Ajker Patrika

আইসক্রিমের সমাধান দইয়ে

রানা আব্বাস, ঢাকা
Thumbnail image

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে প্রায় ছয় বছর আগের এক স্মৃতি রোমন্থন হচ্ছিল গত সন্ধ্যায়। সদ্যই সাংবাদিকতা ছেড়ে পুরোদস্তুর ফুটবলের মানুষ হয়ে যাওয়া রাশেদের কাছে জানতে চাওয়া, সেদিন কলসিন্দুর বাজারে সানজিদা আক্তারকে যেন কী দেওয়া হয়েছিল? সাবেক সহকর্মী রাশেদ চওড়া হাসিতে বলেন, ‘দই, দই।’

সে এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল বটে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ সাফজয়ী দলের ৮ জনই ছিল কলসিন্দুরের মেয়ে। কলসিন্দুর গ্রামটা তারও আগে থেকে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে এ কিশোরী ফুটবলারদের সৌজন্যেই। পিচ ওঠা, ধুলাওড়া দীর্ঘ পথ পেরিয়ে শীতের এক স্নিগ্ধ বিকেলে মারিয়া-সানজিদাদের গ্রামে পৌঁছে সত্যি মুগ্ধ হতে হলো। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ অধিনায়ক মারিয়া মান্দা নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়িতে। মারিয়ার বাড়িতে যেতে হয় মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা নেতাই নদ পেরিয়ে।

শীতের সময় হাঁটুজল থাকা নদে নৌকাও চলে না, সেতুও নেই। মান্দার পিছু পিছু হেঁটে নদী পার হওয়ার দারুণ এক অভিজ্ঞতা।

মারিয়াদের সাফল্যের সূত্র ধরে এ অজপাড়াগাঁয়ে বিদ্যুৎ এসেছে, অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, সমাজে উল্লেখযোগ্য সংস্কারও হয়েছে। কলসিন্দুর বাজারে এখন বোধ হয় চকলেট-আইসক্রিমও মেলে। ছয় বছর আগে পুরো বাজার তন্ন তন্ন করে এমন কিছু পায়নি বলেই রাশেদ সানজিদাকে দই কিনে দিয়েছিলেন। সানজিদা তখন আর অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলেন না। তবু তাঁর এলাকায় যাওয়ার খবর শুনে দেখা করতে এসেছিলেন। সৌজন্য দেখিয়ে রাশেদ কিছু খাওয়াতে চেয়েছিলেন। অগত্যা দই দিয়েই সমাধান। এই অর্ধযুগে কলসিন্দুর নিশ্চয়ই আরও বদলেছে। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের ঢেউটা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ নারী ফুটবলে।

কলসিন্দুরের আটজন খেলোয়াড় আছেন গত পরশু নেপালকে হারিয়ে দক্ষিণ এশীয় ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা এই বাংলাদেশ দলেও। মারিয়া, সানজিদা, শামসুন্নাহার জুনিয়র, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মার্জিয়া, তহুরা খাতুন, সাজেদা খাতুন, শিউলি আজিমদের শেকড় কলসিন্দুর হতে পারে; তবে তাঁরা সবাই বাংলাদেশের প্রতিনিধি। একটা নির্দিষ্ট জনপদ শুধু নয়, তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন পুরো বাংলাদেশ ফুটবলের মলিন ছবিটা বদলে দিতে। বয়সভিত্তিক ফুটবলে আলো ছড়ানো এই ফুটবলারদের সফল নেতৃত্বে এক সুতোয় গেঁথে রাখছেন সাবিনা খাতুনের মতো একজন অধিনায়ক। আর দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যেতে গোলাম রব্বানী ছোটনের সঠিক দিকনির্দেশনা তো আছেই।

মাহেন্দ্রক্ষণেও না পাওয়ার যাতনা ভোলার নয়—সানজিদার ভাইরাল পোস্ট সেটিই বলে। নারী ফুটবলারদের ত্যাগ আর সংগ্রামের কথা তাই ঘুরেফিরে আসছে এই আনন্দমুহূর্তে। নারী ফুটবলারদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা, তাঁদের আর্থিক সমস্যা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির সংকটসহ অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার সমাধান হয়তো রাতারাতি হবে না।

কিন্তু যেভাবে কলসিন্দুর বদলে গেছে ফুটবলারদের সৌজন্যে, একইভাবে দেশের ফুটবলেও যদি এই সাফল্যের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেটিই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত