Ajker Patrika

এখনো বহাল দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রকৌশলী

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৩১
এখনো বহাল দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রকৌশলী

নিয়োগপ্রক্রিয়াতেই ছিল ঘাপলা। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) এক সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অথচ দিব্যি ওই প্রকৌশলী এখনো চাকরি করে যাচ্ছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাময়িক বরখাস্তই থাকেন। অথচ উল্টো চিত্র আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের ক্ষেত্রে। চাকরির পাশাপাশি তাঁর হাতে দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্পের কাজ। এ নিয়ে আরডিএ কর্মকর্তাদের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী নগরীর তালাইমারীতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরডিএর ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ নির্মাণ করা হচ্ছে।

মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হলেও কেন সাময়িক বরখাস্ত হননি, এমন প্রশ্নে শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘সেটা আমি কেমনে বলব? যাঁদের জিজ্ঞেস করার, তাঁদের করেন। এইগুলা প্রশ্ন আমাকে করবেন না।’

জানা গেছে, শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয় ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি। ওই মামলায় কামরুজ্জামানকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুর রব জোয়ার্দ্দারকেও অভিযুক্ত করা হয়।

দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০৪ সালে শেখ কামরুজ্জামান সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে নিয়োগ পান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের পরই প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার কথা। এ জন্য লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আরডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান ওই লিখিত পরীক্ষা বাতিল করেন। পরে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে পছন্দের প্রার্থী কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরডিএ সূত্র জানায়, লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন কামরুজ্জামান। তাই ওই পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। পরে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সূত্র আরও জানায়, ১৯৯৩ সালে কামরুজ্জামান মানবিক বিভাগ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। এরপর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগের ওই লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাঁরা ছিলেন বিএসসি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রিধারী।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধ পন্থায় কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছেন আরডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আর অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে কামরুজ্জামানও লাভবান হয়েছেন। তাই এ তিনজনকেই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

কামরুজ্জামানের অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ পেয়ে দুদক প্রথমে অনুসন্ধান করে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপপরিচালক আব্দুল করিম ওই মামলা করেন। পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ফরিদুর রহমান আদালতে ওই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এ নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব লুৎফুন নাহার ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর আরডিএ চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেন। চিঠির বিষয় হিসেবে লেখা হয়, ‘দুদকের চার্জশিটভুক্ত আসামি শেখ কামরুজ্জামানের (সহকারী প্রকৌশলী) বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আদেশ যথাযথভাবে প্রয়োগ না করা এবং তাঁর দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে’। এই চিঠিতে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, চাকরির বর্তমান অবস্থা এবং মামলার সবশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁর চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার যাবতীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। আরডিএ কর্তৃপক্ষ এসবের কিছুই পাঠায়নি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরডিএ চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেন বলেন, ‘আরডিএতে আসা আমার বেশি দিন হয়নি। এসব বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানি না। কয়েক দিন আগে আমি এ ধরনের কথা শুনেছি। বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মৌচাকে গাড়িতে লাশ: ২৫ লাখ টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে জাকিরকে শ্রীলঙ্কায় নিয়েছিল দালাল

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

সিন্ধু পানিবণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তানের বড় জয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গোপনে ১৯০ মিলিয়ন ডলারের নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত