Ajker Patrika

পাটকল দ্রুত চালুর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ১১: ৩২
Thumbnail image

প্রায় দুই বছর আগে সরকার দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এতে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ ও তিন মাসের মধ্যে কারখানার উৎপাদন চালু করা হবে। কিন্তু এখনো ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা পরিশোধ করা হয়নি।

বিজেএমসি সূত্র বলছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের পাওনা পরিশোধ ও মিল চালুর ব্যবস্থা করা হবে। বন্ধ হওয়া এসব রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানা আধুনিকায়ন করে চালু এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে পাট, সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। গতকাল দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রুহুল আমিন। এতে বলা হয়, একদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন; অপর দিকে এ দেশের অর্থনীতিতে পাট, পাটশিল্প এবং পাটকল শ্রমিকদের রয়েছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ঐতিহাসিক অবদানকে বিবেচনায় না নিয়ে আকস্মিকভাবে ২০২০ সালের ২ জুলাই সরকার দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করে। 
তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা পরিশোধ এবং তিন মাসের মধ্যে কারখানার উৎপাদন চালু করা হবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আজও ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। এমনকি পাটকলগুলো চালুর কোনো সম্ভাবনাও দেশবাসীর কাছে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০১০ সালে প্যাকেজিং আইন করে পরিবেশ ও পাটশিল্পের স্বার্থে প্লাস্টিক ও পলিথিন বন্ধের অভিযান চালানোর ফলে পাটপণ্যের দেড় লক্ষাধিক টনের অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টি হয়েছিল। যার মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু চাহিদা অনুসারে পাটপণ্যের সরবরাহ না থাকায় পুনরায় পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিন ব্যবহার করার ফলে পরিবেশের বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাত থেকে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তরিত ৩৯টি পাটকলের মধ্যে ২৮টি স্থায়ীভাবে বন্ধ ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শতাধিক মিল চালু করা হয়েছে।

সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, এসব মিল মালিকের অদক্ষতার কারণে নিম্নমানের পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব মিল মালিক কোনো প্রকার আইন-কানুন, রীতি-নীতি মানেন না। এসব কারণে ব্যক্তিমালিকানাধীন মৌলিক পাটশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি ইস্পাহানি, এ কে খান এম আর সিদ্দিকী এবং লতিফুর রহমানদের মতো শিল্পপতিরাও পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে মিল চালাতে পারেননি। ঐতিহাসিক পাট ও পাটশিল্প রক্ষা করা আজ শ্রমিকদের প্রয়োজনের পাশাপাশি জাতীয় কর্তব্য।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানিয়ে বলা হয়, সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল, সুতা, বস্ত্র ও চিনিকল আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করে লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ করা হোক। এ লক্ষ্যে অতি দ্রুত ঢাকায় জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। কনভেনশন থেকে দাবিনামা চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পেশ করা হবে। তাঁরা আশা করেন, শ্রমিক, শিল্প ও জাতীয় স্বার্থে সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সরকার এ দাবি মেনে নেবে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

সংগ্রাম পরিষদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাটকল সংস্থার (বিজেএমসি) উপমহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম রব্বানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাদের অভিযোগ সত্য নয়। দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে এবং তিন মাসের মধ্যে কারখানার উৎপাদন চালু করা হবে—এমন কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা হয়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব পাওনা পরিশোধ ও মিল চালুর ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। নাম-ঠিকানাসহ নানা জটিলতায় চার-পাঁচ শ শ্রমিকের পাওনা রয়েছে। তবে জটিলতা দ্রুত নিরসন করে তাঁদের পাওনা পরিশোধের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে দুটি মিল চালু হয়েছে। বাকিগুলোর টেন্ডারে প্রত্যাশিত দর না পাওয়ায় মিল চালুতে দেরি হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলো লিজের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত