Ajker Patrika

শব্দ-ধুলোয় ব্যাহত পাঠদান

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫১
শব্দ-ধুলোয় ব্যাহত পাঠদান

ঝিনাইদহ সদরের রাজধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পাথর, বিটুমিনসহ নানা নির্মাণসামগ্রী রেখে চলছে রাস্তার কাজ। সেখানে জ্বালানো হচ্ছে বিটুমিন, বড় মেশিন রেখে মেশানো হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী। বিকট শব্দ ও ধুলোয় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। স্কুল মাঠে খেলতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ রয়েছে, খুদে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করছে ঠিকাদারের লোকজন। এদিকে প্রশাসন ও থানা-পুলিশের নিষেধের পরও নিয়মিত মেশিন দিয়ে কার্য চালাচ্ছেন ঠিকাদার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার রাজধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এখন আর সেটি দেখা মিলছে না। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত থাকছে স্কুলে। বিকট শব্দে থাকা যাচ্ছে না ক্লাসরুমে। ধুলোয় ছেয়ে যাচ্ছে স্কুলসহ আশপাশের এলাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে শহরের পবহাটি এলাকার ঠিকাদার ফিরোজ কবির রাস্তার কিছু পাথর রাখেন বিদ্যালয় মাঠে। স্কুলশিক্ষকেরা সেখানে মালামাল রাখতে নিষেধ করেন। সেই নিষেধাজ্ঞা না শুনে মার্চ মাসের মাঝামাঝি ট্রাকে করে ক্রমাগত পাথর আনতে থাকেন। গত ২২ মার্চ থেকে স্কুলের প্রবেশ মুখে পিচ (বিটুমিন) রেখে জ্বালাতে শুরু করেন।

রাজধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার বলে, আমাদের স্কুলে একটা গাড়ি আছে সেখানে খুব শব্দ আর প্রচুর ধুলা হয়। মাঠে যেতে পারি না। খেলা করতে পারি না।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিংকি খাতুন বলে, ধুলো বালুর জন্য ক্লাসরুমে বসা যায় না। আমরা মাঠে গেলে ওরা বকে। ধুলোয় টিফিনের খাবার নষ্ট হয়ে যায়।

চতুর্থ শ্রেণির সিয়াম বলে, ‘আমরা মাঠেই যেতে পারি না। খুব ধুলা আর প্রচণ্ড শব্দ। এ মেশিন দিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ চলছে আমাদের স্কুলের মাঠে। স্কুলে প্রবেশের গেটেই কাজ হচ্ছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা কাশেম মিয়া বলেন, ‘ওরা স্কুলের মাঠে মালামাল নিয়ে এসে যে অত্যাচার শুরু করেছে তাতে আমাদের বাড়ি-ঘরে থাকার কায়দা নেই। স্কুলের ছেলে-মেয়েরা চলাচল করতে পারে না। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার।’

রাজধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিন আক্তার বলেন, ‘বিকট শব্দে ঠিকমতো পাঠদান করা যায় না। আমরা কি বলছি, তা শিক্ষার্থীরা শুনতে পায় না। তাদের মনোযোগও পড়াশোনার দিকে থাকে না। আবার ধুলায় ক্লাসরুমে তো সমস্যা হয়ই, মাঠেও বের হওয়া যায় না। খুবই সমস্যার মধ্যে সময় যাচ্ছে আমাদের।’

প্রধান শিক্ষক শাহিনা আফরোজ বলেন, ‘ঠিকাদার যখন কাজ শুরু করেন, তখন নিষেধ করেছিলাম। ভুল স্বীকার করে বলেছিলেন এখানে কাজ আর করবে না। কিন্তু ঠিক তার পরেই আবার মালামাল এনে স্কুল মাঠে রাখে আর পাশেই বড় মেশিনে তা মিক্সড করে আর বিটুমিন জ্বালায়। কোনোভাবেই তাঁরা আমাদের কথা শুনছে না। বিষয়টি সমাধানে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন আমাদের কোনো কথাই শুনছেন না, বরং নানাভাবে হয়রানি করছেন। এলাকায় ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে, আমরা নাকি তাঁদের থেকে সুবিধা নিয়ে স্কুল মাঠে কাজ করতে অনুমতি দিয়েছি। এটা এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে, প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, জেদাজেদির পর্যায়ে চলে গেছে। কয়েক দিন আগে পুলিশ এসে তাঁদের কাজ করতে নিষেধ করেছিল। কিছু সময় বন্ধ ছিল। এরপর আবার তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।’

ঠিকাদার ফিরোজ কবির বলেন, ‘অল্প সময় কাজ আছে, সেটি হয়ে গেলেই মালামাল সরিয়ে নেব। প্রধান শিক্ষক অনুমতি দিয়েও আবার বারবার নিষেধ করছেন। দেখা যাক, কি হয়।’

অনুমতি ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কেন রাস্তার নির্মাণসামগ্রী রাখা হলো এমনটি জানতে চাইলে ঘটনা স্থলে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্য-সহকারী আবু তালেব বলেন, ‘আপনাদের কথার উত্তর দিতে হবে কেন? পারলে, কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে শোনেন। কোনো কথা বলতি পারব না আপনাদের সঙ্গে।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শাহীন বলেন, স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে ঠিকাদারি মালামাল রাখা ও বিটুমিন পোড়ানোর বিষয়টি জানতে পেরেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঠিকাদার আমাদের কাছে এসেছিলেন, তাঁরা বারবার অনুমতি চাচ্ছে সেখানে কাজ করার। কিন্তু আমরা বলেছি, কোনো অনুমতি দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে যেন এমনটি না করতে পারে সে জন্যও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত