না, বিশ্বাস না করেও উপায় নেই। একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একজন সহকারী শিক্ষককে বিয়ে করার জন্য নোটিশ জারি করেছেন।  মৌখিকভাবে এ-ও বলেছেন, ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে না করলে ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করবেন। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ রকম ঘটনা অবিশ্বাস্য হলেও টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সাজানপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটেছে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পালকে বিয়ে করার জন্য নোটিশ দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম যে যুক্তি দিয়েছেন, সেটা অধিকাংশ মানুষের কাছে হাস্যকরই মনে হবে। প্রধান শিক্ষক বলেছেন, যেহেতু ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে আর অভিভাবকেরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাই তাঁকে বিয়ে করতে হবে!

২০১৬ সালে রনি প্রতাপ পাল ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো অভিভাবক বা এলাকার কেউ কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। তাহলে প্রধান শিক্ষক আগ বাড়িয়ে তাঁকে নোটিশ দেওয়ার পেছনে অন্য কোনো মতলব আছে কি না, সে প্রশ্ন সামনে আসাটাই স্বাভাবিক।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কখন বা কোন সময় বিয়ে করবেন, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তা ছাড়া, বিয়ের বিষয়ে অনেক সময় পারিবারিক সুবিধা-অসুবিধা তথা অভিভাবকদের মনোভাবও অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে থাকে।

কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনতে পারেন; তিনি ভালোভাবে তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন কি না এবং তিনি শিক্ষার্থীদের ঠিকভাবে পাঠদান করছেন কি না, ইত্যাদি বিষয়ে অভিযুক্ত করতে পারেন। কোনোভাবেই তিনি কোনো শিক্ষককে এ ধরনের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নোটিশ জারি করতে পারেন না।

যদি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের এমন কোনো নীতি থাকত যে অবিবাহিত কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, তাহলে তিনি এ কাজ করতে পারতেন। আজকের পত্রিকায় এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রনি প্রতাপ মনে করেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ আছে, সে ব্যাপারে সাক্ষ্যদানে বিরত রাখার জন্যই তাঁর ওপর এই চাপ! এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা ঘটনাটিকে খুবই লজ্জাজনক বলে অভিহিত করে বলেছেন, এভাবে নোটিশ করার এখতিয়ার কোনো প্রধান শিক্ষকের নেই।

আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি এখতিয়ারবহির্ভূত কাজের জন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হবে। কারণ, কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে খবরদারি করা কোনোভাবেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটা বাড়াবাড়ি। কোনো প্রতিষ্ঠানেরই প্রধান ব্যক্তির খামখেয়ালিপনা মেনে নেওয়া যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত