Ajker Patrika

সংকটে সহায় হোন

সম্পাদকীয়
সংকটে সহায় হোন

দেশে এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ। এ নিয়ে চলছে নানা মত-দ্বিমত। কেউ কথা বলছেন ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধন নিয়ে, কেউ বলছেন ডেঙ্গু রোগের যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে। পত্রপত্রিকার খবর আর টেলিভিশনের টক শোগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়। কিন্তু শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে, তাদের ওপর দিয়ে কী ঝড়-ঝাপ্টা বয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এই সংকটের সময় কিছু অসাধু লোভী ব্যক্তি সুযোগ পেয়েছে টাকা দিয়ে পকেট ভরার। ৬০ টাকার ডেঙ্গুর পরীক্ষা যখন ১ হাজার টাকায় করানোর অভিযোগ ওঠে, তখন বোঝাই যায়, এই ভয়ংকর রোগটিও লোভী মানুষদের কপাল খুলে দিয়েছে।

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর—বরিশালের মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিট-সংকট। দুই সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গুর পরীক্ষা বন্ধ। তাই রোগীরা বেসরকারি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে বেশি টাকা দিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছে, অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬০ টাকায় করানো যেত। সেখানে বেসরকারি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে ডেঙ্গুর পরীক্ষার জন্য ১ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য এটা একধরনের শাস্তি।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কবে নাগাদ কিট পাওয়া যাবে, তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরেও সেখানকার কোনো হৃদয়বান ব্যক্তির চোখে সেই পত্র পড়েনি।

অথচ এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদন থেকে প্রতিনিয়তই জানা যাচ্ছে কতজনকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে আর কতজন এই রোগে মারা গেছে; অর্থাৎ তারাই তো ডেঙ্গুর প্রকোপ ও ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করছে। তাই এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করাটা তাদের শোভা পায় না।

ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি ভাইরাস আক্রান্ত জ্বরও মানুষকে কাবু করছে। দুই জ্বরের কাজকর্ম যেমন ভিন্ন, তেমনি এর চিকিৎসাপদ্ধতিও ভিন্ন। তাই কোনটা কোন জ্বর, সেটা পরীক্ষা করে নেওয়াটা জরুরি। এরপরই তো চিকিৎসক কাজ শুরু করতে পারবেন।

মানুষের মৌলিক অধিকারের তালিকার মধ্যে যে ‘চিকিৎসা’ আছে, তা হয়তো কেউ কেউ ভুলতে বসেছেন। তাই তো রোগীদের সংকটের সময় কেউ কেউ ধান্দা করে টু-পাইস কামিয়ে নিচ্ছে। এমন অভিযোগ কিন্তু করোনাকালেও উঠেছিল। এই গোত্রীয় মানুষদের মানবতার কথা মনে করিয়ে দিলে কোনো লাভ হয় না। তারা একবারও ভেবে দেখে না যে কারও বিপদে তার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অন্যায়; তারা ভাবে না যে এমন বিপদে তারাও কখনো পড়তে পারে।

স্বাস্থ্যসেবার এমন সংকটকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেই আদাজল খেয়ে কাজ শুরু করতে হবে। রোগীদের বিপদের সুযোগে অতিরিক্ত অর্থ যেন কেউ বগলদাবা করতে না পারে, সেই নজরদারি করা এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নেওয়া তো তাদেরই দায়িত্ব। চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মহলকেই আন্তরিক হতে হবে। নইলে ওই লোভীদের কারণেই মৃতের সংখ্যা অকারণে বাড়তে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত