Ajker Patrika

দখলে বিপন্ন সন্ধ্যা নদী

মো. শামীমুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৪: ২৬
Thumbnail image

দখলের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাটের সন্ধ্যা নদী। পয়সারহাট বন্দর ও সেতুর দুই পাশেই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে নির্মাণ করেছেন পাকা স্থাপনা ও ঘের। এতে সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি নদী হারিয়েছে নাব্য। সাত বছর ধরে ঢাকা-পয়সারহাট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। দখলমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

নদী কমিশন থেকে নদীর দখলদারদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা থাকলেও আগৈলঝাড়ায় সন্ধ্যা নদীর দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা সম্পন্ন করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণকারী মাসুদ ফকির নদী দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি সন্ধ্যা নদী দখল করেননি। ওই জায়গা তাঁদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা নদীর আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট এলাকায় ১০০ বছর আগে গড়ে উঠে বরিশালের অন্যতম বড় বন্দর। নদীর তীর ঘেঁষে দুই পাড়ে এখানে হাজার খানেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে পয়সারহাট-ঢাকা চারটি বড় লঞ্চ চলাচল করত। নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় সাত বছর ধরে ঢাকা-পয়সারহাট লঞ্চ চলাচল বন্ধ। ফলে বিপাকে পড়েছেন পয়সারহাট বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় লোকজন জানান, এক সময় সন্ধ্যা নদী খুবই খরস্রোতা ও প্রশস্ত ছিল। অনেক গভীর ছিল সন্ধ্যার পয়সারহাট এলাকা। এ নদীকে ঘিরেই পয়সারহাট বন্দর জমে উঠেছিল। বর্তমানে সন্ধ্যা নদীর পয়সারহাট এলাকার প্রশস্ততা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামের গাউস বক্তিয়ার, আব্দুর জব্বার তালুকদার, আবুল সিকদার, তাঁর ছেলে কাওছার হোসেন, মাসুদ ফকিরসহ ১০-১২ জন প্রভাবশালী নদীর বিভিন্ন স্থান দখল করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর দুই পাশে বাঁধ দিয়ে দখল করায় দিনদিন নদীটি ছোট হয়ে আসছে। পয়সারহাট সেতুর গোড়ায় পূর্বপাশ থেকে উত্তর দিকে মাসুদ ফকির সন্ধ্যা নদীর পাড় দখল করে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে গাছ লাগানো ও মাছ চাষের জন্য ঘের তৈরি করছেন। সন্ধ্যা নদীর বাগধা বাজার এলাকায় পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি।

পয়সারহাট বন্দরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন সিকদার ও মেহেদী হাসান বলেন, এক সময় নদীতে বড় বড় লঞ্চ চলত। এখন উজিরপুরের বৈঠাঘাটা টার্মিনালে লঞ্চ ভিড়ে। সেখান থেকে ট্রলারে করে মালামাল পয়সারহাট বন্দরে আনতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, দখলের কারণে নদীটি দিনদিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নদীটি নাব্য হারানোর কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নদীটি খনন ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে তাঁরা স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান।

পয়সারহাট বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল খালেক চৌকিদার বলেন, ‘দখল ও নাব্য হারানোর কারণে নদীটি মরে যাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ঘাটে লঞ্চ না আসায় ট্রলারে করে বৈঠাঘাটা থেকে মালপত্র পরিবহনে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাসুদ ফকির বলেন, ‘আমাদের রেকর্ডীয় জায়গায় মাটি কেটে ঘের তৈরি করা হয়েছে। আমরা নদীর জায়গা দখল করিনি।’

আবুল সিকদার বলেন, ‘নদীর পাশে ইট-বালু ট্রলার থেকে নামিয়ে রাখা হচ্ছে কয়েক দিনের জন্য। তারপর আবার বিক্রি হয়ে গেলে সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে তো আর নদী দখল করা হয় না। মালপত্র রাখার জন্য নদীর পাশে একটি জায়গা সমান করা হয়েছে মাত্র।’

কাওছার হোসেন বলেন, ‘চর পড়ে নদী ছোট হয়ে গেছে। সেখানে আমরা দখল করব কেন।’

বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল দাস বলেন, ‘কোনো কোনো দখলদার জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। আমি উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে রেকর্ড না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তারপরও কেউ কেউ রেকর্ড করে নিয়েছেন। নদী দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।’

আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। যে কোনো নদী পরিমাপ করে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দখলদারের তালিকা করা সঠিক হবে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে সন্ধ্যা নদী পরিমাপ করে দখলদারের তালিকা করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত