Ajker Patrika

টোকেনই ‘লাইসেন্স’ অটোর

মাঈনুল রাসেল, ফেনী
Thumbnail image

ফেনীর বিভিন্ন সড়কে মাসে ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার টোকেন-স্টিকার দিয়ে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ২৪ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে বলে অভিযোগ আছে। এসব অটোরিকশার নেই কোনো নম্বরপ্লেট, রুট পারমিট বা কোনো বৈধ কাগজপত্র। এর মধ্যে বেশির ভাগ চালকের আবার নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স।

চালকেরা জানান, এই টোকেন সঙ্গে থাকলে তাঁদের পুলিশ আটকায় না বা হয়রানি করে না। আবার বৈধ কাগজ থাকলেও এই টোকেন না থাকলে ঝামেলায় পড়তে হয়। স্থানীরা জানান, কিছু গাড়ির মালিক বাড়তি টাকা লাভের আশায় অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চাবি। এসব অদক্ষ কিশোরদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, সড়কে ঝরছে প্রাণ। তাদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে চলাচলরত অন্যান্য পরিবহনের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।  

বৈধ কাগজপত্র থাকা গাড়ির মালিকদের অভিযোগ, তাঁদের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চাঁদার জন্য পড়তে হয় নানা বিপাকে। আবার কাগজ করতে গেলেও ব্যাপক হয়রানির শিকার হন। ফলে চালকেরা টোকেন-স্টিকার বা চাবির রিং দেখিয়ে অবৈধভাবে সড়ক ব্যবহার করছেন। এতে সরকার প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অবৈধভাবে আদায় করা এসব টাকা পুলিশসহ প্রশাসনকে দেওয়ার কথা বলে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন প্রতি মাসে চালকদের কাছ থেকে টোকেন প্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।

বিআরটিএ সূত্রমতে, জেলায় নিবন্ধন করা সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা মোট ৯ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে ৬ হাজার সিএনজির নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি। আর নিবন্ধিত চালক রয়েছেন মাত্র ১ হাজার ২৫৫ জন।

সোনাগাজী-ফেনী রুটের সিএনজিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স বানাতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তার ওপর নানা হয়রানি অথচ মাসিক ৫০০ টাকা হারে বছরে ৬ হাজার টাকার স্টিকার দিয়ে টেনশন ছাড়াই তাঁরা সিএনজি চালাচ্ছেন।’

নম্বরহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সরোয়ার, আবদুর রহিম ও সালাউদ্দিন বলেন, ‘তাঁরা গাড়ির সামনের গ্লাসে লাগানো স্টিকার বা টোকেন দেখান। অনেক চালক চাবির রিং দেখিয়ে পুরো নোয়াখালী-ফেনী অঞ্চল বিনা বাধায় চলাচল করছেন। টোকেন ও স্টিকারের দাম ৫০০ টাকা হলেও এসব চাবির রিংয়ের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা বলে জানান চালকেরা।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিবন্ধন, ট্যাক্স-টোকেন ও ফিটনেসবিহীন অবৈধ রুট পারমিটের বিরুদ্ধে বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। তবে অভিযানের খবর আগেই পেয়ে যান অবৈধ অটোরিকশাচালকেরা। এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না।

টোকেনের কথা স্বীকার করে জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হানিফ বলেন, যেসব সিএনজির লাইসেন্স, ফিটনেস ও চালকের কাগজপত্র নেই, তাঁরা থানা-পুলিশ, প্রশাসন থেকে বাঁচতে টাকার বিনিময়ে টোকেন বা স্টিকার কিনছেন। পাশাপাশি সংগঠনের পেছনে কিছু ব্যয় আছে। কেউ মারা গেলে বা দুর্ঘটনার শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়লে তাঁদের সমিতি থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়। তবে সংগঠন থেকে বিপদের সময় কোনো সাহায্য বা সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে দাবি একাধিক ভুক্তভোগীর।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম মজুমদার বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। বৈধ কাগজপত্র পেতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্নজন অপকৌশলে গাড়ি চালাচ্ছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

জেলা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা। তাঁর দাবি, সিএনজির মালিকেরা নিজেদের সুবিধার জন্য অবৈধভাবে টাকা দিয়ে সড়কে চলছেন। প্রতি মাসেই অভিযান চালিয়ে অবৈধ সিএনজি আটক ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

নিবন্ধন নিয়ে বিড়ম্বনার বিষয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধন করতে এখন কোনো ঝামেলা নেই। নতুন করে নিবন্ধন দিচ্ছে সরকার। অনিবন্ধিত গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত