Ajker Patrika

যমুনার তীর সংরক্ষণ বাঁধে ধস

এম কে দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর) 
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ৫৯
যমুনার তীর সংরক্ষণ বাঁধে ধস

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এতে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে যমুনাপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে।

ভাঙনের হুমকিতে কুলকান্দী বাজার, শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়, একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, বসতবাড়িসহ শত শত একর ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাঁধের ধস ঠেকাতে অতিদ্রুত যেন কর্তৃপক্ষ টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রশাসন বলছে আমরা বাঁধ রক্ষায় তৎপর রয়েছি।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, যমুনার ভাঙন প্রতিরোধে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানি বাজার থেকে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে ৪৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালে শুরু হয়ে ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়।

এর মধ্যে ইসলামপুরের কুলকান্দী হার্ড পয়েন্ট থেকে গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের আড়াই কিলোমিটারের জন্য ৯০ কোটি টাকার ব্যয়ে যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প নামে ১টি তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হয়।

বাঁধ এলাকা বাসিন্দারা বলেন, বাঁধ নির্মাণ করায় পার্থশী, বেলগাছা, চিনাডুলী ও কুলকান্দী ইউনিয়নসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় নির্মাণের এক বছরেই বাঁধে সিসি ব্লক ধসে পড়ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুলকান্দী হার্ড পয়েন্ট থেকে গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের মাঝামাঝি পুরাতন পাইলিংঘাট এলাকায় বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধের অন্তত ৯০ মিটার অংশ যমুনায় ধসে গেছে। বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুলকান্দী বাজার, শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়, দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি মসজিদ, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ধস ঠেকাতে জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু সরদার বলেন, ‘গত দুয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যমুনায় পানি বাড়ার কারণে পানিত চাপে বাঁধে ধস দেখা দিতে পারে।’

বাঁধ এলাকার আফজাল হোসেন, সুজন, মিজান, সাইফুল বলেন, ‘নিম্নমানের কাজ হওয়ায় নির্মাণের এক বছরেই বাঁধ ধসে পড়ছে। এছাড়া একটি শক্তিশালী বালু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবৎ নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভাঙন রোধে অতিদ্রুত টেকসই পদক্ষেপ না নিলে বাঁধসহ যমুনার তীরবর্তী এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।’

কুলকান্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বাবু জানান, ‘যমুনার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় পানির প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। এতে বাঁধে ধস দেখা দেয়। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বাঁধের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান জানান, ‘বাঁধের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। যাতে বাঁধের ধস ঠেকানো যায়। আমরা বাঁধ রক্ষায় তৎপর রয়েছি।’

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, ‘যমুনা নদীতে নতুন চ্যানেল বের হওয়ায় তীর রক্ষা বাঁধের ৯০ মিটার অংশ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের ধস ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করা হয়েছে।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকে এস এম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, ‘বাঁধ রক্ষায় আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। ইতিমধ্যে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত