Ajker Patrika

উন্নয়নকাজের ‘ধকল’ বাতাসে

এম আসাদুজ্জামান সাদ, গাজীপুর
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ০২
উন্নয়নকাজের ‘ধকল’ বাতাসে

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে গাজীপুর। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আর গাজীপুরে বায়ুদূষণের জন্য অনুন্নত প্রযুক্তিতে সড়ক উন্নয়ন বা নির্মাণকাজকে দায়ী করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক নয়ন মিয়া। তিনি বাকি ৩০ ভাগের মধ্যে ২০ ভাগ ইটভাটা ও ১০ ভাগ কলকারখানার ধোঁয়া দায়ী বলে মনে করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পসহ অনেক বড় বড় উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। এসব কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে প্রচুর ধুলাবালু ও ইটের কণা ওড়ে। এতে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময় সড়ক-মহাসড়কে দৃষ্টিসীমা সীমিত হয়ে পড়ে।

এসব উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের সময় নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে সড়কে ফেলে রাখা হয়। সড়কের ওপর বিছানো নির্মাণসামগ্রী যেমন বালু বা ইটের খোয়ায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ছিটানো হয় না। ফলে যানবাহন চলাচলের সময় প্রচুর ধুলাবালু ও ইটের ক্ষুদ্র কণা বাতাসে উড়ে বেড়ায়।

গাজীপুর-ঢাকা মহাসড়কে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলায় ধুলাবালুসহ নির্মাণসামগ্রীর কণা ওড়ে। সম্প্রতি সড়কটি থেকে তোলাবাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, গাজীপুরের বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন। বায়ুদূষণ রোধে প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকের সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দেখা যায় সকল বর্জ্য শেষ পর্যন্ত গিয়ে জলাশয়ে পড়ে। এর জন্য সুষ্ঠু নাগরিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে বায়ুদূষণসহ সব প্রকার দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা কমানো সম্ভব।

গাজীপুরের বায়দূষণের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, গাজীপুরে বায়ুদূষণের ৭০ ভাগ কারণ সড়কের উন্নয়নকাজ। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে অনুন্নত প্রযুক্তিতে। এসব কাজ বাস্তবায়নের সময় পানি ছিটানো হচ্ছে না। ফলে ধূলিকণা এবং অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ময়লা-আবর্জনা বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি করছে।

নয়ন মিয়া দাবি করেন, এসব নির্মাণকাজ আজকে বন্ধ হলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামের নিচে নেমে আসবে। তিনি বলেন, বাকি ৩০ ভাগের মধ্যে ২০ ভাগ বায়ুদূষণ হয় ইটভাটার ধোয়া থেকে। বাকি ১০ ভাগ হয় কল-কারখানার ধোঁয়ার মাধ্যমে। মহানগরীতে ইতিমধ্যে ১৮০টি ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে এবং অন্যান্য এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।

উন্নয়নকাজ চলমান রেখে বায়ুদূষণ কমানোর উপায় কী জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, যে সমস্ত উন্নয়নকাজ হচ্ছে এগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পানি ছিটিয়ে ধুলাবালু প্রভৃতি বায়ুর সঙ্গে মিশে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অপরিকল্পিত ও অনুন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নের ফলে গাজীপুরে বায়ুদূষণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে—এমন বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর বিআরটি’র প্রকল্প পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, উন্নয়নকাজের জন্য বায়ুদূষণ হচ্ছে এ কথা ঠিক। তবে বিআরটি প্রকল্পের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের সময় পানি ছিটিয়ে অন্যান্য বায়ুদূষণকারী পদার্থ নিয়ন্ত্রণে সব সময় কাজ করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক পানি ছিটিয়ে এবং জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রেখে দূষণ রোধে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

লিয়াকত আলী বলেন, শুধু সড়ক উন্নয়নকাজের জন্য বায়ুদূষণ হচ্ছে এটি পুরোপুরি ঠিক নয়। সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য ও ধোঁয়া গাজীপুরের বায়ুদূষণের কারণ। এ ছাড়া অন্য জেলা থেকে দূষিত পদার্থ বাতাসে ভেসে এসে গাজীপুরের বায়ুদূষণ করছে।

বিআরটি’র প্রকল্প পরিচালক আশ্বস্ত করেন, আগামী মার্চের মধ্যে বিআরটি প্রকল্পের সম্পূর্ণ সড়কের কার্পেটিং কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। তখন আর এ ধরনের বায়ুদূষণকারী কোনো পদার্থ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত