Ajker Patrika

মোহাম্মদ নজিবর রহমান

সম্পাদকীয়
মোহাম্মদ নজিবর রহমান

মোহাম্মদ নজিবর রহমান ছিলেন ঔপন্যাসিক ও শিক্ষক। তাঁকে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিকাশোন্মুখ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি তৎকালীন পাবনা জেলার শাহজাদপুরের চরবেলতৈল গ্রামে আনুমানিক ১৮৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ঢাকার নর্মাল স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে তিনি জলপাইগুড়ির একটি নীলকুঠিতে চাকরি করেন। পরে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সিরাজগঞ্জের ভাঙ্গাবাড়ি মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়, সলঙ্গা মাইনর স্কুল ও রাজশাহী জুনিয়র মাদ্রাসায় চাকরি করেন। কিছুদিন তিনি ডাকঘরে পোস্টমাস্টারের চাকরিও করেন।

নজিবর রহমান ১৮৯২ সালে নিজ গ্রামে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তী সময়ে একটি বালিকা বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। তিনি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর অনুপ্রেরণায় সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। প্রথম উপন্যাস ‘আনোয়ারা’ তাঁকে বেশ জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ওই সময় মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’র পর ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় নজিবর রহমানের উপন্যাসটি। ১০০ বছর পরও ‘আনোয়ারা’ জনপ্রিয় ও আলোচিত। গ্রাম্যজীবনের দলাদলি, হীন ষড়যন্ত্র, বংশ গৌরবের অন্তঃসারশূন্যতা, নারীশিক্ষার উপযোগিতা, পেশাগত দ্বন্দ্ব-সংঘাতসহ নানা বিষয় এ উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য।

মোহাম্মদ নজিবর রহমান শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি ২০টির মতো উপন্যাস রচনা করেছেন, যেগুলো তীক্ষ্ণ সমাজ সচেতনতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করে। এসব উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: চাঁদতারা বা হাসান গঙ্গা বাহমনি, পরিণাম, গরীবের মেয়ে, দুনিয়া আর চাই না, মেহেরউন্নিসা, প্রেমের সমাধি ইত্যাদি। বঙ্গভঙ্গের সময় তিনি লেখেন ‘বিলাতী বর্জন-রহস্য’ পুস্তিকাটি। ব্রিটিশ সরকার বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ছাড়া তিনি ‘সাহিত্য প্রসঙ্গ’ নামে একটি গদ্য পুস্তিকাও লেখেন।

সাহিত্যে অবদানের জন্য মোহাম্মদ নজিবর রহমান ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি লাভ করেন। তিনি ১৯২৩ সালের ১৮ অক্টোবর রায়গঞ্জের হাটি কুমরুল গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত