ফজলুল কবির

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেরই বাস্তবতা, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরের প্রথমার্ধে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বেশ হট্টগোল হলো। এখন এ নিয়ে আলোচনা একটু থিতিয়ে এলেও ভোজ্যতেল নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট একই তিমিরে রয়ে গেছে। কয়েক দফায় সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পর অবশেষে লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিবেশক কোম্পানিগুলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে যে মাত্রায় বৃদ্ধি হয়েছিল, সেই মাত্রায় দাম কমেনি। এ নিয়ে যখন আলোচনা শুরুর সময়, তার আগে আগেই খবর এল কারও কথা না শুনেই পানির দাম বাড়ানোর গোঁ ধরেছেন ওয়াসার এমডি।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে হুজ্জতের কথা নিশ্চয় মানুষ এখনো ভোলেনি। সঙ্গে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ-সংকট। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের সম্ভাব্য সময়সূচি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এলাকাভেদে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। বিদ্যুৎ সরবরাহে এই সংকট নিশ্চিতভাবে উৎপাদন ব্যাহত করবে, যেমন হচ্ছে দেশে দেশে।
এরই মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এ তালিকায় আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে। সামনে এই সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ১৭ জুলাই।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই দশকে খাদ্যনিরাপত্তা বড় সংকট হিসেবে দেখা দেবে, যা বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংঘাত ইত্যাদিই এর মূল কারণ। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, ক্ষুধাপীড়িত জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই বাস করে সেই সব অঞ্চলে, যেখানে হয় স্বৈরশাসন চলছে, সরাসরি সামরিক শাসন আছে বা সংঘাত আছে বা রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে।
গবেষকেরা বলছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুপেয় পানির স্বল্পতা হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় সংকট। খাওয়ার পানির এই সংকটের কারণে এমনকি দেশে দেশে সংঘাতও তৈরি হতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হবে দাবদাহ, খরা, আয়বৈষম্য, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো।
সুপেয় পানির এই সংকট নিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা কিন্তু বহু বছর আগে থেকেই সতর্ক করছেন। আর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এত এত কথা হয়েছে এবং হচ্ছে যে, এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই এখন পুনরুক্তি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এই জলবায়ু সংকট এক নিদারুণ বাস্তবতার নাম। গোটা ইউরোপ আজ যে তীব্র দাবদাহ এবং দাবানলের অভিজ্ঞতা নিচ্ছে, তার পেছনে তো রয়েছে এই জলবায়ু পরিবর্তনই। বাংলাদেশের গত কয়েক দিনের আবহাওয়াও বলে দিচ্ছে, কোথাও বড় একটা গলদ হয়েছে নিশ্চয়। প্রতিবছরই এভাবে কোনো না কোনো সময় এই গলদের কথা জানান দিয়ে যায় প্রকৃতি। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেই ভুলে বসে থাকাটা মানুষের স্বভাব হয়ে গেছে যেন।
সে কথা থাক। খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যুটির দিকে বরং তাকানো যাক। বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, গোটা বিশ্ব খাদ্যসংকটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে মূল্যস্ফীতিকে বড় কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে বহু মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সংকটের পেছনে জ্বালানি দিচ্ছে। কারণ, বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ১০ শতাংশই আসে ইউক্রেন থেকে। আর বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় যাওয়া গম সরবরাহের ৪০ শতাংশের জোগান দেয় দেশটি। ফলে এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ জুলাই পর্যন্ত হিসাব বলছে, গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে কৃষিক্ষেত্রে মূল্যসূচক বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গম ও ভুট্টার দাম যথাক্রমে ২৪ ও ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও চালের দাম কম। আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে চালের দাম ১১ শতাংশ কম। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপদে আছে নিম্ন, নিম্নমধ্য ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশগুলো।
বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকালে কিন্তু তেমনটি মনে হচ্ছে না। প্রধান শস্য ধান হলেও এ দেশে চালের দাম বাড়লে অন্য পণ্যের মতোই তা কমার নাম নেয় না সহজে। পাশাপাশি অন্য খাদ্যপণ্যের দামও বেশি। রয়েছে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা। ডিজেল-সংকটের কারণে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ঘোষণা তো মাত্রই হলো। আর পানির মূল্যবৃদ্ধি কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা সতর্কবার্তার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে গোটা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের প্রায় সব দেশেই উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশের মধ্যে ৯৪ দশমিক ১, নিম্নমধ্য আয়ের ৮৮ দশমিক ৯, উচ্চ-মধ্য আয়ের ৮৭ শতাংশ দেশে ৫ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো দেশেই এ হার দুই অঙ্কে পৌঁছেছে। ধনী দেশগুলোর ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশের খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে।
এর কারণ হিসেবে সাদা চোখে যে কারণ সবার সামনে এসে দাঁড়ায় তা হচ্ছে—ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এরই মধ্যে অনেক হিসাবনিকাশ বদলে দিয়েছে। সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের ওলট-পালট হয়েছে। এই যুদ্ধের অব্যবহিত ফল হিসেবে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক দেশেই ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। আমদানিনির্ভর দেশগুলো এ অবস্থায় পড়েছে সবচেয়ে বড় বিপাকে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মতো আমদানিনির্ভর ক্ষেত্রগুলো এরই মধ্যে বড় সংকটের আভাস দিচ্ছে। কম্পিউটারসহ তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জামের বাজার অনেক দিন ধরেই অস্থির। এর শুরু অবশ্য করোনা মহামারির শুরু থেকেই। দেশের বাজারে অস্থিরতার পেছনে আন্তর্জাতিক কারণগুলোর চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়েই জনপরিসরে বেশি আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতায় কম-বেশি সব দেশ ভুগলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব গুণিতক হারে পড়ে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এর পেছনে বিভিন্ন খাতওয়ারি সিন্ডিকেট এবং সরকারের নানা স্তরে প্রোথিত দুর্নীতির কথাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়।
এই দুর্নীতি ও বাজারে প্রভাব বিস্তারকারী সিন্ডিকেটের জন্যই দেশের মানুষ ভোগান্তিতে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের খাদ্যনিরাপত্তা-সম্পর্কিত সর্বশেষ সূচকে (২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত) বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪। এইসূচকে মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯ দশমিক ১ পয়েন্ট। খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্যপ্রাপ্তির সামর্থ্য কোনোটিতেই বাংলাদেশ ৫০ পয়েন্টের মার্জিন পেরোতে পারেনি।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সংকট কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরের বাস্তবতা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই বাজারে অস্থিতিশীলতার সবগুলো নমুনা একসঙ্গে দেখা দেয়। ফলে বর্তমান পরিস্থিতি আরও বাজে হওয়াই স্বাভাবিক।
তাহলে উত্তরণ কোথায়? এর উত্তর সবাই জানে। তা-ও একটু গবেষক বা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শুনতে ভালো লাগে। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, গোটা পৃথিবীতে খাদ্যসংকটের মূলে কখনোই উৎপাদন-স্বল্পতা ছিল না; বরং সরবরাহ পদ্ধতির ভেতরে লুকিয়ে থাকা বৈষম্যের বীজই এই সংকটের জ্বালানি। আজকের বিশ্বেও এই একই জ্বালানি খাদ্যসংকটকে বড় হুমকি হিসেবে সামনে আনছে। শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালে এ বৈষম্যই সামনে আসে। বাংলাদেশে আয়বৈষম্য নিয়ে কিছুদিন পরপরই কথা বলেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যেও এর সমর্থন রয়েছে। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দেশের গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৪৮২, যা ২০১০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। গিনি সহগের মান বৃদ্ধি মানেই হলো বৈষম্য বৃদ্ধি। গত কয়েক বছরের হিসাব টানলে এর মান আরও বাড়ার আশঙ্কাই প্রবল। যদিও সরকার প্রায়ই বলে, সাধারণ মানুষের আয় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ইত্যাদিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়।
এই জায়গাগুলোতে এগিয়ে যাওয়াকে অস্বীকার না করেই বলা যায়, ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয় বা প্রবৃদ্ধির গল্প এক বড় ভাঁওতা। এই আয় ও বৃদ্ধি আসলে গুটিকয়েক জানা-অজানা ব্যাংক হিসাবেই গিয়ে জমা হচ্ছে। চুইয়ে পড়া কিছু খুচরো পয়সা গরিব লোক পাচ্ছে বটে, তবে তা আগুনে বাজার এক লহমায় হাপিশ করে দিচ্ছে। ফলে দেশি-বিদেশি গবেষক ও বিশ্লেষকেরা নানা হিসাব কষে যে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তাকে উড়িয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। আর রাস্তায় বেড়ে যাওয়া হাত পাতা লোকের দিকে তাকালে এবং তাদের আমলে নিলে তো একে আরও গুরুত্বের সঙ্গেই নেওয়া উচিত। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন খাদ্যসংকটের কারণ, তেমনি খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এটা যেকোনো দেশ ও যেকোনো সময়ের জন্যই সত্য।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেরই বাস্তবতা, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরের প্রথমার্ধে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বেশ হট্টগোল হলো। এখন এ নিয়ে আলোচনা একটু থিতিয়ে এলেও ভোজ্যতেল নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট একই তিমিরে রয়ে গেছে। কয়েক দফায় সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পর অবশেষে লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিবেশক কোম্পানিগুলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে যে মাত্রায় বৃদ্ধি হয়েছিল, সেই মাত্রায় দাম কমেনি। এ নিয়ে যখন আলোচনা শুরুর সময়, তার আগে আগেই খবর এল কারও কথা না শুনেই পানির দাম বাড়ানোর গোঁ ধরেছেন ওয়াসার এমডি।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে হুজ্জতের কথা নিশ্চয় মানুষ এখনো ভোলেনি। সঙ্গে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ-সংকট। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের সম্ভাব্য সময়সূচি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এলাকাভেদে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। বিদ্যুৎ সরবরাহে এই সংকট নিশ্চিতভাবে উৎপাদন ব্যাহত করবে, যেমন হচ্ছে দেশে দেশে।
এরই মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এ তালিকায় আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে। সামনে এই সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ১৭ জুলাই।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই দশকে খাদ্যনিরাপত্তা বড় সংকট হিসেবে দেখা দেবে, যা বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংঘাত ইত্যাদিই এর মূল কারণ। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, ক্ষুধাপীড়িত জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই বাস করে সেই সব অঞ্চলে, যেখানে হয় স্বৈরশাসন চলছে, সরাসরি সামরিক শাসন আছে বা সংঘাত আছে বা রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে।
গবেষকেরা বলছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুপেয় পানির স্বল্পতা হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় সংকট। খাওয়ার পানির এই সংকটের কারণে এমনকি দেশে দেশে সংঘাতও তৈরি হতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হবে দাবদাহ, খরা, আয়বৈষম্য, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো।
সুপেয় পানির এই সংকট নিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা কিন্তু বহু বছর আগে থেকেই সতর্ক করছেন। আর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এত এত কথা হয়েছে এবং হচ্ছে যে, এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই এখন পুনরুক্তি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এই জলবায়ু সংকট এক নিদারুণ বাস্তবতার নাম। গোটা ইউরোপ আজ যে তীব্র দাবদাহ এবং দাবানলের অভিজ্ঞতা নিচ্ছে, তার পেছনে তো রয়েছে এই জলবায়ু পরিবর্তনই। বাংলাদেশের গত কয়েক দিনের আবহাওয়াও বলে দিচ্ছে, কোথাও বড় একটা গলদ হয়েছে নিশ্চয়। প্রতিবছরই এভাবে কোনো না কোনো সময় এই গলদের কথা জানান দিয়ে যায় প্রকৃতি। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেই ভুলে বসে থাকাটা মানুষের স্বভাব হয়ে গেছে যেন।
সে কথা থাক। খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যুটির দিকে বরং তাকানো যাক। বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, গোটা বিশ্ব খাদ্যসংকটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে মূল্যস্ফীতিকে বড় কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে বহু মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সংকটের পেছনে জ্বালানি দিচ্ছে। কারণ, বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ১০ শতাংশই আসে ইউক্রেন থেকে। আর বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় যাওয়া গম সরবরাহের ৪০ শতাংশের জোগান দেয় দেশটি। ফলে এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ জুলাই পর্যন্ত হিসাব বলছে, গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে কৃষিক্ষেত্রে মূল্যসূচক বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গম ও ভুট্টার দাম যথাক্রমে ২৪ ও ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও চালের দাম কম। আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে চালের দাম ১১ শতাংশ কম। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপদে আছে নিম্ন, নিম্নমধ্য ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশগুলো।
বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকালে কিন্তু তেমনটি মনে হচ্ছে না। প্রধান শস্য ধান হলেও এ দেশে চালের দাম বাড়লে অন্য পণ্যের মতোই তা কমার নাম নেয় না সহজে। পাশাপাশি অন্য খাদ্যপণ্যের দামও বেশি। রয়েছে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা। ডিজেল-সংকটের কারণে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ঘোষণা তো মাত্রই হলো। আর পানির মূল্যবৃদ্ধি কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা সতর্কবার্তার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে গোটা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের প্রায় সব দেশেই উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশের মধ্যে ৯৪ দশমিক ১, নিম্নমধ্য আয়ের ৮৮ দশমিক ৯, উচ্চ-মধ্য আয়ের ৮৭ শতাংশ দেশে ৫ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো দেশেই এ হার দুই অঙ্কে পৌঁছেছে। ধনী দেশগুলোর ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশের খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে।
এর কারণ হিসেবে সাদা চোখে যে কারণ সবার সামনে এসে দাঁড়ায় তা হচ্ছে—ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এরই মধ্যে অনেক হিসাবনিকাশ বদলে দিয়েছে। সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের ওলট-পালট হয়েছে। এই যুদ্ধের অব্যবহিত ফল হিসেবে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক দেশেই ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। আমদানিনির্ভর দেশগুলো এ অবস্থায় পড়েছে সবচেয়ে বড় বিপাকে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মতো আমদানিনির্ভর ক্ষেত্রগুলো এরই মধ্যে বড় সংকটের আভাস দিচ্ছে। কম্পিউটারসহ তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জামের বাজার অনেক দিন ধরেই অস্থির। এর শুরু অবশ্য করোনা মহামারির শুরু থেকেই। দেশের বাজারে অস্থিরতার পেছনে আন্তর্জাতিক কারণগুলোর চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়েই জনপরিসরে বেশি আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতায় কম-বেশি সব দেশ ভুগলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব গুণিতক হারে পড়ে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এর পেছনে বিভিন্ন খাতওয়ারি সিন্ডিকেট এবং সরকারের নানা স্তরে প্রোথিত দুর্নীতির কথাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়।
এই দুর্নীতি ও বাজারে প্রভাব বিস্তারকারী সিন্ডিকেটের জন্যই দেশের মানুষ ভোগান্তিতে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের খাদ্যনিরাপত্তা-সম্পর্কিত সর্বশেষ সূচকে (২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত) বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪। এইসূচকে মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯ দশমিক ১ পয়েন্ট। খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্যপ্রাপ্তির সামর্থ্য কোনোটিতেই বাংলাদেশ ৫০ পয়েন্টের মার্জিন পেরোতে পারেনি।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সংকট কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরের বাস্তবতা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই বাজারে অস্থিতিশীলতার সবগুলো নমুনা একসঙ্গে দেখা দেয়। ফলে বর্তমান পরিস্থিতি আরও বাজে হওয়াই স্বাভাবিক।
তাহলে উত্তরণ কোথায়? এর উত্তর সবাই জানে। তা-ও একটু গবেষক বা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শুনতে ভালো লাগে। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, গোটা পৃথিবীতে খাদ্যসংকটের মূলে কখনোই উৎপাদন-স্বল্পতা ছিল না; বরং সরবরাহ পদ্ধতির ভেতরে লুকিয়ে থাকা বৈষম্যের বীজই এই সংকটের জ্বালানি। আজকের বিশ্বেও এই একই জ্বালানি খাদ্যসংকটকে বড় হুমকি হিসেবে সামনে আনছে। শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালে এ বৈষম্যই সামনে আসে। বাংলাদেশে আয়বৈষম্য নিয়ে কিছুদিন পরপরই কথা বলেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যেও এর সমর্থন রয়েছে। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দেশের গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৪৮২, যা ২০১০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। গিনি সহগের মান বৃদ্ধি মানেই হলো বৈষম্য বৃদ্ধি। গত কয়েক বছরের হিসাব টানলে এর মান আরও বাড়ার আশঙ্কাই প্রবল। যদিও সরকার প্রায়ই বলে, সাধারণ মানুষের আয় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ইত্যাদিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়।
এই জায়গাগুলোতে এগিয়ে যাওয়াকে অস্বীকার না করেই বলা যায়, ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয় বা প্রবৃদ্ধির গল্প এক বড় ভাঁওতা। এই আয় ও বৃদ্ধি আসলে গুটিকয়েক জানা-অজানা ব্যাংক হিসাবেই গিয়ে জমা হচ্ছে। চুইয়ে পড়া কিছু খুচরো পয়সা গরিব লোক পাচ্ছে বটে, তবে তা আগুনে বাজার এক লহমায় হাপিশ করে দিচ্ছে। ফলে দেশি-বিদেশি গবেষক ও বিশ্লেষকেরা নানা হিসাব কষে যে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তাকে উড়িয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। আর রাস্তায় বেড়ে যাওয়া হাত পাতা লোকের দিকে তাকালে এবং তাদের আমলে নিলে তো একে আরও গুরুত্বের সঙ্গেই নেওয়া উচিত। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন খাদ্যসংকটের কারণ, তেমনি খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এটা যেকোনো দেশ ও যেকোনো সময়ের জন্যই সত্য।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ফজলুল কবির

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেরই বাস্তবতা, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরের প্রথমার্ধে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বেশ হট্টগোল হলো। এখন এ নিয়ে আলোচনা একটু থিতিয়ে এলেও ভোজ্যতেল নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট একই তিমিরে রয়ে গেছে। কয়েক দফায় সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পর অবশেষে লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিবেশক কোম্পানিগুলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে যে মাত্রায় বৃদ্ধি হয়েছিল, সেই মাত্রায় দাম কমেনি। এ নিয়ে যখন আলোচনা শুরুর সময়, তার আগে আগেই খবর এল কারও কথা না শুনেই পানির দাম বাড়ানোর গোঁ ধরেছেন ওয়াসার এমডি।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে হুজ্জতের কথা নিশ্চয় মানুষ এখনো ভোলেনি। সঙ্গে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ-সংকট। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের সম্ভাব্য সময়সূচি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এলাকাভেদে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। বিদ্যুৎ সরবরাহে এই সংকট নিশ্চিতভাবে উৎপাদন ব্যাহত করবে, যেমন হচ্ছে দেশে দেশে।
এরই মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এ তালিকায় আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে। সামনে এই সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ১৭ জুলাই।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই দশকে খাদ্যনিরাপত্তা বড় সংকট হিসেবে দেখা দেবে, যা বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংঘাত ইত্যাদিই এর মূল কারণ। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, ক্ষুধাপীড়িত জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই বাস করে সেই সব অঞ্চলে, যেখানে হয় স্বৈরশাসন চলছে, সরাসরি সামরিক শাসন আছে বা সংঘাত আছে বা রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে।
গবেষকেরা বলছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুপেয় পানির স্বল্পতা হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় সংকট। খাওয়ার পানির এই সংকটের কারণে এমনকি দেশে দেশে সংঘাতও তৈরি হতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হবে দাবদাহ, খরা, আয়বৈষম্য, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো।
সুপেয় পানির এই সংকট নিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা কিন্তু বহু বছর আগে থেকেই সতর্ক করছেন। আর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এত এত কথা হয়েছে এবং হচ্ছে যে, এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই এখন পুনরুক্তি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এই জলবায়ু সংকট এক নিদারুণ বাস্তবতার নাম। গোটা ইউরোপ আজ যে তীব্র দাবদাহ এবং দাবানলের অভিজ্ঞতা নিচ্ছে, তার পেছনে তো রয়েছে এই জলবায়ু পরিবর্তনই। বাংলাদেশের গত কয়েক দিনের আবহাওয়াও বলে দিচ্ছে, কোথাও বড় একটা গলদ হয়েছে নিশ্চয়। প্রতিবছরই এভাবে কোনো না কোনো সময় এই গলদের কথা জানান দিয়ে যায় প্রকৃতি। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেই ভুলে বসে থাকাটা মানুষের স্বভাব হয়ে গেছে যেন।
সে কথা থাক। খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যুটির দিকে বরং তাকানো যাক। বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, গোটা বিশ্ব খাদ্যসংকটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে মূল্যস্ফীতিকে বড় কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে বহু মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সংকটের পেছনে জ্বালানি দিচ্ছে। কারণ, বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ১০ শতাংশই আসে ইউক্রেন থেকে। আর বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় যাওয়া গম সরবরাহের ৪০ শতাংশের জোগান দেয় দেশটি। ফলে এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ জুলাই পর্যন্ত হিসাব বলছে, গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে কৃষিক্ষেত্রে মূল্যসূচক বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গম ও ভুট্টার দাম যথাক্রমে ২৪ ও ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও চালের দাম কম। আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে চালের দাম ১১ শতাংশ কম। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপদে আছে নিম্ন, নিম্নমধ্য ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশগুলো।
বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকালে কিন্তু তেমনটি মনে হচ্ছে না। প্রধান শস্য ধান হলেও এ দেশে চালের দাম বাড়লে অন্য পণ্যের মতোই তা কমার নাম নেয় না সহজে। পাশাপাশি অন্য খাদ্যপণ্যের দামও বেশি। রয়েছে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা। ডিজেল-সংকটের কারণে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ঘোষণা তো মাত্রই হলো। আর পানির মূল্যবৃদ্ধি কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা সতর্কবার্তার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে গোটা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের প্রায় সব দেশেই উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশের মধ্যে ৯৪ দশমিক ১, নিম্নমধ্য আয়ের ৮৮ দশমিক ৯, উচ্চ-মধ্য আয়ের ৮৭ শতাংশ দেশে ৫ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো দেশেই এ হার দুই অঙ্কে পৌঁছেছে। ধনী দেশগুলোর ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশের খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে।
এর কারণ হিসেবে সাদা চোখে যে কারণ সবার সামনে এসে দাঁড়ায় তা হচ্ছে—ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এরই মধ্যে অনেক হিসাবনিকাশ বদলে দিয়েছে। সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের ওলট-পালট হয়েছে। এই যুদ্ধের অব্যবহিত ফল হিসেবে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক দেশেই ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। আমদানিনির্ভর দেশগুলো এ অবস্থায় পড়েছে সবচেয়ে বড় বিপাকে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মতো আমদানিনির্ভর ক্ষেত্রগুলো এরই মধ্যে বড় সংকটের আভাস দিচ্ছে। কম্পিউটারসহ তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জামের বাজার অনেক দিন ধরেই অস্থির। এর শুরু অবশ্য করোনা মহামারির শুরু থেকেই। দেশের বাজারে অস্থিরতার পেছনে আন্তর্জাতিক কারণগুলোর চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়েই জনপরিসরে বেশি আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতায় কম-বেশি সব দেশ ভুগলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব গুণিতক হারে পড়ে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এর পেছনে বিভিন্ন খাতওয়ারি সিন্ডিকেট এবং সরকারের নানা স্তরে প্রোথিত দুর্নীতির কথাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়।
এই দুর্নীতি ও বাজারে প্রভাব বিস্তারকারী সিন্ডিকেটের জন্যই দেশের মানুষ ভোগান্তিতে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের খাদ্যনিরাপত্তা-সম্পর্কিত সর্বশেষ সূচকে (২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত) বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪। এইসূচকে মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯ দশমিক ১ পয়েন্ট। খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্যপ্রাপ্তির সামর্থ্য কোনোটিতেই বাংলাদেশ ৫০ পয়েন্টের মার্জিন পেরোতে পারেনি।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সংকট কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরের বাস্তবতা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই বাজারে অস্থিতিশীলতার সবগুলো নমুনা একসঙ্গে দেখা দেয়। ফলে বর্তমান পরিস্থিতি আরও বাজে হওয়াই স্বাভাবিক।
তাহলে উত্তরণ কোথায়? এর উত্তর সবাই জানে। তা-ও একটু গবেষক বা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শুনতে ভালো লাগে। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, গোটা পৃথিবীতে খাদ্যসংকটের মূলে কখনোই উৎপাদন-স্বল্পতা ছিল না; বরং সরবরাহ পদ্ধতির ভেতরে লুকিয়ে থাকা বৈষম্যের বীজই এই সংকটের জ্বালানি। আজকের বিশ্বেও এই একই জ্বালানি খাদ্যসংকটকে বড় হুমকি হিসেবে সামনে আনছে। শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালে এ বৈষম্যই সামনে আসে। বাংলাদেশে আয়বৈষম্য নিয়ে কিছুদিন পরপরই কথা বলেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যেও এর সমর্থন রয়েছে। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দেশের গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৪৮২, যা ২০১০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। গিনি সহগের মান বৃদ্ধি মানেই হলো বৈষম্য বৃদ্ধি। গত কয়েক বছরের হিসাব টানলে এর মান আরও বাড়ার আশঙ্কাই প্রবল। যদিও সরকার প্রায়ই বলে, সাধারণ মানুষের আয় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ইত্যাদিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়।
এই জায়গাগুলোতে এগিয়ে যাওয়াকে অস্বীকার না করেই বলা যায়, ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয় বা প্রবৃদ্ধির গল্প এক বড় ভাঁওতা। এই আয় ও বৃদ্ধি আসলে গুটিকয়েক জানা-অজানা ব্যাংক হিসাবেই গিয়ে জমা হচ্ছে। চুইয়ে পড়া কিছু খুচরো পয়সা গরিব লোক পাচ্ছে বটে, তবে তা আগুনে বাজার এক লহমায় হাপিশ করে দিচ্ছে। ফলে দেশি-বিদেশি গবেষক ও বিশ্লেষকেরা নানা হিসাব কষে যে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তাকে উড়িয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। আর রাস্তায় বেড়ে যাওয়া হাত পাতা লোকের দিকে তাকালে এবং তাদের আমলে নিলে তো একে আরও গুরুত্বের সঙ্গেই নেওয়া উচিত। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন খাদ্যসংকটের কারণ, তেমনি খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এটা যেকোনো দেশ ও যেকোনো সময়ের জন্যই সত্য।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেরই বাস্তবতা, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরের প্রথমার্ধে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বেশ হট্টগোল হলো। এখন এ নিয়ে আলোচনা একটু থিতিয়ে এলেও ভোজ্যতেল নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট একই তিমিরে রয়ে গেছে। কয়েক দফায় সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পর অবশেষে লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিবেশক কোম্পানিগুলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে যে মাত্রায় বৃদ্ধি হয়েছিল, সেই মাত্রায় দাম কমেনি। এ নিয়ে যখন আলোচনা শুরুর সময়, তার আগে আগেই খবর এল কারও কথা না শুনেই পানির দাম বাড়ানোর গোঁ ধরেছেন ওয়াসার এমডি।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে হুজ্জতের কথা নিশ্চয় মানুষ এখনো ভোলেনি। সঙ্গে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ-সংকট। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের সম্ভাব্য সময়সূচি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এলাকাভেদে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। বিদ্যুৎ সরবরাহে এই সংকট নিশ্চিতভাবে উৎপাদন ব্যাহত করবে, যেমন হচ্ছে দেশে দেশে।
এরই মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এ তালিকায় আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে। সামনে এই সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ১৭ জুলাই।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই দশকে খাদ্যনিরাপত্তা বড় সংকট হিসেবে দেখা দেবে, যা বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংঘাত ইত্যাদিই এর মূল কারণ। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, ক্ষুধাপীড়িত জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই বাস করে সেই সব অঞ্চলে, যেখানে হয় স্বৈরশাসন চলছে, সরাসরি সামরিক শাসন আছে বা সংঘাত আছে বা রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে।
গবেষকেরা বলছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুপেয় পানির স্বল্পতা হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় সংকট। খাওয়ার পানির এই সংকটের কারণে এমনকি দেশে দেশে সংঘাতও তৈরি হতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হবে দাবদাহ, খরা, আয়বৈষম্য, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো।
সুপেয় পানির এই সংকট নিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা কিন্তু বহু বছর আগে থেকেই সতর্ক করছেন। আর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এত এত কথা হয়েছে এবং হচ্ছে যে, এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই এখন পুনরুক্তি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এই জলবায়ু সংকট এক নিদারুণ বাস্তবতার নাম। গোটা ইউরোপ আজ যে তীব্র দাবদাহ এবং দাবানলের অভিজ্ঞতা নিচ্ছে, তার পেছনে তো রয়েছে এই জলবায়ু পরিবর্তনই। বাংলাদেশের গত কয়েক দিনের আবহাওয়াও বলে দিচ্ছে, কোথাও বড় একটা গলদ হয়েছে নিশ্চয়। প্রতিবছরই এভাবে কোনো না কোনো সময় এই গলদের কথা জানান দিয়ে যায় প্রকৃতি। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেই ভুলে বসে থাকাটা মানুষের স্বভাব হয়ে গেছে যেন।
সে কথা থাক। খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যুটির দিকে বরং তাকানো যাক। বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, গোটা বিশ্ব খাদ্যসংকটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে মূল্যস্ফীতিকে বড় কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে বহু মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সংকটের পেছনে জ্বালানি দিচ্ছে। কারণ, বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ১০ শতাংশই আসে ইউক্রেন থেকে। আর বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় যাওয়া গম সরবরাহের ৪০ শতাংশের জোগান দেয় দেশটি। ফলে এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ জুলাই পর্যন্ত হিসাব বলছে, গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে কৃষিক্ষেত্রে মূল্যসূচক বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গম ও ভুট্টার দাম যথাক্রমে ২৪ ও ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও চালের দাম কম। আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে চালের দাম ১১ শতাংশ কম। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপদে আছে নিম্ন, নিম্নমধ্য ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশগুলো।
বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকালে কিন্তু তেমনটি মনে হচ্ছে না। প্রধান শস্য ধান হলেও এ দেশে চালের দাম বাড়লে অন্য পণ্যের মতোই তা কমার নাম নেয় না সহজে। পাশাপাশি অন্য খাদ্যপণ্যের দামও বেশি। রয়েছে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা। ডিজেল-সংকটের কারণে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ঘোষণা তো মাত্রই হলো। আর পানির মূল্যবৃদ্ধি কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা সতর্কবার্তার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে গোটা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের প্রায় সব দেশেই উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশের মধ্যে ৯৪ দশমিক ১, নিম্নমধ্য আয়ের ৮৮ দশমিক ৯, উচ্চ-মধ্য আয়ের ৮৭ শতাংশ দেশে ৫ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো দেশেই এ হার দুই অঙ্কে পৌঁছেছে। ধনী দেশগুলোর ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশের খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে।
এর কারণ হিসেবে সাদা চোখে যে কারণ সবার সামনে এসে দাঁড়ায় তা হচ্ছে—ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এরই মধ্যে অনেক হিসাবনিকাশ বদলে দিয়েছে। সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের ওলট-পালট হয়েছে। এই যুদ্ধের অব্যবহিত ফল হিসেবে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক দেশেই ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। আমদানিনির্ভর দেশগুলো এ অবস্থায় পড়েছে সবচেয়ে বড় বিপাকে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মতো আমদানিনির্ভর ক্ষেত্রগুলো এরই মধ্যে বড় সংকটের আভাস দিচ্ছে। কম্পিউটারসহ তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জামের বাজার অনেক দিন ধরেই অস্থির। এর শুরু অবশ্য করোনা মহামারির শুরু থেকেই। দেশের বাজারে অস্থিরতার পেছনে আন্তর্জাতিক কারণগুলোর চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়েই জনপরিসরে বেশি আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতায় কম-বেশি সব দেশ ভুগলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব গুণিতক হারে পড়ে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এর পেছনে বিভিন্ন খাতওয়ারি সিন্ডিকেট এবং সরকারের নানা স্তরে প্রোথিত দুর্নীতির কথাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়।
এই দুর্নীতি ও বাজারে প্রভাব বিস্তারকারী সিন্ডিকেটের জন্যই দেশের মানুষ ভোগান্তিতে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের খাদ্যনিরাপত্তা-সম্পর্কিত সর্বশেষ সূচকে (২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত) বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪। এইসূচকে মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯ দশমিক ১ পয়েন্ট। খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্যপ্রাপ্তির সামর্থ্য কোনোটিতেই বাংলাদেশ ৫০ পয়েন্টের মার্জিন পেরোতে পারেনি।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সংকট কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরের বাস্তবতা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই বাজারে অস্থিতিশীলতার সবগুলো নমুনা একসঙ্গে দেখা দেয়। ফলে বর্তমান পরিস্থিতি আরও বাজে হওয়াই স্বাভাবিক।
তাহলে উত্তরণ কোথায়? এর উত্তর সবাই জানে। তা-ও একটু গবেষক বা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শুনতে ভালো লাগে। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, গোটা পৃথিবীতে খাদ্যসংকটের মূলে কখনোই উৎপাদন-স্বল্পতা ছিল না; বরং সরবরাহ পদ্ধতির ভেতরে লুকিয়ে থাকা বৈষম্যের বীজই এই সংকটের জ্বালানি। আজকের বিশ্বেও এই একই জ্বালানি খাদ্যসংকটকে বড় হুমকি হিসেবে সামনে আনছে। শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালে এ বৈষম্যই সামনে আসে। বাংলাদেশে আয়বৈষম্য নিয়ে কিছুদিন পরপরই কথা বলেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যেও এর সমর্থন রয়েছে। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দেশের গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৪৮২, যা ২০১০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। গিনি সহগের মান বৃদ্ধি মানেই হলো বৈষম্য বৃদ্ধি। গত কয়েক বছরের হিসাব টানলে এর মান আরও বাড়ার আশঙ্কাই প্রবল। যদিও সরকার প্রায়ই বলে, সাধারণ মানুষের আয় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ইত্যাদিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়।
এই জায়গাগুলোতে এগিয়ে যাওয়াকে অস্বীকার না করেই বলা যায়, ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয় বা প্রবৃদ্ধির গল্প এক বড় ভাঁওতা। এই আয় ও বৃদ্ধি আসলে গুটিকয়েক জানা-অজানা ব্যাংক হিসাবেই গিয়ে জমা হচ্ছে। চুইয়ে পড়া কিছু খুচরো পয়সা গরিব লোক পাচ্ছে বটে, তবে তা আগুনে বাজার এক লহমায় হাপিশ করে দিচ্ছে। ফলে দেশি-বিদেশি গবেষক ও বিশ্লেষকেরা নানা হিসাব কষে যে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তাকে উড়িয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। আর রাস্তায় বেড়ে যাওয়া হাত পাতা লোকের দিকে তাকালে এবং তাদের আমলে নিলে তো একে আরও গুরুত্বের সঙ্গেই নেওয়া উচিত। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন খাদ্যসংকটের কারণ, তেমনি খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এটা যেকোনো দেশ ও যেকোনো সময়ের জন্যই সত্য।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশে
২১ জুলাই ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশে
২১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশে
২১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আজ কেনা খাবার দুই দিন পরই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বাজার এক স্থায়ী দুঃখের নাম যেন। নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কমার নাম নেয় না সহজে। ফলে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এটা এখন আর শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশে
২১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫