Ajker Patrika

আবারও আলোচনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আবারও আলোচনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা আগেই স্পষ্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে স্মারক সই করেছেন, বাংলাদেশ তার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে সম্প্রতি সরকারকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস। এই সতর্কবার্তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ বৈঠকের পর নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন উঠেছে আবারও। শ্রমিকের অধিকার রক্ষা না হওয়ার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে—এমন আলোচনা জোরালো হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাদা বৈঠক করলেও সেখানে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তা প্রকাশ্যে বলছে না কোনো পক্ষই। এ নিয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ফেসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘সাম্প্রতিক বিষয়গুলো’ নিয়ে আলোচনা করতে রুটিন বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত হাস ও পররাষ্ট্রসচিব মোমেন। যদিও বিষয়টির সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন।

সূত্রগুলো বলছে, মার্কিনরা মনে করে, ধরপাকড় ও মামলার ফাঁদে ফেলে বড় একটি দলকে আগেই মাঠছাড়া করা হয়েছে। এতে ভোট অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পথ সীমিত করা হয়েছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আইনি সুযোগ এখনো যেটুকু আছে, তা কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

অবাধ নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা আগেই স্পষ্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শ্রমমানের ক্ষেত্রে মার্কিনরা ব্যবস্থা নিলে তার ধরন কী হবে, তা দেশটি খোলাসা করেনি। কূটনীতিকেরা মনে করছেন, শ্রমমান রক্ষা না হওয়ার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির সুযোগ সীমিত করার পথে যেতে পারে দেশটি।

অবশ্য বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে আছে বলে তিনি মনে করেন না। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে মোট রপ্তানির ১৭ শতাংশ যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ১৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করেই পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের আগে পোশাক খাতে সীমিত আকারে জিএসপি সুবিধা কিছু পাওয়া যেত। ২০১৩ সালের পর সে সুবিধাও তুলে দেওয়া হয়েছে। কাজেই বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।

তপন কান্তি ঘোষ আরও বলেন, কোনো দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন নিয়মকানুন লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিকের বিরুদ্ধে সহিংস কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বাণিজ্যসচিব বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা রয়েছে। এমন অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য করে, যেখানে গণতন্ত্র নেই, যেখানে একদলীয় শাসন আছে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নেই। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা অনেক উন্মুক্ত। এখানে গণতন্ত্রের চর্চা আছে। এমন অবস্থায় রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সরকার বললেই পণ্য যাওয়া বন্ধ হয় না। কারণ, সেখানে বেসরকারি খাত পণ্য কেনে। তারা সরকারকে অনেক সময় পাত্তাই দেয় না। তারা কেনে; কারণ, ক্রেতারা ভালো মানের পণ্য ঠিক সময়ে সস্তায় পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত