Ajker Patrika

সরকারি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৫: ০৩
সরকারি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের সময় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে হামলা হয়েছে বহু সরকারি স্থাপনায়। করা হয়েছে ভাঙচুর, দেওয়া হয়েছে আগুন। এতে সরকারি সম্পদের হয়েছে বিপুল ক্ষতি। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তদন্ত কমিটি করেছে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজে।

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনে গত শুক্রবার ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা সবার আগে সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এরপর স্টেশনের লিফট, টিকিট কাউন্টার, স্বয়ংক্রিয় টিকিট মেশিন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ সবকিছুই ভাঙচুর করে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোম্পানি সচিব আব্দুর রউফ গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করার জন্য কাজ চলছে। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি এই বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।’

বিক্ষোভকারীদের আগুনে পুড়েছে বিআরটিএর মিরপুর সার্কেল অফিস এবং ভাঙচুর করা হয়েছে বনানীর অফিস। বিআরটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন,বনানীর কার্যালয়ে তিন দফায় হামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শুধু নিচতলায় ও দোতলায়, বিকেলে পাঁচতলা পর্যন্ত, পরের দিন শুক্রবার ১৩ তলা পর্যন্ত ভাঙচুর করা হয়। আর বৃহস্পতিবার মিরপুর সার্কেল অফিসে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়। সার্কেল অফিসে ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত শেষ হলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
বুধবার দুপুর থেকেই আন্দোলনকারীরা ঢাকার কয়েকটি অঞ্চলে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে রামপুরা, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর অঞ্চল।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। আগুন দেওয়া হয় সেতু কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজাতেও। এসব আগুনের ঘটনায় পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সড়ক ও সেতু বিভাগ।

সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী বলেন, সেতু ভবনের সামনে রাখা ৫৩টি গাড়ি একেবারে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া লিফট পুড়েছে চারটি। সেতু ভবনের ক্যাফেটেরিয়া, অডিটরিয়াম, বাচ্চাদের জন্য ডে কেয়ার, বঙ্গবন্ধু কর্নার পুড়েছে। ভবনের দোতলা পর্যন্ত সব নথি পুড়ে ছাই হয়েছে। এ ছাড়া ছয়তলা পর্যন্ত অবকাঠামো পুড়েছে।

সেতুসচিব মঞ্জুর হোসেন বলেন, তাঁদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তের পর সঠিক হিসাব জানা যাবে।

হামলাকারীরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিসি) ৪৪টি বাস ভাঙচুর করেছে এবং আগুন দিয়েছে।

বিআরটিসির মুখপাত্র কর্নেল মো. মোবারক হোসেন জানান, ৪৪টি গাড়ির মধ্যে ৩টি একেবারে পুড়ে গেছে। ৩টি আংশিক পুড়েছে এবং ৩৮টি ভাঙচুর করা হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণ করতে ডিপোভিত্তিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় ও যানবাহনে। এতে সিটি করপোরেশনের ২৯টি বর্জ্যবাহী ভারী গাড়ি, ৪টি মাইক্রোবাস, একটি জিপ এবং একটি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে, ৩৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি কমিউনিটি সেন্টার, রোড মেডিয়ান, ফুটওভারব্রিজ, এস্কেলেটর, সড়কবাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক-চতুর্থাংশ গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের গেট থেকে শুরু করে আন্ডারগ্রাউন্ড, নিচতলা ও দোতলা পর্যন্ত সবকিছুই পুড়ে গেছে। এই ভবনে থাকা ইমারজেন্সি কল সেন্টার, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, ৫৮টি গাড়ি ও দামি যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের পরিচালককে (প্ল্যানিং) আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দাবি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকা। এই ক্ষতি বেশির ভাগ হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অফিস স্থাপনা, গাড়ি, ট্রান্সমিটার ও তার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত