
আজকের পত্রিকা: আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা শুধু একাত্তর সালে অনুসন্ধান করে পাওয়া যাবে না। যাঁরা মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ শুধু একাত্তর সালের ৯ মাসের, তাঁরা সঠিক ন্যারেটিভ দিচ্ছেন না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু ৯ মাসের ব্যাপার ছিল না। অনেক আগে থেকেই নানা ঘটনা, আন্দোলন এবং বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছে। আমি একটি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাঁরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আত্মাহুতি দিয়েছেন ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন তাঁদের আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলব না কেন? তাঁরা তো দেশমাতৃকার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।
আমাদের ইতিহাস কি শুধু ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয়েছিল? এভাবে ভাবাটা কিন্তু অনৈতিহাসিক। এ ধরনের বিকৃতির দিকে যদি আমরা আমাদের ইতিহাসকে নিক্ষেপ করি, তাহলে ইতিহাসের মূল জায়গা বুঝতে পারব না।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমার মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে ওঠে এবং জাতীয় মুক্তি ও শ্রেণি মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমার মধ্যে দৃঢ় হতে থাকে। এভাবে স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর আমার মধ্যে রাজনৈতিক ভাবনার সূচনা হয়। আমার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ হলো, এই সবকিছুর ধারাবাহিকতা।
আজকের পত্রিকা: কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মধ্যে কীভাবে মুক্তির বীজটা অঙ্কুরিত হলো? প্রবল দেশপ্রেম, বাঙালির আত্মপরিচয় এবং বিদেশি শাসন-শোষণ এবং তাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের আঘাত করছে, যা ধীরে ধীরে আমাকে প্রতিবাদী করে তুলেছে। শ্রমের প্রতি মর্যাদা, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয় তা ঠিক নয়। কারণ তারা এক অর্থে আমার চেয়ে জ্ঞানী, শ্রমটা যে আমার আয়ত্তের মধ্যে নেই। তাঁদের তুচ্ছ করা উচিত নয়। অন্যদিকে ইতিহাস পাঠ। শুধু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, পৃথিবীর দেশে দেশে নিজের জাতিকে ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই পরিচালনা করেছেন জুলিয়াস ফুচিকসহ আরও বিখ্যাত বীরদের জীবনকাহিনি পাঠ করে এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার ভিত্তিতে আমার ভেতরে মুক্তির চেতনা জন্ম নেয়।
আর আগাগোড়া আমি মুক্তিযুদ্ধটাকে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা হিসেবে দেখিনি। মানব অস্তিত্বের এবং মানব পরিচয়ের মুক্তি হিসেবে এটাকে দেখেছি। সে জন্য আমি আমার সব শক্তি এবং সামর্থ্য নিবেদন করেছি মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এই সংগ্রামই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত একাত্তরে উপনীত হয়। তখন আমরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ শুরু করলাম।
এর ইমিডিয়েট পটভূমি যদি বলি, সেটাও কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়নি। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি স্রোতোধারা পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। একটা বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারা—এটা আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবুর রহমান ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে। অন্যটি হলো বামপন্থী ধারা—কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে। আরও ছোট ছোট ধারা ছিল। কিন্তু মূল দুটি ধারা ও অন্য ধারাগুলো একাত্তর সালে একটি জায়গায় এসে মিলিত হয়েছিল। ফলে অনন্য একজাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটা বড় অবদান রেখেছে। এই নির্বাচনের রায় কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসকেরা যখন গড়িমসি করা শুরু করলেন, তখন আমরা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, ‘পুরো পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল তোমরা যদি বাস্তবায়ন করতে না দাও, তাহলে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করে হলেও আমরা জনগণের ভোটের রায় কার্যকর করব।’ সেটা ছিল স্বাধীনতার ঘোষণার সমতুল্য একটা ব্যাপার।
১ মার্চ যখন অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়া হলো, তখন আর আমাদের অপেক্ষা করার কোনো জায়গা ছিল না। এর আগে আমাদের নেতা কমরেড মণি সিংহ বলেছিলেন, ‘তোমাদের স্যালুট জানাই। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তোমরা বড় সংগ্রাম করেছ। তবে মনে রাখবা, এটা হলো ড্রেস রিহার্সাল। আসল বড় সংগ্রাম সামনে আছে।’ তিনি আসলে সশস্ত্র যুদ্ধের ইঙ্গিত করেছিলেন। সুতরাং আমরা সেভাবেই তৈরি হচ্ছিলাম।
১ মার্চ আমার অনার্স পরীক্ষার একটা বিষয় বাকি ছিল। সেই দিন মুহসীন হলের ৬৬০ নম্বর রুম বন্ধ করে যে দুপুরবেলা বের হয়ে গেলাম আর ফিরে এলাম মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে।
২৫ মার্চের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় গিয়ে পৌঁছালাম। কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের ট্রেনিং শুরু হলো। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নের একটা বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করা হয়। প্রথম ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেলাম আমি। পরে আমরা বেস ক্যাম্প করে, ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে দেশের ভেতরে কাজ শুরু করলাম।
আজকের পত্রিকা: সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের দেশ গড়ার স্লোগান কি ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: খুবই স্বাভাবিকভাবে সেটা একটা বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল; যাতে ছাত্রসমাজের বিপুল সমর্থন পাই। আমাদের স্লোগান ছিল—‘বেয়নেটকে লাঙলের ফলায় পরিণত কর’; ‘লাখো শহীদের রক্তে মুক্ত স্বদেশ, এসো হে এবার দেশ গড়ি’। তবে কিছু কিছু ছাত্রসংগঠন এসবকে নরম স্লোগান হিসেবে চিহ্নিত করে টিটকারি করত। কিন্তু দেশ গড়ার সংগ্রাম যে সংঘাতবিহীন কোনো কিছু নয়, পরের অনেক ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেশ গড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ১৭ ডিসেম্বর দেশে ঢুকেছি আর ২ জানুয়ারি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং করে আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি। এর মধ্যে একটা পদক্ষেপ ছিল স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করা। ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আমরা একটা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলাম।
আমি এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলাম। সেখানে নিচ থেকে ওপর ক্লাস পর্যন্ত সিলেবাস কেমন হবে এবং কত সময় ধরে কোন বিষয় পড়ানো হবে, তা বিস্তৃত উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশগুলো পরবর্তী সময়ে ‘কুদরাত-এ-খুদা’ কমিশন গ্রহণ করেছিল।
আমাদের কিছু উদ্যোগ সংঘাতের দিকে গিয়েছিল। রেশন কার্ড উদ্ধার, দুর্নীতি বন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার-সমর্থকদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ দেখা দেয়। মানবমুক্তির প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে দেশে দেশে যে মুক্তিসংগ্রাম চলেছে, তার প্রতি সংহতি জানানোর জন্য ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ভিয়েতনাম সংহতি দিবস পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমাদের দুজন ছাত্র মতিউল-কাদের মারা যায়। এর প্রতিবাদে প্রবল আন্দোলন হয়। আমরা যতগুলো দাবি করেছিলাম, সরকার তা মেনে নেয়।
আজকের পত্রিকা: স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নীতি-কৌশল কি ঠিক ছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মনে হয়, কিছু ভুল অবশ্যই ছিল। তবে শুধু বঙ্গবন্ধুর একার নয়, আমাদের সবারই ভুল ছিল। এর একটি হলো, হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ে আত্মহারা হয়ে যে সাংস্কৃতিক বা মতাদর্শগত বিপ্লব শুরু করা উচিত ছিল, সে কথাটা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে অনেক শক্তির জায়গা যেমন ছিল, তেমনি কতগুলো ঘাটতির জায়গাও ছিল। সেই অবহেলার দায় এখনো আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো, প্রতিটি ইতিহাসের মধ্যে একটা কনটিনিউটি থাকে আবার ডিস-কনটিনিউটি থাকে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ডিস-কনটিনিউটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর পুরোনো পেনাল কোড থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রসহ সবকিছু আগের মতোই বহাল রাখলাম। এটারই কনটিনিউটি চলতে থাকল।
একপর্যায়ে আমরা দেখতে পেলাম, সমাজের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে গেল। একদিকে সমাজতন্ত্রের অভিমুখীনতার কথা বলা হলো, অন্যদিকে নব্য ধনিক শ্রেণি গড়ে উঠল। বঙ্গবন্ধুর তাঁর দলের ঊর্ধ্বে কোনো ব্যক্তির পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই দল আবার শ্রেণি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারল না। সুতরাং যতই প্রগতিশীল নীতি নেওয়া হোক না কেন, প্রতিটি কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ বাধা দেওয়া শুরু করল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি সরাসরি মোকাবিলা করলেন না। এখানেই ছিল তাঁর দুর্বলতা।
এরপর তিনি একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন। আমরা কিন্তু আগেই বলেছিলাম, পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যাওয়া ঠিক হবে না। ১৭ ডিসেম্বরের পরেই আমাদের প্রস্তাব ছিল সবাইকে নিয়ে একটা বিপ্লবী সরকার গঠন করার। এরপর স্বাধীনতাকে সংহত করার
পর পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যেতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনো কিছুই আমলে নেননি। এ রকম আরও কিছু ভুল ছিল।
আজকের পত্রিকা: সিপিবি ও ন্যাপ তো সেই সময়ে এসব ভুলের কথা বলেনি। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমি মনে করি, আমাদের পার্টির নীতিও সে সময় আংশিকভাবে ভুল ছিল। স্বাধীনতা সংহত করতে হবে—আমাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা সংহত করার জন্য আমাদের জনগণের সামনে এসে বলা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারকে যদি আপনাদের পছন্দ না হয়, তাহলে সিপিবি ও ন্যাপ আছে। আমরাই বিকল্প পার্টি। আমাদের পেছনে আসুন। আমরা এটা না করে ঐক্য ও সংগ্রাম ধরে রেখেছিলাম। যেটা আমাদের প্রস্তাবে ছিল। কিন্তু ঐক্যটা বেশি করেছি, সংগ্রামটা সেভাবে করিনি; বিশেষ করে নিজেদের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিনি। ফলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না এবং মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোও রক্ষা করতে পারলাম না। তবে এই ভুল আমরা সংশোধন করে নিয়েছি এবং প্রকাশ্যভাবে বলেছি, ওই অবস্থায় আর ফিরে যাব না। এখন আমরা স্বাধীন অবস্থান থেকে আমাদের রাজনীতি করে যাব। সমাজতন্ত্র অভিমুখীন একটা সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ যাতে পরিচালিত হয়, এর জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

আজকের পত্রিকা: আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা শুধু একাত্তর সালে অনুসন্ধান করে পাওয়া যাবে না। যাঁরা মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ শুধু একাত্তর সালের ৯ মাসের, তাঁরা সঠিক ন্যারেটিভ দিচ্ছেন না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু ৯ মাসের ব্যাপার ছিল না। অনেক আগে থেকেই নানা ঘটনা, আন্দোলন এবং বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছে। আমি একটি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাঁরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আত্মাহুতি দিয়েছেন ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন তাঁদের আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলব না কেন? তাঁরা তো দেশমাতৃকার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।
আমাদের ইতিহাস কি শুধু ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয়েছিল? এভাবে ভাবাটা কিন্তু অনৈতিহাসিক। এ ধরনের বিকৃতির দিকে যদি আমরা আমাদের ইতিহাসকে নিক্ষেপ করি, তাহলে ইতিহাসের মূল জায়গা বুঝতে পারব না।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমার মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে ওঠে এবং জাতীয় মুক্তি ও শ্রেণি মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমার মধ্যে দৃঢ় হতে থাকে। এভাবে স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর আমার মধ্যে রাজনৈতিক ভাবনার সূচনা হয়। আমার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ হলো, এই সবকিছুর ধারাবাহিকতা।
আজকের পত্রিকা: কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মধ্যে কীভাবে মুক্তির বীজটা অঙ্কুরিত হলো? প্রবল দেশপ্রেম, বাঙালির আত্মপরিচয় এবং বিদেশি শাসন-শোষণ এবং তাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের আঘাত করছে, যা ধীরে ধীরে আমাকে প্রতিবাদী করে তুলেছে। শ্রমের প্রতি মর্যাদা, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয় তা ঠিক নয়। কারণ তারা এক অর্থে আমার চেয়ে জ্ঞানী, শ্রমটা যে আমার আয়ত্তের মধ্যে নেই। তাঁদের তুচ্ছ করা উচিত নয়। অন্যদিকে ইতিহাস পাঠ। শুধু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, পৃথিবীর দেশে দেশে নিজের জাতিকে ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই পরিচালনা করেছেন জুলিয়াস ফুচিকসহ আরও বিখ্যাত বীরদের জীবনকাহিনি পাঠ করে এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার ভিত্তিতে আমার ভেতরে মুক্তির চেতনা জন্ম নেয়।
আর আগাগোড়া আমি মুক্তিযুদ্ধটাকে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা হিসেবে দেখিনি। মানব অস্তিত্বের এবং মানব পরিচয়ের মুক্তি হিসেবে এটাকে দেখেছি। সে জন্য আমি আমার সব শক্তি এবং সামর্থ্য নিবেদন করেছি মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এই সংগ্রামই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত একাত্তরে উপনীত হয়। তখন আমরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ শুরু করলাম।
এর ইমিডিয়েট পটভূমি যদি বলি, সেটাও কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়নি। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি স্রোতোধারা পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। একটা বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারা—এটা আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবুর রহমান ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে। অন্যটি হলো বামপন্থী ধারা—কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে। আরও ছোট ছোট ধারা ছিল। কিন্তু মূল দুটি ধারা ও অন্য ধারাগুলো একাত্তর সালে একটি জায়গায় এসে মিলিত হয়েছিল। ফলে অনন্য একজাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটা বড় অবদান রেখেছে। এই নির্বাচনের রায় কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসকেরা যখন গড়িমসি করা শুরু করলেন, তখন আমরা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, ‘পুরো পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল তোমরা যদি বাস্তবায়ন করতে না দাও, তাহলে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করে হলেও আমরা জনগণের ভোটের রায় কার্যকর করব।’ সেটা ছিল স্বাধীনতার ঘোষণার সমতুল্য একটা ব্যাপার।
১ মার্চ যখন অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়া হলো, তখন আর আমাদের অপেক্ষা করার কোনো জায়গা ছিল না। এর আগে আমাদের নেতা কমরেড মণি সিংহ বলেছিলেন, ‘তোমাদের স্যালুট জানাই। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তোমরা বড় সংগ্রাম করেছ। তবে মনে রাখবা, এটা হলো ড্রেস রিহার্সাল। আসল বড় সংগ্রাম সামনে আছে।’ তিনি আসলে সশস্ত্র যুদ্ধের ইঙ্গিত করেছিলেন। সুতরাং আমরা সেভাবেই তৈরি হচ্ছিলাম।
১ মার্চ আমার অনার্স পরীক্ষার একটা বিষয় বাকি ছিল। সেই দিন মুহসীন হলের ৬৬০ নম্বর রুম বন্ধ করে যে দুপুরবেলা বের হয়ে গেলাম আর ফিরে এলাম মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে।
২৫ মার্চের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় গিয়ে পৌঁছালাম। কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের ট্রেনিং শুরু হলো। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নের একটা বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করা হয়। প্রথম ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেলাম আমি। পরে আমরা বেস ক্যাম্প করে, ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে দেশের ভেতরে কাজ শুরু করলাম।
আজকের পত্রিকা: সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের দেশ গড়ার স্লোগান কি ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: খুবই স্বাভাবিকভাবে সেটা একটা বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল; যাতে ছাত্রসমাজের বিপুল সমর্থন পাই। আমাদের স্লোগান ছিল—‘বেয়নেটকে লাঙলের ফলায় পরিণত কর’; ‘লাখো শহীদের রক্তে মুক্ত স্বদেশ, এসো হে এবার দেশ গড়ি’। তবে কিছু কিছু ছাত্রসংগঠন এসবকে নরম স্লোগান হিসেবে চিহ্নিত করে টিটকারি করত। কিন্তু দেশ গড়ার সংগ্রাম যে সংঘাতবিহীন কোনো কিছু নয়, পরের অনেক ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেশ গড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ১৭ ডিসেম্বর দেশে ঢুকেছি আর ২ জানুয়ারি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং করে আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি। এর মধ্যে একটা পদক্ষেপ ছিল স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করা। ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আমরা একটা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলাম।
আমি এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলাম। সেখানে নিচ থেকে ওপর ক্লাস পর্যন্ত সিলেবাস কেমন হবে এবং কত সময় ধরে কোন বিষয় পড়ানো হবে, তা বিস্তৃত উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশগুলো পরবর্তী সময়ে ‘কুদরাত-এ-খুদা’ কমিশন গ্রহণ করেছিল।
আমাদের কিছু উদ্যোগ সংঘাতের দিকে গিয়েছিল। রেশন কার্ড উদ্ধার, দুর্নীতি বন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার-সমর্থকদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ দেখা দেয়। মানবমুক্তির প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে দেশে দেশে যে মুক্তিসংগ্রাম চলেছে, তার প্রতি সংহতি জানানোর জন্য ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ভিয়েতনাম সংহতি দিবস পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমাদের দুজন ছাত্র মতিউল-কাদের মারা যায়। এর প্রতিবাদে প্রবল আন্দোলন হয়। আমরা যতগুলো দাবি করেছিলাম, সরকার তা মেনে নেয়।
আজকের পত্রিকা: স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নীতি-কৌশল কি ঠিক ছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মনে হয়, কিছু ভুল অবশ্যই ছিল। তবে শুধু বঙ্গবন্ধুর একার নয়, আমাদের সবারই ভুল ছিল। এর একটি হলো, হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ে আত্মহারা হয়ে যে সাংস্কৃতিক বা মতাদর্শগত বিপ্লব শুরু করা উচিত ছিল, সে কথাটা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে অনেক শক্তির জায়গা যেমন ছিল, তেমনি কতগুলো ঘাটতির জায়গাও ছিল। সেই অবহেলার দায় এখনো আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো, প্রতিটি ইতিহাসের মধ্যে একটা কনটিনিউটি থাকে আবার ডিস-কনটিনিউটি থাকে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ডিস-কনটিনিউটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর পুরোনো পেনাল কোড থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রসহ সবকিছু আগের মতোই বহাল রাখলাম। এটারই কনটিনিউটি চলতে থাকল।
একপর্যায়ে আমরা দেখতে পেলাম, সমাজের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে গেল। একদিকে সমাজতন্ত্রের অভিমুখীনতার কথা বলা হলো, অন্যদিকে নব্য ধনিক শ্রেণি গড়ে উঠল। বঙ্গবন্ধুর তাঁর দলের ঊর্ধ্বে কোনো ব্যক্তির পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই দল আবার শ্রেণি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারল না। সুতরাং যতই প্রগতিশীল নীতি নেওয়া হোক না কেন, প্রতিটি কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ বাধা দেওয়া শুরু করল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি সরাসরি মোকাবিলা করলেন না। এখানেই ছিল তাঁর দুর্বলতা।
এরপর তিনি একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন। আমরা কিন্তু আগেই বলেছিলাম, পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যাওয়া ঠিক হবে না। ১৭ ডিসেম্বরের পরেই আমাদের প্রস্তাব ছিল সবাইকে নিয়ে একটা বিপ্লবী সরকার গঠন করার। এরপর স্বাধীনতাকে সংহত করার
পর পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যেতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনো কিছুই আমলে নেননি। এ রকম আরও কিছু ভুল ছিল।
আজকের পত্রিকা: সিপিবি ও ন্যাপ তো সেই সময়ে এসব ভুলের কথা বলেনি। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমি মনে করি, আমাদের পার্টির নীতিও সে সময় আংশিকভাবে ভুল ছিল। স্বাধীনতা সংহত করতে হবে—আমাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা সংহত করার জন্য আমাদের জনগণের সামনে এসে বলা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারকে যদি আপনাদের পছন্দ না হয়, তাহলে সিপিবি ও ন্যাপ আছে। আমরাই বিকল্প পার্টি। আমাদের পেছনে আসুন। আমরা এটা না করে ঐক্য ও সংগ্রাম ধরে রেখেছিলাম। যেটা আমাদের প্রস্তাবে ছিল। কিন্তু ঐক্যটা বেশি করেছি, সংগ্রামটা সেভাবে করিনি; বিশেষ করে নিজেদের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিনি। ফলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না এবং মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোও রক্ষা করতে পারলাম না। তবে এই ভুল আমরা সংশোধন করে নিয়েছি এবং প্রকাশ্যভাবে বলেছি, ওই অবস্থায় আর ফিরে যাব না। এখন আমরা স্বাধীন অবস্থান থেকে আমাদের রাজনীতি করে যাব। সমাজতন্ত্র অভিমুখীন একটা সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ যাতে পরিচালিত হয়, এর জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

আজকের পত্রিকা: আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা শুধু একাত্তর সালে অনুসন্ধান করে পাওয়া যাবে না। যাঁরা মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ শুধু একাত্তর সালের ৯ মাসের, তাঁরা সঠিক ন্যারেটিভ দিচ্ছেন না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু ৯ মাসের ব্যাপার ছিল না। অনেক আগে থেকেই নানা ঘটনা, আন্দোলন এবং বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছে। আমি একটি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাঁরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আত্মাহুতি দিয়েছেন ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন তাঁদের আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলব না কেন? তাঁরা তো দেশমাতৃকার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।
আমাদের ইতিহাস কি শুধু ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয়েছিল? এভাবে ভাবাটা কিন্তু অনৈতিহাসিক। এ ধরনের বিকৃতির দিকে যদি আমরা আমাদের ইতিহাসকে নিক্ষেপ করি, তাহলে ইতিহাসের মূল জায়গা বুঝতে পারব না।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমার মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে ওঠে এবং জাতীয় মুক্তি ও শ্রেণি মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমার মধ্যে দৃঢ় হতে থাকে। এভাবে স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর আমার মধ্যে রাজনৈতিক ভাবনার সূচনা হয়। আমার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ হলো, এই সবকিছুর ধারাবাহিকতা।
আজকের পত্রিকা: কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মধ্যে কীভাবে মুক্তির বীজটা অঙ্কুরিত হলো? প্রবল দেশপ্রেম, বাঙালির আত্মপরিচয় এবং বিদেশি শাসন-শোষণ এবং তাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের আঘাত করছে, যা ধীরে ধীরে আমাকে প্রতিবাদী করে তুলেছে। শ্রমের প্রতি মর্যাদা, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয় তা ঠিক নয়। কারণ তারা এক অর্থে আমার চেয়ে জ্ঞানী, শ্রমটা যে আমার আয়ত্তের মধ্যে নেই। তাঁদের তুচ্ছ করা উচিত নয়। অন্যদিকে ইতিহাস পাঠ। শুধু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, পৃথিবীর দেশে দেশে নিজের জাতিকে ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই পরিচালনা করেছেন জুলিয়াস ফুচিকসহ আরও বিখ্যাত বীরদের জীবনকাহিনি পাঠ করে এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার ভিত্তিতে আমার ভেতরে মুক্তির চেতনা জন্ম নেয়।
আর আগাগোড়া আমি মুক্তিযুদ্ধটাকে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা হিসেবে দেখিনি। মানব অস্তিত্বের এবং মানব পরিচয়ের মুক্তি হিসেবে এটাকে দেখেছি। সে জন্য আমি আমার সব শক্তি এবং সামর্থ্য নিবেদন করেছি মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এই সংগ্রামই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত একাত্তরে উপনীত হয়। তখন আমরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ শুরু করলাম।
এর ইমিডিয়েট পটভূমি যদি বলি, সেটাও কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়নি। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি স্রোতোধারা পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। একটা বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারা—এটা আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবুর রহমান ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে। অন্যটি হলো বামপন্থী ধারা—কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে। আরও ছোট ছোট ধারা ছিল। কিন্তু মূল দুটি ধারা ও অন্য ধারাগুলো একাত্তর সালে একটি জায়গায় এসে মিলিত হয়েছিল। ফলে অনন্য একজাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটা বড় অবদান রেখেছে। এই নির্বাচনের রায় কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসকেরা যখন গড়িমসি করা শুরু করলেন, তখন আমরা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, ‘পুরো পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল তোমরা যদি বাস্তবায়ন করতে না দাও, তাহলে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করে হলেও আমরা জনগণের ভোটের রায় কার্যকর করব।’ সেটা ছিল স্বাধীনতার ঘোষণার সমতুল্য একটা ব্যাপার।
১ মার্চ যখন অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়া হলো, তখন আর আমাদের অপেক্ষা করার কোনো জায়গা ছিল না। এর আগে আমাদের নেতা কমরেড মণি সিংহ বলেছিলেন, ‘তোমাদের স্যালুট জানাই। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তোমরা বড় সংগ্রাম করেছ। তবে মনে রাখবা, এটা হলো ড্রেস রিহার্সাল। আসল বড় সংগ্রাম সামনে আছে।’ তিনি আসলে সশস্ত্র যুদ্ধের ইঙ্গিত করেছিলেন। সুতরাং আমরা সেভাবেই তৈরি হচ্ছিলাম।
১ মার্চ আমার অনার্স পরীক্ষার একটা বিষয় বাকি ছিল। সেই দিন মুহসীন হলের ৬৬০ নম্বর রুম বন্ধ করে যে দুপুরবেলা বের হয়ে গেলাম আর ফিরে এলাম মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে।
২৫ মার্চের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় গিয়ে পৌঁছালাম। কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের ট্রেনিং শুরু হলো। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নের একটা বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করা হয়। প্রথম ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেলাম আমি। পরে আমরা বেস ক্যাম্প করে, ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে দেশের ভেতরে কাজ শুরু করলাম।
আজকের পত্রিকা: সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের দেশ গড়ার স্লোগান কি ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: খুবই স্বাভাবিকভাবে সেটা একটা বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল; যাতে ছাত্রসমাজের বিপুল সমর্থন পাই। আমাদের স্লোগান ছিল—‘বেয়নেটকে লাঙলের ফলায় পরিণত কর’; ‘লাখো শহীদের রক্তে মুক্ত স্বদেশ, এসো হে এবার দেশ গড়ি’। তবে কিছু কিছু ছাত্রসংগঠন এসবকে নরম স্লোগান হিসেবে চিহ্নিত করে টিটকারি করত। কিন্তু দেশ গড়ার সংগ্রাম যে সংঘাতবিহীন কোনো কিছু নয়, পরের অনেক ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেশ গড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ১৭ ডিসেম্বর দেশে ঢুকেছি আর ২ জানুয়ারি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং করে আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি। এর মধ্যে একটা পদক্ষেপ ছিল স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করা। ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আমরা একটা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলাম।
আমি এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলাম। সেখানে নিচ থেকে ওপর ক্লাস পর্যন্ত সিলেবাস কেমন হবে এবং কত সময় ধরে কোন বিষয় পড়ানো হবে, তা বিস্তৃত উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশগুলো পরবর্তী সময়ে ‘কুদরাত-এ-খুদা’ কমিশন গ্রহণ করেছিল।
আমাদের কিছু উদ্যোগ সংঘাতের দিকে গিয়েছিল। রেশন কার্ড উদ্ধার, দুর্নীতি বন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার-সমর্থকদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ দেখা দেয়। মানবমুক্তির প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে দেশে দেশে যে মুক্তিসংগ্রাম চলেছে, তার প্রতি সংহতি জানানোর জন্য ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ভিয়েতনাম সংহতি দিবস পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমাদের দুজন ছাত্র মতিউল-কাদের মারা যায়। এর প্রতিবাদে প্রবল আন্দোলন হয়। আমরা যতগুলো দাবি করেছিলাম, সরকার তা মেনে নেয়।
আজকের পত্রিকা: স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নীতি-কৌশল কি ঠিক ছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মনে হয়, কিছু ভুল অবশ্যই ছিল। তবে শুধু বঙ্গবন্ধুর একার নয়, আমাদের সবারই ভুল ছিল। এর একটি হলো, হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ে আত্মহারা হয়ে যে সাংস্কৃতিক বা মতাদর্শগত বিপ্লব শুরু করা উচিত ছিল, সে কথাটা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে অনেক শক্তির জায়গা যেমন ছিল, তেমনি কতগুলো ঘাটতির জায়গাও ছিল। সেই অবহেলার দায় এখনো আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো, প্রতিটি ইতিহাসের মধ্যে একটা কনটিনিউটি থাকে আবার ডিস-কনটিনিউটি থাকে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ডিস-কনটিনিউটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর পুরোনো পেনাল কোড থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রসহ সবকিছু আগের মতোই বহাল রাখলাম। এটারই কনটিনিউটি চলতে থাকল।
একপর্যায়ে আমরা দেখতে পেলাম, সমাজের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে গেল। একদিকে সমাজতন্ত্রের অভিমুখীনতার কথা বলা হলো, অন্যদিকে নব্য ধনিক শ্রেণি গড়ে উঠল। বঙ্গবন্ধুর তাঁর দলের ঊর্ধ্বে কোনো ব্যক্তির পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই দল আবার শ্রেণি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারল না। সুতরাং যতই প্রগতিশীল নীতি নেওয়া হোক না কেন, প্রতিটি কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ বাধা দেওয়া শুরু করল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি সরাসরি মোকাবিলা করলেন না। এখানেই ছিল তাঁর দুর্বলতা।
এরপর তিনি একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন। আমরা কিন্তু আগেই বলেছিলাম, পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যাওয়া ঠিক হবে না। ১৭ ডিসেম্বরের পরেই আমাদের প্রস্তাব ছিল সবাইকে নিয়ে একটা বিপ্লবী সরকার গঠন করার। এরপর স্বাধীনতাকে সংহত করার
পর পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যেতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনো কিছুই আমলে নেননি। এ রকম আরও কিছু ভুল ছিল।
আজকের পত্রিকা: সিপিবি ও ন্যাপ তো সেই সময়ে এসব ভুলের কথা বলেনি। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমি মনে করি, আমাদের পার্টির নীতিও সে সময় আংশিকভাবে ভুল ছিল। স্বাধীনতা সংহত করতে হবে—আমাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা সংহত করার জন্য আমাদের জনগণের সামনে এসে বলা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারকে যদি আপনাদের পছন্দ না হয়, তাহলে সিপিবি ও ন্যাপ আছে। আমরাই বিকল্প পার্টি। আমাদের পেছনে আসুন। আমরা এটা না করে ঐক্য ও সংগ্রাম ধরে রেখেছিলাম। যেটা আমাদের প্রস্তাবে ছিল। কিন্তু ঐক্যটা বেশি করেছি, সংগ্রামটা সেভাবে করিনি; বিশেষ করে নিজেদের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিনি। ফলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না এবং মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোও রক্ষা করতে পারলাম না। তবে এই ভুল আমরা সংশোধন করে নিয়েছি এবং প্রকাশ্যভাবে বলেছি, ওই অবস্থায় আর ফিরে যাব না। এখন আমরা স্বাধীন অবস্থান থেকে আমাদের রাজনীতি করে যাব। সমাজতন্ত্র অভিমুখীন একটা সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ যাতে পরিচালিত হয়, এর জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

আজকের পত্রিকা: আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা শুধু একাত্তর সালে অনুসন্ধান করে পাওয়া যাবে না। যাঁরা মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ শুধু একাত্তর সালের ৯ মাসের, তাঁরা সঠিক ন্যারেটিভ দিচ্ছেন না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু ৯ মাসের ব্যাপার ছিল না। অনেক আগে থেকেই নানা ঘটনা, আন্দোলন এবং বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছে। আমি একটি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাঁরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আত্মাহুতি দিয়েছেন ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন তাঁদের আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলব না কেন? তাঁরা তো দেশমাতৃকার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।
আমাদের ইতিহাস কি শুধু ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয়েছিল? এভাবে ভাবাটা কিন্তু অনৈতিহাসিক। এ ধরনের বিকৃতির দিকে যদি আমরা আমাদের ইতিহাসকে নিক্ষেপ করি, তাহলে ইতিহাসের মূল জায়গা বুঝতে পারব না।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমার মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে ওঠে এবং জাতীয় মুক্তি ও শ্রেণি মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমার মধ্যে দৃঢ় হতে থাকে। এভাবে স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর আমার মধ্যে রাজনৈতিক ভাবনার সূচনা হয়। আমার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ হলো, এই সবকিছুর ধারাবাহিকতা।
আজকের পত্রিকা: কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মধ্যে কীভাবে মুক্তির বীজটা অঙ্কুরিত হলো? প্রবল দেশপ্রেম, বাঙালির আত্মপরিচয় এবং বিদেশি শাসন-শোষণ এবং তাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের আঘাত করছে, যা ধীরে ধীরে আমাকে প্রতিবাদী করে তুলেছে। শ্রমের প্রতি মর্যাদা, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয় তা ঠিক নয়। কারণ তারা এক অর্থে আমার চেয়ে জ্ঞানী, শ্রমটা যে আমার আয়ত্তের মধ্যে নেই। তাঁদের তুচ্ছ করা উচিত নয়। অন্যদিকে ইতিহাস পাঠ। শুধু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, পৃথিবীর দেশে দেশে নিজের জাতিকে ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই পরিচালনা করেছেন জুলিয়াস ফুচিকসহ আরও বিখ্যাত বীরদের জীবনকাহিনি পাঠ করে এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার ভিত্তিতে আমার ভেতরে মুক্তির চেতনা জন্ম নেয়।
আর আগাগোড়া আমি মুক্তিযুদ্ধটাকে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা হিসেবে দেখিনি। মানব অস্তিত্বের এবং মানব পরিচয়ের মুক্তি হিসেবে এটাকে দেখেছি। সে জন্য আমি আমার সব শক্তি এবং সামর্থ্য নিবেদন করেছি মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এই সংগ্রামই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত একাত্তরে উপনীত হয়। তখন আমরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ শুরু করলাম।
এর ইমিডিয়েট পটভূমি যদি বলি, সেটাও কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়নি। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি স্রোতোধারা পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। একটা বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারা—এটা আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবুর রহমান ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে। অন্যটি হলো বামপন্থী ধারা—কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে। আরও ছোট ছোট ধারা ছিল। কিন্তু মূল দুটি ধারা ও অন্য ধারাগুলো একাত্তর সালে একটি জায়গায় এসে মিলিত হয়েছিল। ফলে অনন্য একজাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটা বড় অবদান রেখেছে। এই নির্বাচনের রায় কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসকেরা যখন গড়িমসি করা শুরু করলেন, তখন আমরা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, ‘পুরো পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল তোমরা যদি বাস্তবায়ন করতে না দাও, তাহলে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করে হলেও আমরা জনগণের ভোটের রায় কার্যকর করব।’ সেটা ছিল স্বাধীনতার ঘোষণার সমতুল্য একটা ব্যাপার।
১ মার্চ যখন অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়া হলো, তখন আর আমাদের অপেক্ষা করার কোনো জায়গা ছিল না। এর আগে আমাদের নেতা কমরেড মণি সিংহ বলেছিলেন, ‘তোমাদের স্যালুট জানাই। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তোমরা বড় সংগ্রাম করেছ। তবে মনে রাখবা, এটা হলো ড্রেস রিহার্সাল। আসল বড় সংগ্রাম সামনে আছে।’ তিনি আসলে সশস্ত্র যুদ্ধের ইঙ্গিত করেছিলেন। সুতরাং আমরা সেভাবেই তৈরি হচ্ছিলাম।
১ মার্চ আমার অনার্স পরীক্ষার একটা বিষয় বাকি ছিল। সেই দিন মুহসীন হলের ৬৬০ নম্বর রুম বন্ধ করে যে দুপুরবেলা বের হয়ে গেলাম আর ফিরে এলাম মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে।
২৫ মার্চের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় গিয়ে পৌঁছালাম। কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের ট্রেনিং শুরু হলো। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নের একটা বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করা হয়। প্রথম ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেলাম আমি। পরে আমরা বেস ক্যাম্প করে, ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে দেশের ভেতরে কাজ শুরু করলাম।
আজকের পত্রিকা: সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের দেশ গড়ার স্লোগান কি ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: খুবই স্বাভাবিকভাবে সেটা একটা বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল; যাতে ছাত্রসমাজের বিপুল সমর্থন পাই। আমাদের স্লোগান ছিল—‘বেয়নেটকে লাঙলের ফলায় পরিণত কর’; ‘লাখো শহীদের রক্তে মুক্ত স্বদেশ, এসো হে এবার দেশ গড়ি’। তবে কিছু কিছু ছাত্রসংগঠন এসবকে নরম স্লোগান হিসেবে চিহ্নিত করে টিটকারি করত। কিন্তু দেশ গড়ার সংগ্রাম যে সংঘাতবিহীন কোনো কিছু নয়, পরের অনেক ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেশ গড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ১৭ ডিসেম্বর দেশে ঢুকেছি আর ২ জানুয়ারি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং করে আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি। এর মধ্যে একটা পদক্ষেপ ছিল স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করা। ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আমরা একটা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলাম।
আমি এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলাম। সেখানে নিচ থেকে ওপর ক্লাস পর্যন্ত সিলেবাস কেমন হবে এবং কত সময় ধরে কোন বিষয় পড়ানো হবে, তা বিস্তৃত উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশগুলো পরবর্তী সময়ে ‘কুদরাত-এ-খুদা’ কমিশন গ্রহণ করেছিল।
আমাদের কিছু উদ্যোগ সংঘাতের দিকে গিয়েছিল। রেশন কার্ড উদ্ধার, দুর্নীতি বন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার-সমর্থকদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ দেখা দেয়। মানবমুক্তির প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে দেশে দেশে যে মুক্তিসংগ্রাম চলেছে, তার প্রতি সংহতি জানানোর জন্য ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ভিয়েতনাম সংহতি দিবস পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমাদের দুজন ছাত্র মতিউল-কাদের মারা যায়। এর প্রতিবাদে প্রবল আন্দোলন হয়। আমরা যতগুলো দাবি করেছিলাম, সরকার তা মেনে নেয়।
আজকের পত্রিকা: স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নীতি-কৌশল কি ঠিক ছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমার মনে হয়, কিছু ভুল অবশ্যই ছিল। তবে শুধু বঙ্গবন্ধুর একার নয়, আমাদের সবারই ভুল ছিল। এর একটি হলো, হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ে আত্মহারা হয়ে যে সাংস্কৃতিক বা মতাদর্শগত বিপ্লব শুরু করা উচিত ছিল, সে কথাটা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে অনেক শক্তির জায়গা যেমন ছিল, তেমনি কতগুলো ঘাটতির জায়গাও ছিল। সেই অবহেলার দায় এখনো আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো, প্রতিটি ইতিহাসের মধ্যে একটা কনটিনিউটি থাকে আবার ডিস-কনটিনিউটি থাকে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ডিস-কনটিনিউটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর পুরোনো পেনাল কোড থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রসহ সবকিছু আগের মতোই বহাল রাখলাম। এটারই কনটিনিউটি চলতে থাকল।
একপর্যায়ে আমরা দেখতে পেলাম, সমাজের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে গেল। একদিকে সমাজতন্ত্রের অভিমুখীনতার কথা বলা হলো, অন্যদিকে নব্য ধনিক শ্রেণি গড়ে উঠল। বঙ্গবন্ধুর তাঁর দলের ঊর্ধ্বে কোনো ব্যক্তির পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই দল আবার শ্রেণি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারল না। সুতরাং যতই প্রগতিশীল নীতি নেওয়া হোক না কেন, প্রতিটি কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ বাধা দেওয়া শুরু করল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি সরাসরি মোকাবিলা করলেন না। এখানেই ছিল তাঁর দুর্বলতা।
এরপর তিনি একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন। আমরা কিন্তু আগেই বলেছিলাম, পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যাওয়া ঠিক হবে না। ১৭ ডিসেম্বরের পরেই আমাদের প্রস্তাব ছিল সবাইকে নিয়ে একটা বিপ্লবী সরকার গঠন করার। এরপর স্বাধীনতাকে সংহত করার
পর পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যেতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনো কিছুই আমলে নেননি। এ রকম আরও কিছু ভুল ছিল।
আজকের পত্রিকা: সিপিবি ও ন্যাপ তো সেই সময়ে এসব ভুলের কথা বলেনি। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমি মনে করি, আমাদের পার্টির নীতিও সে সময় আংশিকভাবে ভুল ছিল। স্বাধীনতা সংহত করতে হবে—আমাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা সংহত করার জন্য আমাদের জনগণের সামনে এসে বলা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারকে যদি আপনাদের পছন্দ না হয়, তাহলে সিপিবি ও ন্যাপ আছে। আমরাই বিকল্প পার্টি। আমাদের পেছনে আসুন। আমরা এটা না করে ঐক্য ও সংগ্রাম ধরে রেখেছিলাম। যেটা আমাদের প্রস্তাবে ছিল। কিন্তু ঐক্যটা বেশি করেছি, সংগ্রামটা সেভাবে করিনি; বিশেষ করে নিজেদের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিনি। ফলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না এবং মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোও রক্ষা করতে পারলাম না। তবে এই ভুল আমরা সংশোধন করে নিয়েছি এবং প্রকাশ্যভাবে বলেছি, ওই অবস্থায় আর ফিরে যাব না। এখন আমরা স্বাধীন অবস্থান থেকে আমাদের রাজনীতি করে যাব। সমাজতন্ত্র অভিমুখীন একটা সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ যাতে পরিচালিত হয়, এর জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
০৩ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
০৩ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
০৩ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
০৩ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫