Ajker Patrika

খামার করে এখন বেকায়দায়

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১৪: ০৩
Thumbnail image

নওগাঁর রাণীনগরে দফায় দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ায় কঠিন বেকায়দায় পড়েছেন খামারিরা। অনেকেই খামার বন্ধের কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। মাসখানেক আগে ২৫ কেজির এক বস্তা গোখাদ্যের দাম ছিল ১ হাজার টাকা। এটা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৪০ টাকায়। ৩৫ কেজির ভুসির বস্তা ২৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার ছোট-বড় সব খামারি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় দুধ উৎপাদনকারী খামার রয়েছে প্রায় ২০০টি। গরু মোটাতাজাকরণের খামার রয়েছে প্রায় ৩২০টি ও উপজেলায় ছাগলের খামার রয়েছে ৫৫০টি। এসব খামারের গবাদিপশুর জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হচ্ছে বিপুল পরিমাণের গোখাদ্যের। খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন এসব ছোট-বড় খামারি।

উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অস্বাভাবিকভাবে সব ধরনের গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে খুচরা পর্যায়ে ১ কেজি দানাদার গোখাদ্যের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এখন সেই খাদ্যই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। ভুসি কেজিপ্রতি ৭ টাকা বেড়ে ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুদ কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়। এ ছাড়া খৈলের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা।

উপজেলার জেঠাইল গ্রামের খামারি গোলাম মোস্তফা গোলাপ বলেন, তাঁর খামারে দেশি ও বিদেশি জাতের সাতটি গরু ও পাঁচটি ছাগল রয়েছে। আগে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার খাদ্য লাগত। এখন দাম বাড়ার কারণে তাঁকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খাবার কিনতে হচ্ছে। এতে করে আগের তুলনায় খরচ অনেক বেশি হচ্ছে।

উপজেলার টুং-শিয়ালা গ্রামের প্রবাসফেরত রাজু আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৫ বছর কুয়েতে ছিলাম। আর সেখান থেকেই আমার ইচ্ছা বাড়ি গিয়ে গরুর খামার করব। যেই ভাবনা সেই কাজ, আমি বাড়ি এসে একটি গরুর খামার করেছি। বর্তমানে আমার খামারে ১৬টি গরু আছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে গোখাদ্যের দাম এত বেশি, আমি কল্পনাও করিনি। গরুর খাবার অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাতে মনে হয় লাভ তো দূরের কথা আসল টাকা তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোখাদ্যের দাম না কমলে আমার পক্ষে খামার পরিচালনা করা হয়তো সম্ভব হবে না। গোখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

উপজেলার আটনিতা গ্রামের রৌদ্র ডেইরি ফার্মের পরিচালক নওশাদ আলী বলেন, সব ধরনের গোখাদ্যের দাম বাড়ায় খামার করে আর লাভ হচ্ছে না। তাঁর খামারে ১৫টি গরুর মধ্যে ৬টি হলস্টেইন ও ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি আছে। বর্তমানে বাজারে গোখাদ্যের দাম বেশি। প্রতিদিনের খাবার কিনতে তাঁকে আগের চেয়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। কিন্তু দুধের দাম আগে যা ছিল এখনো তাই আছে।

গোখাদ্য উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার পরিবেশক আজাহার আলী বলেন, সব কোম্পানির উৎপাদিত গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। গত দুই মাসে কোনো প্রতিষ্ঠান তিনবার আবার কোনো প্রতিষ্ঠান চারবারে বাড়িয়েছে। এতে ২৫ কেজি খাদ্যের একটি বস্তা কিনতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর কর্মকর্তা কামরুন্নাহার আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, দানাদারসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম বাড়ায় খামারিরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। খামারে খরচ বাড়ায় অনেক খামারি গরু, ছাগলের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে, আবার কোনো কোনো খামারি লাভ হচ্ছে না বলে খামার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত