Ajker Patrika

স্মৃতির মেঠোপথ ধরে সেই আঙিনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ২৪
স্মৃতির মেঠোপথ ধরে  সেই আঙিনায়

ক্যাম্পাসের সবুজ আঙিনা মাড়িয়ে গেছেন বহু আগে। এরপর একে একে কেটে গেছে বহু বছর। প্রায় ২০ বছর পর আবার একই ক্যাম্পাসে, একই আঙিনায়, একই পথ মাড়াতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইমাম হাসান। ঢাবির শতবর্ষের উৎসবে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন ইমাম। ক্যাম্পাসে এসেই স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন এ প্রাক্তন।

আবেগ প্রকাশ করে ইমাম বলেন, ‘২০ বছর আগে যেমন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, এখন আর তেমনটি নেই। কিন্তু মধুর ক্যানটিন, কলাভবন, টিএসসি, কার্জন হল আগের মতোই আছে। বারবার শুধু সেই হারানো সময়ের কথাই মনে পড়ছে।’

ইমাম হাসানের মতো এমন হাজারো প্রাক্তন ভিড় জমিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঢাবির শতবর্ষের আয়োজনে যোগ দিতে এসেছেন তাঁরা। তবে তাঁদের কেউ এখন আর একা নেই। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নিজের স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজনকেও।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে, সকালে খুব ভিড় না থাকলেও দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে কার্জন হল, শহীদ মিনার, কলাভবন, টিএসসি, ভিসি চত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এলাকা ছিল লোকে লোকারণ্য।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবদুল আজিজ। তিনি জানান, বয়স আর দুর্বলতার কারণে এখন আর একা চলতে পারেন না। ছুটির দিন হওয়ায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আজিজ বলেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ আর আগের মতো নেই। আগে ক্যাম্পাস ছিল খোলামেলা। প্রচুর আড্ডা দেওয়ার জায়গা ছিল। এখন তো হাঁটার জায়গাও নেই ঠিকমতো। অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির কোনায় সাগরের চায়ের দোকান ছিল, সেখানে বসে বন্ধুরা গান গাইতাম আর দিনভর আড্ডা দিতাম। এখন সেই দোকানের জায়গায় মেট্রোরেলের পিলার।’

কার্জন হলের নাগলিঙ্গম গাছের সঙ্গে ছবি তুলছিলেন দুজন মধ্যবয়সী নারী। মহসিনা বেগম আর রোজিনা আক্তার। তাঁরা জানালেন, কার্জনের ক্লাসরুম আর রোকেয়া হলে নিজেদের রুমের বাইরে খুব বেশি ক্যাম্পাস ঘোরা হয়নি ছাত্রজীবনে। তারপরও ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে এ আঙিনাকে খুব বেশি মনে পড়ে তাঁদের। কোনো দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাস সাজানো হলেই তাই ছুটে আসেন দুই বান্ধবী।

এদিন ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে এসেছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সাবেক ছাত্র আর বর্তমান উপাচার্য হিসেবে শতবর্ষের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানকার ছাত্র ছিলাম, শিক্ষকতা করেছি। এখন আবার উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছি। সবকিছুই স্বপ্নের মতো মনে হয়। দায়িত্বের কারণে সব সময় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে পারি না। তবে আজ কদিন যা করছি, তা নিজেকে সাবেক ছাত্র মনে করেই করছি।’

এদিকে শতবর্ষ উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায় কার্জন হল, কলাভবন, ভিসি চত্বর, স্মৃতি চিরন্তন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবন, টিএসসি চত্বর, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাস এবং ফুলার রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক লাল, সবুজ, নীল রঙের বাতির আলোয় সাজানো হয়েছে।

এ ছাড়া ‘শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে বক্স ও বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড রঙিন আলো ছড়াচ্ছে ক্যাম্পাসজুড়ে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত ১ জুলাই শতবর্ষ পূর্ণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়। তবে সেই আক্ষেপ ঘোচাতে আয়োজনের কমতি রাখেনি ঢাবি প্রশাসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত