Ajker Patrika

ওজন নিয়ন্ত্রণে সকালে রাজার মতো খান

ইতি খন্দকার
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১১: ০৫
ওজন নিয়ন্ত্রণে সকালে রাজার মতো খান

আমাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী যে কাঙ্ক্ষিত ওজন থাকা দরকার, সেটা যদি নির্দিষ্ট ওজনের বেশি হয়ে থাকে, তখন আমরা সেই ব্যক্তিদের ওভেস হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওজন সব বয়সের জন্যই ক্ষতিকর। কেননা বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত অতিরিক্ত ওজনের জন্যই হয়ে থাকে। তাই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।

ডায়েটের ধরন
ওজন কমানোর বিভিন্ন ধরনের ডায়েট আছে। এর মধ্যে ব্যালেন্সড ডায়েট, পেলিও ডায়েট, ভেগান ডায়েট, লো কার্ব ডায়েট, আলট্রা লো ফ্যাট ডায়েট, এইচসিজি ডায়েট, জোন ডায়েট, এটকিনস ডায়েট, ডুকান ডায়েট,  ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ইত্যাদি। সব ধরনের ডায়েট সব বয়সের ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বয়স, উচ্চতা এবং ওজনের পাশাপাশি রোগভেদে একটি ডায়েট চার্টের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই নিজ থেকে হুট করে যেকোনো ডায়েট শুরু করা যাবে না। 

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন–
বয়স, উচ্চতা ও ওজন জেনে তার বিএমআই, বিএমআর বের করে প্রতিদিনের যে ক্যালরি প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণ করতে হবে। দেখতে হবে ওজন কমাতে চাওয়া মানুষটির কোনো খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না; কিংবা কোনো অসুখে ভুগছেন কি না এবং আগেও কোনো অসুখ ছিল কি না। সব ইতিহাস নিয়ে ডায়েট চার্ট করতে হবে। বয়সের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ শিশুদের ডায়েট চার্ট এবং ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তির ডায়েট চার্টের মিল থাকবে না।

  • ট্রান্সফ্যাট, ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার ইত্যাদি খাওয়া বাদ দিতে হবে এবং পাশাপাশি দৈনিক ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
  • প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটতে হবে এবং ৩০ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে। নিয়মিত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং নিজেকে সব সময় দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে হবে। রাত জেগে থাকলে মেটাবলিজম স্লো হয়ে যায় এবং পরিমিত পরিমাণে ঘুমালে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়।
  • যাঁদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাঁরা চিনি ছাড়া মসলা চা খেতে পারেন, গ্রিন টি অথবা ব্ল্যাক কফি খেতে পারেন। যাঁদের প্রেশার লো তাঁরা গ্রিন টি ঘন ঘন খাবেন না।
  • প্রতিদিনের খাবার একই ধরনের না রেখে বৈচিত্র্য আনতে হবে। যেমন সবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস ইত্যাদির ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন রঙিন সবজি ও সালাদ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে।
  • অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে কতটুকু পরিমাণ খাবার আপনার দৈনিক খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে এবং কোন খাবারগুলো আপনার ক্যালরির পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করবে তা নির্ধারণ করতে হবে।

পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে দৈনিক খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে।ওজন কমাতে স্বাভাবিকভাবে যা মেনে চলতে পারেন

দিনের শুরু
দিনের শুরুতে, অর্থাৎ সকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ডিটক্স ওয়াটার কিংবা এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন। চিয়া সিডস ও তোকমা ভেজানো এক গ্লাস পানিও পান করতে পারেন অথবা হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু-মধু মিশিয়েও পান করতে পারেন। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে।

সকালের নাশতা
সকালের নাশতা অবশ্যই সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নাশতায় ওটস, ডিম ও সবজি দিয়ে খিচুড়ি করে খেতে পারেন কিংবা লাল আটার মাঝারি আকারের দুইটি রুটি, এক বাটি কম মসলাযুক্ত সেদ্ধ সবজি ও একটি ডিম রাখতে পারেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পুদিনাপাতা, লেবুর রস ও টক দই মেশানো ১ বাটি খোসাসহ শসার সালাদ খাবেন।

 সকাল ও দুপুরের মাঝে
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ যেকোনো একটি ফল কিংবা ৩টি কাঠবাদাম, দুই পিস সুগার ফ্রি বিস্কুট খাবেন।

দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবারে রুটি অথবা ভাত যেকোনো একটি রাখতে পারেন। সঙ্গে মাছ ও চর্বিমুক্ত মুরগির মাংস, শাক বা ডাল দিয়ে মিক্সড সবজি ও সালাদ। দুপুরের খাবারের পরিমাণটা অবশ্যই সকালের খাবারের পরিমাণ থেকে কিছুটা কম রাখতে হবে।

বিকেলের নাশতায়
বিকেলের নাশতায় অল্প করে ছোলা সেদ্ধ, বাদাম, কাঁচা পেঁপে, শসা, টমেটো, লেবুর রস, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি দিয়ে একটা সালাদ রাখতে পারেন, কিংবা একটি মাঝারি আকারের কলা, একটি ছোট খেজুর, টক দই, ভেজানো তোকমা, চিয়া সিডস ও সামান্য পানি দিয়ে একটা স্মুদি করে খেতে পারেন।

রাতের খাবার
এক পিস বড় আকারের মাছ বা মুরগির পিস, চায়নিজ সবজি অথবা স্যুপ রাখতে পারেন। রাতের খাবার অবশ্যই ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে শেষ করতে হবে। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস নন ফ্যাট গরুর দুধের সঙ্গে এক চিমটি গুঁড়ো হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন অথবা এক গ্লাস পানির সঙ্গে চিয়া সিডস ও ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।

লেখক: ইতি খন্দকার পুষ্টিবিদ, লেজার ট্রিট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত