মামুনুর রশীদ

স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না। পাকিস্তান আমল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিদেশি পরামর্শ পেয়ে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশনে দেশের নদ-নদীকে বিপন্ন করে বন্যার পথ উন্মুক্ত করেছে। মোগল আমলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই উপমহাদেশে কোনো বন্যার ইতিহাস পাওয়া যায় না। খনার বচনেও বা তারও আগে বন্যার কোনো আভাস দেখা যায় না। মূলত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় রেললাইন প্রতিষ্ঠার পর বন্যা হতে শুরু করে। পরবর্তীকালে নদ-নদীকে নানা রকমভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বন্যা বাড়তে থাকে।
পাকিস্তান আমলে ওয়াপদা নামক এক বিশাল জলহস্তী বন্যা তো কমাতে পারেইনি; বরং তা এক রাক্ষসে রূপ নিয়েছিল। ওয়াপদা নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার আগে সারা দেশে যেখানে নদীর উপস্থিতি আছে সেখানে সুদৃশ্য ও বিশাল রেস্টহাউসের বাংলো গড়ে তোলে। রীতিমতো তখন প্রকৌশলীদের অভাব দেখা দেয়। প্যারাসিটামলের মতো নানা ধরনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় কোটি কোটি টাকার অর্থ অপচয় করে। এই সব প্রকৌশলী নেদারল্যান্ডসে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন কিন্তু সেই দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর কোনো প্রয়োগ নিজের দেশে করেন না।
নেদারল্যান্ডস বন্যার সঙ্গে সহাবস্থান করে এবং আমস্টারডাম শহরে অসংখ্য খাল, নালাকে রক্ষা করে বন্যাকে থামিয়ে দেয়। বাংলাদেশেও অসংখ্য নদ-নদী। এই নদ-নদীর সঙ্গে আমাদের কৃষিভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থার কোনো সংযোগ সৃষ্টি না করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। নদী নিরবধি আপন বেগে পাগলপারা। নদীর এই প্রবাহকে রুদ্ধ করতে গেলেই সে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। দুই কূল ভেঙে চুরমার করতে শুরু করে। ফলে লাখ লাখ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে, বিভিন্ন শহরে চিরদিনের জন্য আশ্রয় নেয় পরিবারগুলো। একেকটি বাড়িঘর চোখের পলকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যার মধ্যে আছে রেললাইন, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। দেশে এখন একাধিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে পানি উন্নয়নের জন্য বিভাগও আছে; যার মধ্যে ডক্টরেট করা অনেক শিক্ষকও আছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা প্রতিরোধের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান বের করতে পারেননি।
আমাদের দেশের মতো চীনেও বন্যা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। চীন তার একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করতে পেরেছে। আমাদের এই উপমহাদেশে পানি একটি রাজনৈতিক বিষয়। ভারতকে কাবু করতে পাকিস্তান পাঞ্জাবে বাঁধ দিয়ে ফেলে। আবার পাকিস্তানকে কাবু করতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ফারাক্কায় বাঁধ দিতে ভুল করেনি ভারত। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিও পানিভিত্তিক রাজনীতির অবসান হয়নি। তিস্তার পানি উত্তরবঙ্গের দুঃখ হয়ে চোখের জলের সঙ্গে যুক্ত হয়। আবার নির্বাচনের রাজনীতিতে পানি একটা ভূমিকা পালন করে। যেসব জেলায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা থাকেন, সেখানে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করা হয়। ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ না করেই রাস্তা হয়ে যায়। ফলে পানিকে এক মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে নয় মাইল জায়গা ঘুরে আসতে হয়। যার ফলে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এমনি অনেক উদাহরণ আছে।
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দিন দিন গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে এই ঢাকা শহরে কোনো বন্যার আভাস পাওয়া যায় না। কারণ ঢাকা শহরে ছিল নানা ধরনের খাল এবং খালের পানি অবলীলায় বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ত। যোগাযোগের বড় মাধ্যম ছিল নৌকা। পাকিস্তান আমলে এই খালগুলো বন্ধ করে দেওয়ার একটা পাঁয়তারা শুরু করা হয়। আমরাই দেখেছি ধোলাইখালের পানিপ্রবাহ ঢাকা শহরের সব ময়লা-আবর্জনা বুড়িগঙ্গায় নিয়ে ফেলে দিচ্ছে। আর্মেনিয়ান অধিবাসীদের সৃষ্ট এ খালটি ঢাকা শহরের একটি মূল্যবান পানিপ্রবাহের ব্যবস্থায় নিয়োজিত ছিল। আবার বিদেশি পরামর্শকদের বুদ্ধিতে এবং আর্থিক সাহায্যে ধোলাইখাল বন্ধ করে দিয়ে ভূগর্ভে বড় বড় পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং বড় বড় পাম্প দিয়ে নারিন্দা থেকে তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা করা হয়। এই পাইপগুলো ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যায় এবং একসময় নারিন্দা পাম্পিং স্টেশনটিও অকেজো হয়ে যায়।

অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জোয়ারে পানিপ্রবাহের কথা নগরের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মিউনিসিপ্যালিটি এবং পরে সিটি করপোরেশন ভুলেই যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ভুলে যাওয়ার ফলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা এক কঠিন সংকটে পড়ে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের যে ব্যবস্থা এক শ বছর আগেও ছিল, তাকে রুদ্ধ করে দিয়ে ঢাকা শহর একটি জলাবদ্ধ শহরে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর একটি উঁচু-নিচু পাহাড়ের শহর। পাশেই বঙ্গোপসাগর। শহরটাকে চারদিক থেকে আঁকড়ে ধরে আছে কর্ণফুলী নদী। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের জন্য কিছু প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি। সেই ব্যবস্থায় না গিয়ে অদূরদর্শী পরিকল্পনার ফলে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামে এক জটিল আকার ধারণ করেছে। গত বছরে পানিনিষ্কাশনের পথে মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। বন্যার সময় দক্ষিণবঙ্গের গ্রামগুলো থেকে ক্রমাগত একই কথা শোনা যায়, বাঁধ ভেঙে তাঁদের এই দুর্দশার কারণগুলো ঘটছে এবং বাঁধ নির্মাণে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি সহজেই ধরা পড়ছে।
এবারে অন্যান্য বারের চেয়েও অনেক বেশি প্রতাপ নিয়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না। তিন-চারতলা ভবনও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানির শক্তিকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখনো হয়নি। আগুন, পানি ও বাতাস তিনটি প্রাকৃতিক শক্তি। এই তিন প্রাকৃতিক শক্তি এখন বাংলাদেশের মানুষের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই উদাসীন। এটি যে একটি জনপদের এক বড় সমস্যা, তা তারা যেন আমলেই নিতে চায় না। অথচ বড় বড় শহরে দেখেছি রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানুষগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। সূর্য ওঠার আগেই বর্জ্য যথাস্থানে চলে যায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় এই বর্জ্যগুলো সম্পদে পরিণত হয়। একবার পলিথিন নিয়ন্ত্রণে সরকারকে খুব তৎপর দেখা গিয়েছিল। অপচনশীল এই বস্তুটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে; অথচ বিষয়টি এখন এমন শিথিল যে সর্বত্রই প্লাস্টিকের জয়যাত্রা। বন্যা এলে আমরা খুব তৎপর হই, নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াই। কিন্তু বন্যা চলে গেলে আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি।
কয়েক দিন ধরে সারা বিশ্বের প্রচারমাধ্যমে বন্যার নানা রকম ছবি ফলাও করে ছাপা হয়েছে। ফলে বিশ্বের একটি ধারণা হয় যে এ দেশটি অনুন্নত সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও রাজনীতির দেশ। আমাদের এই গ্রহেই যে আরও কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান আছে, তা আর কেউ ভাবে না। একবার আমার একটি নাটক জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়ে জার্মানরা অভিনয় করছিলেন। বিশাল বিশাল পোস্টার দেওয়া হয়েছিল বার্লিনের রেলস্টেশন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। আমার পাশে দাঁড়িয়ে একজন জার্মান পোস্টারটি দেখছিলেন এবং আমার দিকে হঠাৎ তাকিয়ে তিনি হয়তো অনুভব করলেন আমি সেই দেশেরই মানুষ, কাছে এগিয়ে আসতেই আমি আমার পরিচয় দিলাম।
সেটি ১৯৮৯ সাল। জার্মান ভদ্রলোক বললেন, তোমার দেশে কোনো শিল্প-সাহিত্য আছে? আমরা তো জানি দেশটি বন্যা, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ আর মিলিটারি ডিকটেটরদের দেশ। আমি তাঁকে ব্যাখ্যা করলাম এবং তিনি নাটক দেখতে এলেন। নাটক প্রদর্শনীর শেষে দেখলাম তাঁর হাতে জার্মান ভাষায় অনূদিত আমার নাটকের একটি বই। তিনি বললেন, আজকে আমি বুঝলাম তোমাদের দেশটিতে একটি উন্নত সংস্কৃতিও আছে। কিন্তু রাজনীতির অতল বঞ্চনায় তোমরা একটা অচলায়তনে বসবাস করছ। তখন দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলছে। আমি সেই ছবিগুলো তাঁকে দেখালাম। সেই জার্মান ভদ্রলোক এত বছর পরেও যদি আমাদের বানভাসি মানুষের ছবিগুলো দেখেন তাহলে কি একই কথা বলবেন?

স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না। পাকিস্তান আমল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিদেশি পরামর্শ পেয়ে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশনে দেশের নদ-নদীকে বিপন্ন করে বন্যার পথ উন্মুক্ত করেছে। মোগল আমলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই উপমহাদেশে কোনো বন্যার ইতিহাস পাওয়া যায় না। খনার বচনেও বা তারও আগে বন্যার কোনো আভাস দেখা যায় না। মূলত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় রেললাইন প্রতিষ্ঠার পর বন্যা হতে শুরু করে। পরবর্তীকালে নদ-নদীকে নানা রকমভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বন্যা বাড়তে থাকে।
পাকিস্তান আমলে ওয়াপদা নামক এক বিশাল জলহস্তী বন্যা তো কমাতে পারেইনি; বরং তা এক রাক্ষসে রূপ নিয়েছিল। ওয়াপদা নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার আগে সারা দেশে যেখানে নদীর উপস্থিতি আছে সেখানে সুদৃশ্য ও বিশাল রেস্টহাউসের বাংলো গড়ে তোলে। রীতিমতো তখন প্রকৌশলীদের অভাব দেখা দেয়। প্যারাসিটামলের মতো নানা ধরনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় কোটি কোটি টাকার অর্থ অপচয় করে। এই সব প্রকৌশলী নেদারল্যান্ডসে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন কিন্তু সেই দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর কোনো প্রয়োগ নিজের দেশে করেন না।
নেদারল্যান্ডস বন্যার সঙ্গে সহাবস্থান করে এবং আমস্টারডাম শহরে অসংখ্য খাল, নালাকে রক্ষা করে বন্যাকে থামিয়ে দেয়। বাংলাদেশেও অসংখ্য নদ-নদী। এই নদ-নদীর সঙ্গে আমাদের কৃষিভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থার কোনো সংযোগ সৃষ্টি না করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। নদী নিরবধি আপন বেগে পাগলপারা। নদীর এই প্রবাহকে রুদ্ধ করতে গেলেই সে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। দুই কূল ভেঙে চুরমার করতে শুরু করে। ফলে লাখ লাখ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে, বিভিন্ন শহরে চিরদিনের জন্য আশ্রয় নেয় পরিবারগুলো। একেকটি বাড়িঘর চোখের পলকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যার মধ্যে আছে রেললাইন, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। দেশে এখন একাধিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে পানি উন্নয়নের জন্য বিভাগও আছে; যার মধ্যে ডক্টরেট করা অনেক শিক্ষকও আছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা প্রতিরোধের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান বের করতে পারেননি।
আমাদের দেশের মতো চীনেও বন্যা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। চীন তার একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করতে পেরেছে। আমাদের এই উপমহাদেশে পানি একটি রাজনৈতিক বিষয়। ভারতকে কাবু করতে পাকিস্তান পাঞ্জাবে বাঁধ দিয়ে ফেলে। আবার পাকিস্তানকে কাবু করতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ফারাক্কায় বাঁধ দিতে ভুল করেনি ভারত। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিও পানিভিত্তিক রাজনীতির অবসান হয়নি। তিস্তার পানি উত্তরবঙ্গের দুঃখ হয়ে চোখের জলের সঙ্গে যুক্ত হয়। আবার নির্বাচনের রাজনীতিতে পানি একটা ভূমিকা পালন করে। যেসব জেলায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা থাকেন, সেখানে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করা হয়। ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ না করেই রাস্তা হয়ে যায়। ফলে পানিকে এক মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে নয় মাইল জায়গা ঘুরে আসতে হয়। যার ফলে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এমনি অনেক উদাহরণ আছে।
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দিন দিন গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে এই ঢাকা শহরে কোনো বন্যার আভাস পাওয়া যায় না। কারণ ঢাকা শহরে ছিল নানা ধরনের খাল এবং খালের পানি অবলীলায় বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ত। যোগাযোগের বড় মাধ্যম ছিল নৌকা। পাকিস্তান আমলে এই খালগুলো বন্ধ করে দেওয়ার একটা পাঁয়তারা শুরু করা হয়। আমরাই দেখেছি ধোলাইখালের পানিপ্রবাহ ঢাকা শহরের সব ময়লা-আবর্জনা বুড়িগঙ্গায় নিয়ে ফেলে দিচ্ছে। আর্মেনিয়ান অধিবাসীদের সৃষ্ট এ খালটি ঢাকা শহরের একটি মূল্যবান পানিপ্রবাহের ব্যবস্থায় নিয়োজিত ছিল। আবার বিদেশি পরামর্শকদের বুদ্ধিতে এবং আর্থিক সাহায্যে ধোলাইখাল বন্ধ করে দিয়ে ভূগর্ভে বড় বড় পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং বড় বড় পাম্প দিয়ে নারিন্দা থেকে তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা করা হয়। এই পাইপগুলো ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যায় এবং একসময় নারিন্দা পাম্পিং স্টেশনটিও অকেজো হয়ে যায়।

অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জোয়ারে পানিপ্রবাহের কথা নগরের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মিউনিসিপ্যালিটি এবং পরে সিটি করপোরেশন ভুলেই যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ভুলে যাওয়ার ফলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা এক কঠিন সংকটে পড়ে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের যে ব্যবস্থা এক শ বছর আগেও ছিল, তাকে রুদ্ধ করে দিয়ে ঢাকা শহর একটি জলাবদ্ধ শহরে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর একটি উঁচু-নিচু পাহাড়ের শহর। পাশেই বঙ্গোপসাগর। শহরটাকে চারদিক থেকে আঁকড়ে ধরে আছে কর্ণফুলী নদী। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের জন্য কিছু প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি। সেই ব্যবস্থায় না গিয়ে অদূরদর্শী পরিকল্পনার ফলে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামে এক জটিল আকার ধারণ করেছে। গত বছরে পানিনিষ্কাশনের পথে মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। বন্যার সময় দক্ষিণবঙ্গের গ্রামগুলো থেকে ক্রমাগত একই কথা শোনা যায়, বাঁধ ভেঙে তাঁদের এই দুর্দশার কারণগুলো ঘটছে এবং বাঁধ নির্মাণে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি সহজেই ধরা পড়ছে।
এবারে অন্যান্য বারের চেয়েও অনেক বেশি প্রতাপ নিয়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না। তিন-চারতলা ভবনও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানির শক্তিকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখনো হয়নি। আগুন, পানি ও বাতাস তিনটি প্রাকৃতিক শক্তি। এই তিন প্রাকৃতিক শক্তি এখন বাংলাদেশের মানুষের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই উদাসীন। এটি যে একটি জনপদের এক বড় সমস্যা, তা তারা যেন আমলেই নিতে চায় না। অথচ বড় বড় শহরে দেখেছি রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানুষগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। সূর্য ওঠার আগেই বর্জ্য যথাস্থানে চলে যায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় এই বর্জ্যগুলো সম্পদে পরিণত হয়। একবার পলিথিন নিয়ন্ত্রণে সরকারকে খুব তৎপর দেখা গিয়েছিল। অপচনশীল এই বস্তুটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে; অথচ বিষয়টি এখন এমন শিথিল যে সর্বত্রই প্লাস্টিকের জয়যাত্রা। বন্যা এলে আমরা খুব তৎপর হই, নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াই। কিন্তু বন্যা চলে গেলে আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি।
কয়েক দিন ধরে সারা বিশ্বের প্রচারমাধ্যমে বন্যার নানা রকম ছবি ফলাও করে ছাপা হয়েছে। ফলে বিশ্বের একটি ধারণা হয় যে এ দেশটি অনুন্নত সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও রাজনীতির দেশ। আমাদের এই গ্রহেই যে আরও কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান আছে, তা আর কেউ ভাবে না। একবার আমার একটি নাটক জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়ে জার্মানরা অভিনয় করছিলেন। বিশাল বিশাল পোস্টার দেওয়া হয়েছিল বার্লিনের রেলস্টেশন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। আমার পাশে দাঁড়িয়ে একজন জার্মান পোস্টারটি দেখছিলেন এবং আমার দিকে হঠাৎ তাকিয়ে তিনি হয়তো অনুভব করলেন আমি সেই দেশেরই মানুষ, কাছে এগিয়ে আসতেই আমি আমার পরিচয় দিলাম।
সেটি ১৯৮৯ সাল। জার্মান ভদ্রলোক বললেন, তোমার দেশে কোনো শিল্প-সাহিত্য আছে? আমরা তো জানি দেশটি বন্যা, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ আর মিলিটারি ডিকটেটরদের দেশ। আমি তাঁকে ব্যাখ্যা করলাম এবং তিনি নাটক দেখতে এলেন। নাটক প্রদর্শনীর শেষে দেখলাম তাঁর হাতে জার্মান ভাষায় অনূদিত আমার নাটকের একটি বই। তিনি বললেন, আজকে আমি বুঝলাম তোমাদের দেশটিতে একটি উন্নত সংস্কৃতিও আছে। কিন্তু রাজনীতির অতল বঞ্চনায় তোমরা একটা অচলায়তনে বসবাস করছ। তখন দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলছে। আমি সেই ছবিগুলো তাঁকে দেখালাম। সেই জার্মান ভদ্রলোক এত বছর পরেও যদি আমাদের বানভাসি মানুষের ছবিগুলো দেখেন তাহলে কি একই কথা বলবেন?

মামুনুর রশীদ

স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না। পাকিস্তান আমল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিদেশি পরামর্শ পেয়ে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশনে দেশের নদ-নদীকে বিপন্ন করে বন্যার পথ উন্মুক্ত করেছে। মোগল আমলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই উপমহাদেশে কোনো বন্যার ইতিহাস পাওয়া যায় না। খনার বচনেও বা তারও আগে বন্যার কোনো আভাস দেখা যায় না। মূলত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় রেললাইন প্রতিষ্ঠার পর বন্যা হতে শুরু করে। পরবর্তীকালে নদ-নদীকে নানা রকমভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বন্যা বাড়তে থাকে।
পাকিস্তান আমলে ওয়াপদা নামক এক বিশাল জলহস্তী বন্যা তো কমাতে পারেইনি; বরং তা এক রাক্ষসে রূপ নিয়েছিল। ওয়াপদা নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার আগে সারা দেশে যেখানে নদীর উপস্থিতি আছে সেখানে সুদৃশ্য ও বিশাল রেস্টহাউসের বাংলো গড়ে তোলে। রীতিমতো তখন প্রকৌশলীদের অভাব দেখা দেয়। প্যারাসিটামলের মতো নানা ধরনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় কোটি কোটি টাকার অর্থ অপচয় করে। এই সব প্রকৌশলী নেদারল্যান্ডসে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন কিন্তু সেই দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর কোনো প্রয়োগ নিজের দেশে করেন না।
নেদারল্যান্ডস বন্যার সঙ্গে সহাবস্থান করে এবং আমস্টারডাম শহরে অসংখ্য খাল, নালাকে রক্ষা করে বন্যাকে থামিয়ে দেয়। বাংলাদেশেও অসংখ্য নদ-নদী। এই নদ-নদীর সঙ্গে আমাদের কৃষিভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থার কোনো সংযোগ সৃষ্টি না করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। নদী নিরবধি আপন বেগে পাগলপারা। নদীর এই প্রবাহকে রুদ্ধ করতে গেলেই সে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। দুই কূল ভেঙে চুরমার করতে শুরু করে। ফলে লাখ লাখ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে, বিভিন্ন শহরে চিরদিনের জন্য আশ্রয় নেয় পরিবারগুলো। একেকটি বাড়িঘর চোখের পলকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যার মধ্যে আছে রেললাইন, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। দেশে এখন একাধিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে পানি উন্নয়নের জন্য বিভাগও আছে; যার মধ্যে ডক্টরেট করা অনেক শিক্ষকও আছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা প্রতিরোধের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান বের করতে পারেননি।
আমাদের দেশের মতো চীনেও বন্যা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। চীন তার একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করতে পেরেছে। আমাদের এই উপমহাদেশে পানি একটি রাজনৈতিক বিষয়। ভারতকে কাবু করতে পাকিস্তান পাঞ্জাবে বাঁধ দিয়ে ফেলে। আবার পাকিস্তানকে কাবু করতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ফারাক্কায় বাঁধ দিতে ভুল করেনি ভারত। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিও পানিভিত্তিক রাজনীতির অবসান হয়নি। তিস্তার পানি উত্তরবঙ্গের দুঃখ হয়ে চোখের জলের সঙ্গে যুক্ত হয়। আবার নির্বাচনের রাজনীতিতে পানি একটা ভূমিকা পালন করে। যেসব জেলায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা থাকেন, সেখানে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করা হয়। ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ না করেই রাস্তা হয়ে যায়। ফলে পানিকে এক মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে নয় মাইল জায়গা ঘুরে আসতে হয়। যার ফলে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এমনি অনেক উদাহরণ আছে।
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দিন দিন গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে এই ঢাকা শহরে কোনো বন্যার আভাস পাওয়া যায় না। কারণ ঢাকা শহরে ছিল নানা ধরনের খাল এবং খালের পানি অবলীলায় বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ত। যোগাযোগের বড় মাধ্যম ছিল নৌকা। পাকিস্তান আমলে এই খালগুলো বন্ধ করে দেওয়ার একটা পাঁয়তারা শুরু করা হয়। আমরাই দেখেছি ধোলাইখালের পানিপ্রবাহ ঢাকা শহরের সব ময়লা-আবর্জনা বুড়িগঙ্গায় নিয়ে ফেলে দিচ্ছে। আর্মেনিয়ান অধিবাসীদের সৃষ্ট এ খালটি ঢাকা শহরের একটি মূল্যবান পানিপ্রবাহের ব্যবস্থায় নিয়োজিত ছিল। আবার বিদেশি পরামর্শকদের বুদ্ধিতে এবং আর্থিক সাহায্যে ধোলাইখাল বন্ধ করে দিয়ে ভূগর্ভে বড় বড় পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং বড় বড় পাম্প দিয়ে নারিন্দা থেকে তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা করা হয়। এই পাইপগুলো ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যায় এবং একসময় নারিন্দা পাম্পিং স্টেশনটিও অকেজো হয়ে যায়।

অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জোয়ারে পানিপ্রবাহের কথা নগরের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মিউনিসিপ্যালিটি এবং পরে সিটি করপোরেশন ভুলেই যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ভুলে যাওয়ার ফলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা এক কঠিন সংকটে পড়ে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের যে ব্যবস্থা এক শ বছর আগেও ছিল, তাকে রুদ্ধ করে দিয়ে ঢাকা শহর একটি জলাবদ্ধ শহরে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর একটি উঁচু-নিচু পাহাড়ের শহর। পাশেই বঙ্গোপসাগর। শহরটাকে চারদিক থেকে আঁকড়ে ধরে আছে কর্ণফুলী নদী। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের জন্য কিছু প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি। সেই ব্যবস্থায় না গিয়ে অদূরদর্শী পরিকল্পনার ফলে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামে এক জটিল আকার ধারণ করেছে। গত বছরে পানিনিষ্কাশনের পথে মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। বন্যার সময় দক্ষিণবঙ্গের গ্রামগুলো থেকে ক্রমাগত একই কথা শোনা যায়, বাঁধ ভেঙে তাঁদের এই দুর্দশার কারণগুলো ঘটছে এবং বাঁধ নির্মাণে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি সহজেই ধরা পড়ছে।
এবারে অন্যান্য বারের চেয়েও অনেক বেশি প্রতাপ নিয়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না। তিন-চারতলা ভবনও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানির শক্তিকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখনো হয়নি। আগুন, পানি ও বাতাস তিনটি প্রাকৃতিক শক্তি। এই তিন প্রাকৃতিক শক্তি এখন বাংলাদেশের মানুষের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই উদাসীন। এটি যে একটি জনপদের এক বড় সমস্যা, তা তারা যেন আমলেই নিতে চায় না। অথচ বড় বড় শহরে দেখেছি রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানুষগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। সূর্য ওঠার আগেই বর্জ্য যথাস্থানে চলে যায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় এই বর্জ্যগুলো সম্পদে পরিণত হয়। একবার পলিথিন নিয়ন্ত্রণে সরকারকে খুব তৎপর দেখা গিয়েছিল। অপচনশীল এই বস্তুটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে; অথচ বিষয়টি এখন এমন শিথিল যে সর্বত্রই প্লাস্টিকের জয়যাত্রা। বন্যা এলে আমরা খুব তৎপর হই, নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াই। কিন্তু বন্যা চলে গেলে আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি।
কয়েক দিন ধরে সারা বিশ্বের প্রচারমাধ্যমে বন্যার নানা রকম ছবি ফলাও করে ছাপা হয়েছে। ফলে বিশ্বের একটি ধারণা হয় যে এ দেশটি অনুন্নত সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও রাজনীতির দেশ। আমাদের এই গ্রহেই যে আরও কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান আছে, তা আর কেউ ভাবে না। একবার আমার একটি নাটক জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়ে জার্মানরা অভিনয় করছিলেন। বিশাল বিশাল পোস্টার দেওয়া হয়েছিল বার্লিনের রেলস্টেশন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। আমার পাশে দাঁড়িয়ে একজন জার্মান পোস্টারটি দেখছিলেন এবং আমার দিকে হঠাৎ তাকিয়ে তিনি হয়তো অনুভব করলেন আমি সেই দেশেরই মানুষ, কাছে এগিয়ে আসতেই আমি আমার পরিচয় দিলাম।
সেটি ১৯৮৯ সাল। জার্মান ভদ্রলোক বললেন, তোমার দেশে কোনো শিল্প-সাহিত্য আছে? আমরা তো জানি দেশটি বন্যা, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ আর মিলিটারি ডিকটেটরদের দেশ। আমি তাঁকে ব্যাখ্যা করলাম এবং তিনি নাটক দেখতে এলেন। নাটক প্রদর্শনীর শেষে দেখলাম তাঁর হাতে জার্মান ভাষায় অনূদিত আমার নাটকের একটি বই। তিনি বললেন, আজকে আমি বুঝলাম তোমাদের দেশটিতে একটি উন্নত সংস্কৃতিও আছে। কিন্তু রাজনীতির অতল বঞ্চনায় তোমরা একটা অচলায়তনে বসবাস করছ। তখন দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলছে। আমি সেই ছবিগুলো তাঁকে দেখালাম। সেই জার্মান ভদ্রলোক এত বছর পরেও যদি আমাদের বানভাসি মানুষের ছবিগুলো দেখেন তাহলে কি একই কথা বলবেন?

স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না। পাকিস্তান আমল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিদেশি পরামর্শ পেয়ে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশনে দেশের নদ-নদীকে বিপন্ন করে বন্যার পথ উন্মুক্ত করেছে। মোগল আমলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই উপমহাদেশে কোনো বন্যার ইতিহাস পাওয়া যায় না। খনার বচনেও বা তারও আগে বন্যার কোনো আভাস দেখা যায় না। মূলত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় রেললাইন প্রতিষ্ঠার পর বন্যা হতে শুরু করে। পরবর্তীকালে নদ-নদীকে নানা রকমভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বন্যা বাড়তে থাকে।
পাকিস্তান আমলে ওয়াপদা নামক এক বিশাল জলহস্তী বন্যা তো কমাতে পারেইনি; বরং তা এক রাক্ষসে রূপ নিয়েছিল। ওয়াপদা নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার আগে সারা দেশে যেখানে নদীর উপস্থিতি আছে সেখানে সুদৃশ্য ও বিশাল রেস্টহাউসের বাংলো গড়ে তোলে। রীতিমতো তখন প্রকৌশলীদের অভাব দেখা দেয়। প্যারাসিটামলের মতো নানা ধরনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় কোটি কোটি টাকার অর্থ অপচয় করে। এই সব প্রকৌশলী নেদারল্যান্ডসে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন কিন্তু সেই দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর কোনো প্রয়োগ নিজের দেশে করেন না।
নেদারল্যান্ডস বন্যার সঙ্গে সহাবস্থান করে এবং আমস্টারডাম শহরে অসংখ্য খাল, নালাকে রক্ষা করে বন্যাকে থামিয়ে দেয়। বাংলাদেশেও অসংখ্য নদ-নদী। এই নদ-নদীর সঙ্গে আমাদের কৃষিভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থার কোনো সংযোগ সৃষ্টি না করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। নদী নিরবধি আপন বেগে পাগলপারা। নদীর এই প্রবাহকে রুদ্ধ করতে গেলেই সে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। দুই কূল ভেঙে চুরমার করতে শুরু করে। ফলে লাখ লাখ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে, বিভিন্ন শহরে চিরদিনের জন্য আশ্রয় নেয় পরিবারগুলো। একেকটি বাড়িঘর চোখের পলকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যার মধ্যে আছে রেললাইন, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। দেশে এখন একাধিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে পানি উন্নয়নের জন্য বিভাগও আছে; যার মধ্যে ডক্টরেট করা অনেক শিক্ষকও আছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা প্রতিরোধের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান বের করতে পারেননি।
আমাদের দেশের মতো চীনেও বন্যা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। চীন তার একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করতে পেরেছে। আমাদের এই উপমহাদেশে পানি একটি রাজনৈতিক বিষয়। ভারতকে কাবু করতে পাকিস্তান পাঞ্জাবে বাঁধ দিয়ে ফেলে। আবার পাকিস্তানকে কাবু করতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ফারাক্কায় বাঁধ দিতে ভুল করেনি ভারত। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিও পানিভিত্তিক রাজনীতির অবসান হয়নি। তিস্তার পানি উত্তরবঙ্গের দুঃখ হয়ে চোখের জলের সঙ্গে যুক্ত হয়। আবার নির্বাচনের রাজনীতিতে পানি একটা ভূমিকা পালন করে। যেসব জেলায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা থাকেন, সেখানে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করা হয়। ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ না করেই রাস্তা হয়ে যায়। ফলে পানিকে এক মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে নয় মাইল জায়গা ঘুরে আসতে হয়। যার ফলে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এমনি অনেক উদাহরণ আছে।
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দিন দিন গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে এই ঢাকা শহরে কোনো বন্যার আভাস পাওয়া যায় না। কারণ ঢাকা শহরে ছিল নানা ধরনের খাল এবং খালের পানি অবলীলায় বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ত। যোগাযোগের বড় মাধ্যম ছিল নৌকা। পাকিস্তান আমলে এই খালগুলো বন্ধ করে দেওয়ার একটা পাঁয়তারা শুরু করা হয়। আমরাই দেখেছি ধোলাইখালের পানিপ্রবাহ ঢাকা শহরের সব ময়লা-আবর্জনা বুড়িগঙ্গায় নিয়ে ফেলে দিচ্ছে। আর্মেনিয়ান অধিবাসীদের সৃষ্ট এ খালটি ঢাকা শহরের একটি মূল্যবান পানিপ্রবাহের ব্যবস্থায় নিয়োজিত ছিল। আবার বিদেশি পরামর্শকদের বুদ্ধিতে এবং আর্থিক সাহায্যে ধোলাইখাল বন্ধ করে দিয়ে ভূগর্ভে বড় বড় পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং বড় বড় পাম্প দিয়ে নারিন্দা থেকে তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা করা হয়। এই পাইপগুলো ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যায় এবং একসময় নারিন্দা পাম্পিং স্টেশনটিও অকেজো হয়ে যায়।

অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জোয়ারে পানিপ্রবাহের কথা নগরের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মিউনিসিপ্যালিটি এবং পরে সিটি করপোরেশন ভুলেই যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ভুলে যাওয়ার ফলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা এক কঠিন সংকটে পড়ে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের যে ব্যবস্থা এক শ বছর আগেও ছিল, তাকে রুদ্ধ করে দিয়ে ঢাকা শহর একটি জলাবদ্ধ শহরে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর একটি উঁচু-নিচু পাহাড়ের শহর। পাশেই বঙ্গোপসাগর। শহরটাকে চারদিক থেকে আঁকড়ে ধরে আছে কর্ণফুলী নদী। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের জন্য কিছু প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি। সেই ব্যবস্থায় না গিয়ে অদূরদর্শী পরিকল্পনার ফলে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামে এক জটিল আকার ধারণ করেছে। গত বছরে পানিনিষ্কাশনের পথে মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। বন্যার সময় দক্ষিণবঙ্গের গ্রামগুলো থেকে ক্রমাগত একই কথা শোনা যায়, বাঁধ ভেঙে তাঁদের এই দুর্দশার কারণগুলো ঘটছে এবং বাঁধ নির্মাণে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি সহজেই ধরা পড়ছে।
এবারে অন্যান্য বারের চেয়েও অনেক বেশি প্রতাপ নিয়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না। তিন-চারতলা ভবনও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানির শক্তিকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখনো হয়নি। আগুন, পানি ও বাতাস তিনটি প্রাকৃতিক শক্তি। এই তিন প্রাকৃতিক শক্তি এখন বাংলাদেশের মানুষের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই উদাসীন। এটি যে একটি জনপদের এক বড় সমস্যা, তা তারা যেন আমলেই নিতে চায় না। অথচ বড় বড় শহরে দেখেছি রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানুষগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। সূর্য ওঠার আগেই বর্জ্য যথাস্থানে চলে যায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় এই বর্জ্যগুলো সম্পদে পরিণত হয়। একবার পলিথিন নিয়ন্ত্রণে সরকারকে খুব তৎপর দেখা গিয়েছিল। অপচনশীল এই বস্তুটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে; অথচ বিষয়টি এখন এমন শিথিল যে সর্বত্রই প্লাস্টিকের জয়যাত্রা। বন্যা এলে আমরা খুব তৎপর হই, নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াই। কিন্তু বন্যা চলে গেলে আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি।
কয়েক দিন ধরে সারা বিশ্বের প্রচারমাধ্যমে বন্যার নানা রকম ছবি ফলাও করে ছাপা হয়েছে। ফলে বিশ্বের একটি ধারণা হয় যে এ দেশটি অনুন্নত সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও রাজনীতির দেশ। আমাদের এই গ্রহেই যে আরও কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান আছে, তা আর কেউ ভাবে না। একবার আমার একটি নাটক জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়ে জার্মানরা অভিনয় করছিলেন। বিশাল বিশাল পোস্টার দেওয়া হয়েছিল বার্লিনের রেলস্টেশন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। আমার পাশে দাঁড়িয়ে একজন জার্মান পোস্টারটি দেখছিলেন এবং আমার দিকে হঠাৎ তাকিয়ে তিনি হয়তো অনুভব করলেন আমি সেই দেশেরই মানুষ, কাছে এগিয়ে আসতেই আমি আমার পরিচয় দিলাম।
সেটি ১৯৮৯ সাল। জার্মান ভদ্রলোক বললেন, তোমার দেশে কোনো শিল্প-সাহিত্য আছে? আমরা তো জানি দেশটি বন্যা, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ আর মিলিটারি ডিকটেটরদের দেশ। আমি তাঁকে ব্যাখ্যা করলাম এবং তিনি নাটক দেখতে এলেন। নাটক প্রদর্শনীর শেষে দেখলাম তাঁর হাতে জার্মান ভাষায় অনূদিত আমার নাটকের একটি বই। তিনি বললেন, আজকে আমি বুঝলাম তোমাদের দেশটিতে একটি উন্নত সংস্কৃতিও আছে। কিন্তু রাজনীতির অতল বঞ্চনায় তোমরা একটা অচলায়তনে বসবাস করছ। তখন দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলছে। আমি সেই ছবিগুলো তাঁকে দেখালাম। সেই জার্মান ভদ্রলোক এত বছর পরেও যদি আমাদের বানভাসি মানুষের ছবিগুলো দেখেন তাহলে কি একই কথা বলবেন?


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না।
৩০ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না।
৩০ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না।
৩০ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছিল সুরমা উপত্যকায়। সিলেট অঞ্চলে এ বছরই আরও দুটি বন্যা হয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যা মানুষ, প্রাণিজগৎ সবাইকে এমন বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছিল না।
৩০ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫