Ajker Patrika

বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ধান পচে যাওয়ার আশঙ্কা

শরীফ হাসান, দোহার (ঢাকা)
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১১: ৩৯
Thumbnail image

ঢাকার দোহারে ঈদের দিন থেকে কালবৈশাখী ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পানি জমেছে ধানখেতে। তার ওপর হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে জোয়ারের পানি। অনেকেই আধা পাকা ধান কাটছেন পচে যাওয়ার ভয়ে। শ্রমিকসংকটের কারণে তাঁরা ধান দ্রুত ঘরে তুলতে পারছেন না। এতে তলিয়ে যাওয়া ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

কালবৈশাখীতে দোহারের প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ধানের গাছ নুয়ে পড়েছে। এতে ফলন কমসহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া ধান কাটা শ্রমিকের সংকটে পড়েছেন তাঁরা। কোথাও শ্রমিক পেলেও দিতে হচ্ছে চড়া মজুরি। জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। অনেকেই বেশি মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার মৌড়া, জালালপুর, আড়িয়াল বিল, কোঠাবাড়িরচক, চরকুশাইচক, মাহমুদপুরের চক, শিলাকোঠারচক, ধৌয়াইরের চক, নয়াবাড়ির চকসহ আবাদি জমিতে বোরো ও আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাকা ধানের সোনালি শিষ যেন হাতছানি দিচ্ছিল। নতুন ধানের ম-ম গন্ধে মুখর গ্রামের পর গ্রাম। আশায় বুক বেঁধেছিলেন কৃষকেরা। ধান কাটার আর কটা দিন বাকি মাত্র। ঠিক তার আগ মুহূর্তে প্রথমে উপজেলার মাহমুদপুর, কুসুমহাটি ও বিলাশপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পাকা ও আধা পাকা ধান। তার রেশ কাটতে না কাটতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঈদের দিন থেকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ধানের খেত।

এ বিষয়ে কোঠাবাড়ি গ্রামের কৃষক রহম আলী তালুকদার বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে জেনেছি জোয়ারের পানিতে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এখন আমাগো পালা। টানা বৃষ্টি ও ঈদের ছুটিতে ধান কাটার শ্রমিক এখন কই পাই আপনারাই কন?’

নিকড়া গ্রামের কৃষক সামাদ ব্যাপারী বলেন, ‘অন্য বছর ধান কাটার এক দেড় মাস পর জমিতে পানি আসে। এবার তার আগেই হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে আমাদের মতো কৃষকদের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে। বেশি দামে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে প্রতি মণে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হবে।’

দোহারের আড়িয়াল বিলের কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪৫) বলেন, ‘আমি পাঁচ বিঘা ধান চাষ করেছি। অনেক টাকা খরচ হয়েছে, বৃষ্টির পানিতে অনেক ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ফলন কম হয়েছে। তা ছাড়া শ্রমিকের যে দাম, তা দিয়ে আমাদের হয়তো এবার লাভ হবে না। একজন শ্রমিককে ১ হাজার ১০০ টাকা দিতে হয়, সঙ্গে তিনবেলা খাবার। এ জন্য এখনো অনেকেই ধান কাটা বাকি রেখেছে। আবার সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারলে সব কৃষককে না খেয়েই মরতে হবে।’

ফরিদপুর থেকে আসা শ্রমিক মজনু বলেন, ‘আমরা এখানে ধান কাটতে ২৪ জন এসেছি। আগে থেকেই কথা দিয়েছিলাম মালিকপক্ষকে ধান কেটে দেব। তাই ঈদ চলে যাওয়া পরপরই আমরা ধান কাটতে চলে এসেছি।’

জানতে চাইলে শ্রমিক আজমত বলেন, ‘বৃষ্টির পানি খেতে জমায় ধান কাটতে সমস্যা হচ্ছে। পায়ের নিচে কাদা আর ওপরে সূর্য, গরমে নাকাল অবস্থা আমাগো। এই ধান খেত থেকে কেটে মাড়াই করার জায়গা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া আমাগো দায়িত্ব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলৈ দোহার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মামুন ইয়াকুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, দোহারের তিনটি ইউনিয়নে ধানখেতে পানি ঢুকেছে। এতে কৃষকেরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তার ওপর টানা বৃষ্টি। ফলে ধানখেতে এর প্রভাব পড়েছে। এবার দোহার উপজেলায় ধান চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর। জোয়ারের পানি ও হঠাৎ বৃষ্টিতে ৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিলে দোহারের কৃষকেরাও পাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত