Ajker Patrika

চড়ুইয়ের জন্য ভালোবাসা

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১০: ০৮
চড়ুইয়ের জন্য ভালোবাসা

একশ্রেণির মানুষ পাখি শিকার করে বিক্রি করেন। আবার কেউ সেই পাখির মাংস দিয়ে রসনার তৃপ্তি মেটান। এই দুই শ্রেণির মানুষের তাণ্ডবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। রংপুরের মডার্ন মোড় এলাকার বাসিন্দারা এ রকমই ব্যতিক্রমী মানুষ। তাঁরা রীতিমতো পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছেন। সেখানে নির্ভয়ে বসবাস করছে কয়েক হাজার চড়ুই পাখি। এমনকি পাখিগুলোর জন্য এখানে পাহারার ব্যবস্থাও আছে।

রংপুর শহর থেকে মডার্ন মোড়ের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। সেখানে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় একটি কৃষ্ণচূড়াগাছের ডাল। কিন্তু মানুষের তা ধরাছোঁয়া নিষেধ। ভুল করে কেউ যদি ধরেও ফেলেন, শুনতে হয় গালমন্দ। কারণ, এই গাছেই দুই দশক ধরে হাজারো চড়ুই পাখি বসবাস করছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা নিজ দায়িত্বে পাখিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বসবাস করতে সহায়তা করছেন।

সম্প্রতি মডার্ন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, গোধূলি নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে বাসার দিকে ছুটে আসতে থাকে চড়ুই পাখির দল। এরা এক ডাল থেকে আরেক ডালে ছোটাছুটি শুরু করে। কিচিরমিচির ডাকে মাতিয়ে তোলে পুরো এলাকা। আবার ভোর হলেই খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে ডেরা ছেড়ে। সন্ধ্যা হলেই সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যান পথচারীরা। যাঁরা নতুন আসেন এ এলাকায়, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে পাখির ওড়াউড়ি দেখেন, তোলেন ছবিও।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর ধরে চড়ুই পাখিগুলো এখানে বসবাস করছে। প্রথম দিকে ৫০০ থেকে ৬০০ চড়ুই বসবাস করলেও এখন সেখানে তাদের সংখ্যা আনুমানিক ২৫ হাজার। কৃষ্ণচূড়াগাছটিসহ আশপাশের কয়েকটি গাছে এখন বসবাস করছে তারা। সন্ধ্যা হলেই পাখি দেখতে গাছগুলোর চারদিকে ভিড় জমে যায়। কেউ যাতে এদের বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় লোকজন সবাইকে সতর্ক করেন।

মডার্ন মোড়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে গ্রামের কুঁড়েঘরে দেখা মিলত চড়ুই পাখির। এখন তেমন কুঁড়েঘর নেই। তাই তেমন দেখাও মেলে না এদের। তবে এখানে এক গাছে কয়েক হাজার চড়ুই বাস করছে। দেখে খুব ভালো লাগল। তাই এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছি।’

কৃষ্ণচূড়াগাছের পাশে সামাদ হোটেল। এ হোটেলের কারিগর ডালিম পাল বলেন, ‘এখানে ১৩ বছর ধরে চাকরি করছি। তখন থেকেই পাখিগুলোকে দেখি। এলাকার লোকজন নিজেরা কখনো গাছের ডালপালা কাটেন না। আমরা নিজেদের মতো করে পাখিগুলোকে দেখে রাখছি। এ পাখির ডাকেই আমার ঘুম ভাঙে, দিন শুরু হয়।’

মডার্ন মোড়ের পান ব্যবসায়ী সাজু মিয়া জানান, প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে পাখিরা এখানে এসে আশ্রয় নেয়। সন্ধ্যায় পুরো এলাকা পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে।

নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলে উড়ে যায় এরা। দিন শেষে আবার নীড়ে ফেরে।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, চড়ুই পাখি দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। তাই এরা একসঙ্গে থাকে। মডার্ন মোড়ে কয়েকটি গাছে হাজারো চড়ুই বসবাস করছে। এটি দারুণ বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য ফাঁস করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জিয়াউলের বিরুদ্ধে

সাতকানিয়ায় নিহত জামায়াত কর্মীর লাশের পাশে ব্রাজিলের তৈরি অত্যাধুনিক পিস্তল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত