Ajker Patrika

মশা মারার প্রকল্পে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শকেই ১৪৪ কোটি

আবু সাইম, ঢাকা
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৩, ১০: ৪২
মশা মারার প্রকল্পে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শকেই ১৪৪ কোটি

মশা মারার প্রকল্পে ৬০ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)। ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশিক্ষণে ৯৫ কোটি এবং পরামর্শক খাতে ৩৯ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হচ্ছে। মশা মারতে এলজিইডির পাঁচ বছরের প্রকল্পে এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। 
প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হবে বিশ্বব্যাংকের কাছে। প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠানো হয়েছে। তবে কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিভিন্ন খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর এবং কিছু ব্যয় বাদ দিতে বলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ঢাকার সাভার ও নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এলজিইডি বলছে, মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতির জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে।

মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গত ১২ বছরে খরচ করেছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু মশা নিয়ে উদ্বেগ কমছে না। চলতি বছরে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে।

পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র বলেছে, এলজিইডির প্রকল্প প্রস্তাবে অনেক অসংগত ব্যয় প্রস্তাব রয়েছে। ১০ কোটি টাকা খরচে ৬০ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানোর প্রস্তাব রয়েছে। প্রশিক্ষণ হতে পারে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা ব্রাজিল। তবে প্রশিক্ষণের বিষয় এখনো ঠিক করা হয়নি। এ ছাড়া তিনটি গাড়ি কেনার জন্য সাড়ে তিন কোটি এবং এগুলোর পেছনে আরও সাড়ে তিন কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী যানবাহন কেনায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিদেশ সফরেও নিষেধাজ্ঞা আছে। এ কারণে এগুলো বাদ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে কিছু গাড়ি ভাড়া নিতে হবে।

সূত্র বলেছে, প্রকল্প ঋণের অর্থায়নে স্থানীয় প্রশিক্ষণে ৯৫ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা এবং ১৩ জন পরামর্শকের পেছনে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রশিক্ষণের বিষয়, ধরন, প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। মূল্যায়ন সভায় পরামর্শকের সংখ্যা ও ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা কমাতে বলা হয়েছে। প্রকল্পে পরিচালন ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭৯ কোটি টাকা। এই ব্যয় অনেক বেশি মন্তব্য করে এটি যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে বলেছে কমিশন।

প্রকল্প প্রস্তাবে ঋণের আওতায় আউটসোর্সিং সাপোর্ট স্টাফ খাতে ২৬৬ জনের জন্য ৬০ কোটি টাকা; টেলিভিশন, রেডিও ও পত্রিকায় প্রচার-প্রচারণায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে সাপোর্ট স্টাফদের কাজের ধরন উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পে তিনজন কর্মকর্তার বেতন-ভাতায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ৪ লাখ টাকা অবসর ভাতা, বিশ্রাম ভাতা ৫ লাখ, বিনোদন ভাতা ৪ লাখ, মোবাইল ফোন ভাতা ৪ লাখ টাকা, আবাসিক ফোন ভাতা চাওয়া হয়েছে ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া জিওবির আওতায় মেরামত খাতে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ব্যয়ও কমাতে বলা হয়েছে।

কমিশন বলেছে, এ প্রকল্পে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনবলের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে বৈদেশিক অর্থায়নের নিশ্চয়তা মেলেনি। আগে অর্থায়ন ঠিক করতে হবে।

পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করা আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। তবে বৈঠকে উপস্থিত কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের ব্যয় নিয়ে কমিশন বিভিন্ন আপত্তি তুলেছে। বেশ কিছু খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ডা. মো. সারোয়ার বারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকল্পটি নতুন ধরনের, তাই বিভিন্ন বিষয় প্রয়োজন আছে। কিছু পর্যবেক্ষণসহ প্রকল্পটি পিইসিতে পাস হয়েছে। এ প্রকল্পে শুধু মশা নির্মূলই নয়, আধুনিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিকও রয়েছে। তিনি বলেন, কমিশন বলেছে প্রশিক্ষণ যেন শুধু ভ্রমণ না হয়, এটা যেন বাস্তবধর্মী হয়। গাড়ির বিষয়টিও বিবেচনার জন্য বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত