Ajker Patrika

শিশুটির চিকিৎসার কী হবে?

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ০৬
শিশুটির চিকিৎসার কী হবে?

ভ্যানের ধাক্কায় শিশু সিয়াম মণ্ডলের (৭) পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙে গেছে। ফুসফুসে জমেছে রক্ত। ১০ হাজার টাকা ধার করে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তার বাবা। হাসপাতালে প্রতারণা করে সেই টাকা নিয়ে গেছে প্রতারক। এখন শিশুটির চিকিৎসা কীভাবে হবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সিয়ামের বাবা।

সিয়াম পাবনার সুজানগর উপজেলার নওয়াগ্রামের শহীদ মণ্ডলের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাস্তা পারাপারের সময় একটি ভ্যান সিয়ামকে ধাক্কা দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। ঘটনার পর তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাবনা সদর হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

গত শুক্রবার ভোরের আলো যখন ফোটেনি, তখন এক ব্যক্তি রামেক হাসপাতালে এসে সিয়াম মণ্ডলের শয্যার কাছে গিয়ে নিজেকে সার্জারির চিকিৎসক পরিচয় দেন। বলেন, এখনই ছয়টি ইনজেকশন দিতে হবে সিয়ামকে। সিয়ামের বাবা শহীদ মণ্ডল জানতে চান, ইনজেকশনের দাম কত। ওই ব্যক্তি জানান, বাইরে কিনলে ৬ হাজার টাকা লাগবে। আর হাসপাতালে নিলে দাম পড়বে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। টাকা দিলে তিনিই ইনজেকশনের ব্যবস্থা করে দেবেন। শহীদ মণ্ডল তখন তাঁর কাছ থেকে ইনজেকশন নিতে রাজি হন। প্রতারক ওই ব্যক্তি শহীদ মণ্ডল ও তাঁর ভাতিজা রাজীব মণ্ডলকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে নিয়ে আসেন। সেখানে শহীদের কাছ থেকে নেন ৪ হাজার টাকা। টাকা নেওয়ার পর রাজীবকে কৌশলে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠান ভর্তির কাগজটি আনার জন্য। আর শহীদকে ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে ওই প্রতারক ভেতরে ঢোকেন। তারপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তখন শহীদ প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।

রাজীব মণ্ডল বলেন, ১০ হাজার টাকা ধার করে সিয়ামকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পাবনায় এবং রাজশাহীতে আগেই তাঁদের ৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি ছিল ৬ হাজার। এর মধ্যে ৪ হাজার টাকা নিয়ে গেছে প্রতারক। শুক্রবার সন্ধ্যায় সিয়ামের অস্ত্রোপচার করে ফুসফুসে জমাটবাঁধা রক্ত বের করা হয়েছে। এই অস্ত্রোপচারের ওষুধপত্র কিনতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন হাতে কোনো টাকা নেই। কী দিয়ে চিকিৎসা করাবেন তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

শহীদ মণ্ডল বলেন, একবার ধার করে টাকা এনেছি। এখন কারও কাছে হাত পাতার অবস্থা নেই। মানুষের দুঃসময়ে যারা প্রতারণা করে টাকা নিয়ে যায়, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। প্রতারণার এমন কথা শুনে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামিম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ এত নিরীহ! এত সহজ-সরল! এ সুযোগটাই নেয় প্রতারকেরা।’

হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী ও স্বজন মিলে ৩০ হাজার মানুষ থাকে। চেষ্টা করেও হাসপাতালকে প্রতারকমুক্ত করতে পারছি না। অনেক সময় প্রতারকেরা অ্যাপ্রোন পর্যন্ত পরে নেয়। মাস্ক পরে। কেউ তাঁদের চিনতে পারে না। ডাক্তার মনে করে তাঁদের কথাই রোগীর স্বজনেরা শোনেন। এরপর প্রতারণার শিকার হন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত