Ajker Patrika

শ্রমিক-সংকট, বিপাকে কৃষক

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১৫: ১১
শ্রমিক-সংকট, বিপাকে কৃষক

মধুপুরের মুক্ষ্যগাঙ্গাইর গ্রামের কৃষক নাজিম উদ্দিন। পাঁচ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। ফলন হয়েছে বেশ ভালো। ঘূর্ণিঝড় অশনিতে ক্ষতির আশঙ্কায় সংগ্রহের উপযোগী আড়াই বিঘা (৭৫ শতাংশ) জমির ধান দ্রুত কাটার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির পাশের জমি থেকে ধান কাটার জন্য চুক্তি করেছিলেন ১৩ হাজার ৫০০ টাকায়। ধান কাটা শুরুও করেছিলেন শ্রমিকেরা। তবে আকাশ মেঘলা হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যান তাঁরা। ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র না থাকায় শ্রমিকের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে। টাকা দিয়েও মিলছে না নতুন শ্রমিক। তাই জমির ধান কাটা নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি।

শুধু নাজিম উদ্দিন নন, তাঁর মতো শ্রমিকসংকটের কারণে বিপদে পড়েছেন উপজেলার অন্যান্য গ্রামের কৃষকেরাও। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কেটে বাড়িতে তুলছেন। কিন্তু দূরের জমির ধান সংগ্রহের জন্য শ্রমিকের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

মধুপুর পৌরশহরের নরকোনা গ্রামের কৃষক আব্দুল গণি। তিনি শ্রমিকের উচ্চমূল্য দেখে সন্তানদের নিয়েই খেতের ধান অনেকটা কেটে ফেলেছেন। সন্তানেরা কর্মস্থলে যোগ দেওয়ায় বাকি ধান সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে। জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ৩ বেলা খাবার দেওয়ার শর্তেও শ্রমিক সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।

মধুপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার জানান, চলতি মৌসুমে মধুপুর উপজেলায় ১২ হাজার ৯৯৭ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। শ্রমিকসংকটে মহাবিপদে পড়েছেন মধুপুরের কৃষকেরা। অশনির পূর্বাভাসের আতঙ্ক বিপদকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

ধান কাটা শ্রমিকের অপ্রতুলতার কারণ জানিয়ে উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, ঝড়ের কারণে মাঠে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় রমজানের মধ্যেই সারা দেশে একযোগে ধান কাটা শুরু হয়। এ কারণে শ্রমিকসংকট বেশি দেখা দিয়েছে। এই সংকট কাটাতে বেশ কয়েক দিন লাগবে।

এদিকে ধানের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন কৃষকেরা। যাঁরা সম্ভ্রান্ত চাষি, তাঁরা ধান গোলায় তুলে রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর স্বল্প আয়ের কৃষকেরা বাধ্য হয়ে ধান বিক্রি করছেন কম দামেই।

আশুরা গ্রামের আছর আলী বলেন, ‘বাড়ির পাশের জমির ধান সন্তানদের নিয়ে কেটে বাড়িতে এনেছি। ধানের দাম ৬০০ টাকা মণ। তাই ধান সেদ্ধ করছি শুকিয়ে রেখে দেওয়ার জন্য।’

কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, বাধ্য হয়ে তিনি অনেক তোষামোদ করে ৬৫০ টাকা দরে কিছু ধান বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারেরা ধান নিতেই চান না। তাঁরা বলছেন, মিলাররা ধান নিচ্ছেন না। আমরা ধান কিনে কী করব? এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরি সংগ্রহ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, মধুপুর উপজেলায় ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর। কৃষি বিভাগের কর্মীদের পরামর্শ, সহযোগিতা ও কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন স্থানের নমুনা শস্য কেটে দেখা গেছে, প্রতি হেক্টরে ৬ টনের বেশি ফলন হয়েছে। এখন ধান সংগ্রহে সমস্যায় পড়েছেন কৃষক। সরকার হারভেস্টর মেশিন (ধান কাটার যন্ত্র) সরবরাহ করলেও এই মেশিনে ধান কাটায় কৃষকদের আগ্রহ কম।

হারভেস্টর মেশিনের মালিক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘মেশিনের সাহায্যে ধান কাটলে কৃষকেরা খড়ের সংকটে পড়বেন—এই ভাবনা থেকে তাঁরা মেশিনে ধান কাটতে আগ্রহী হন না। বড় চাষি ছাড়া কেউ আমাদের ধান কাটার জন্য ডাকেন না। শ্রমিকসংকটের এই মুহূর্তে নিজেরা অথবা শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন তাঁরা।’

কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মেশিনে ধান কাটায় সময় কম লাগে। খরচও কম হয়। কিন্তু আমাদের গরুর খড় পাব কই? এখন চারদিকে ঘাসেরও সংকট। খড়ও যদি জোগাড় করে না রাখা হয় তাহলে গবাদিপশু পালন বন্ধ হয়ে যাবে।’

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, খড়ের মাধ্যমে গবাদিপশুর খাবারের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয়। এই চাহিদা পূরণের বিকল্প হিসেবে অব্যবহৃত জায়গায় আধুনিক জাতের ঘাস চাষ করলে সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত