Ajker Patrika

কেরোসিনের দাম বাড়ায় কঠিন পরিস্থিতিতে তারা

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১১: ০৩
কেরোসিনের দাম বাড়ায় কঠিন পরিস্থিতিতে তারা

রায়ের বাজারের চাপা রানী এখন আর গ্যাসের চুলায় রান্না করেন না। গত মাসে গ্যাসের দাম বাড়ায় তিনি মাটির চুলায় কাঠ ও কাগজ জ্বালিয়ে রান্না করেন। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁকে। চাপা রানী জানান, আগে গ্যাসের চুলায় রান্না করতেন। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ায় সেই চুলা ঘরের কোনায় সরিয়ে রেখেছেন। এখন মাটির চুলায় আগুন ধরাতে কেরোসিন ব্যবহার করেন। সেই কেরোসিনের দামও হঠাৎ বেড়েছে। এতে ভোগান্তিই বাড়ল।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত বুধবার রাত ১০টায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে। যা গত

বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

করোনায় মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক শোচনীয় হয়েছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকের রোজগার কমেছে। কাজ না থাকায় অনেকে গ্রামে ফিরেছেন। এর মধ্যে দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।

দাম তো সব সময় বাড়ে, কোনো কিছুর দাম কমছে—এটা খুব কমই শুনেছি। যাঁরা কেরোসিন তেল ব্যবহার করেন, তাঁরা কষ্ট হলেও কিনবেন। আর আমরা বিক্রেতারা নির্দিষ্ট দামে কিনে নির্দিষ্ট দামেই বিক্রি করব। খুব নির্লিপ্তভাবে কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদপুরের দোকানি মুনির আহমেদ। দোকানে নিত্য সামগ্রীর পাশাপাশি কেরোসিন তেল রাখেন তিনি। কারণ এই এলাকায় এমন অনেকেই আছেন যাঁরা কেরোসিন তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। ফুটপাতের চায়ের দোকান বা শীতকালীন পিঠার দোকানে জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার হয়।

ঢাকা উদ্যানের একটি বস্তিতে থাকেন রাবেয়া। স্বামী রিকশাচালক। ছয় বছর আগে গার্মেন্টসে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় একটি হাত কাটা পড়ে রাবেয়ার। এরপর আর কোনো কাজ জোটেনি। এখন শুধু স্বামীর রোজগারেই সংসার চলে। তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে। রাবেয়া বলেন, তিনি কাগজ, নষ্ট টায়ার, কাঠ কিংবা গাছের ডাল কুড়িয়ে এনে রান্না করেন। কিন্তু চুলায় আগুন জ্বালাতে তিনি কেরোসিন ব্যবহার করেন। করোনার এই কালে অন্য পণ্যের সঙ্গে হঠাৎ কেরোসিনের দাম বাড়ায় তাঁদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

রাবেয়া বলেন, এইটা দিয়া বড়জোর আর তিনবেলা রান্না হইব। সামান্য রান্না করার জন্যও কেরোসিন কেনা লাগব। কী করুম! কিনুম। না খাইয়া তো আর বাঁচতে পারুম না। রাবেয়া জানান, তাঁর আশপাশের প্রতিটি বাড়িতে রান্নার কাজে কেরোসিন ব্যবহার হয়।

এলপিজির পর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের ব্যবহার করা পণ্যগুলোর দাম বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দেশে এভাবে তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার আগে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সরকারের আরও একটু সংবেদনশীল আচরণ করার উচিত ছিল।

জ্বালানি তেলের দাম যেন স্থিতিশীল থাকে সে ক্ষেত্রে নীতিগত পদক্ষেপও নেওয়া উচিত। যখন জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কম ছিল, তখন আমাদের দেশে তেলের দাম অনেক বেশি ছিল। সরকারি সংস্থাগুলো তখন হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। সেই লাভের অর্থ দিয়ে তহবিল গঠন করা হলে এখন সেই তহবিল ব্যবহার করে এখন তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যেত। তাহলে এখন এমন জন দুর্ভোগের সৃষ্টি হতো না বলে মনে করছেন গোলাম রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত