Ajker Patrika

বিদ্যুৎ বিপর্যয় কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১০: ০৪
Thumbnail image

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পেছনে কর্মকর্তাদের ভয়ানক অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তারা এই বিপর্যয়ের জন্য জাতীয় গ্রিডের লোড ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করেছে। ঝুঁকি জেনেও গ্রিডে অতিরিক্ত লোড দিয়েছিলেন ওই কর্মকর্তারা।

৪ অক্টোবরের গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনায় গঠিত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তদন্ত কমিটি আজ রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবে বলে জানা গেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল শনিবার নাম প্রকাশ না করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৪ অক্টোবর গ্রিডের যে বিপর্যয় হয়েছে, তাতে গ্রিডে বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িতদের ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁদের চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

পিজিসিবির তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেসকোসহ অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের লোডের যে চাহিদা পিজিসিবির ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাস সেন্টারকে (এনএলডিসি) দিয়েছিল, সেটা না মেনে সেখানকার কর্মকর্তারা অতিরিক্ত লোড গ্রিডে দিয়ে দেন। এতে বিদ্যুতের লোড ও গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় গ্রিড ট্রিপ করে যায়। বিদ্যুতের লোড ও ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে সমন্বয় হবে না, এটা জেনেও তখন এনএলডিসিতে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা এই ঘটনা ঘটান।

তদন্তসংশ্লিষ্টদের বরাতে আরও জানা গেছে, গ্রিডের লোড ব্যবস্থাপনায় এনএলডিসি পেশাদারি দেখাতে পারেনি। তাদের গাফিলতির কারণে দেশের অর্ধেক মানুষ সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল। বিদ্যুতের লোড কত হবে, এটা নিয়ে আগে থেকে ধারণা থাকা সত্ত্বেও এনএলডিসি গ্রিডে অতিরিক্ত লোড দিয়ে দেয়। 

বিদ্যুতের মতো একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনায় যাঁরা সেদিন জড়িত ছিলেন, তাঁদের গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমি বলেছি, যারা এই বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িত তাঁদের নাম চিহ্নিত করে আমাকে রোববারের মধ্যে জানাতে। আমরা গ্রিড বিপর্যয়ের এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ইতিমধ্যে পিজিসিবি জড়িতদের চিহ্নিত করেছে। তদন্ত রিপোর্ট রোববার (আজ) পাওয়ার পর যাঁরা জড়িত, তাঁদের চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। একই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধ আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’

৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের গ্রাহকেরা বিদ্যুৎবিহীন ছিলেন পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা। এ নিয়ে এক মাসের কম ব্যবধানে জাতীয় গ্রিডে দ্বিতীয়বার বিপর্যয় ঘটে। এর আগে ৬ সেপ্টেম্বরে গ্রিড ট্রিপ করার কারণে বিদ্যুৎবিহীন ছিল রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত