Ajker Patrika

দ্রব্যমূল্যের পূর্বাভাস সেল শুধু নামেই

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৩৭
Thumbnail image

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল থাকলেও সেটি কার্যকর নেই। এই সেল মন্ত্রণালয়ে সচিবের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো ছাড়া কোনো কাজই করছে না। একাধিক আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশে নিত্যপণ্যের চাহিদা বছরে কত, কী পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে, কী পরিমাণ মজুত আছে, ঋণপত্র পরিস্থিতি ও তা নিষ্পত্তিসংক্রান্ত কোনো তথ্য কোনো সংস্থার কাছে নেই। ফলে কখনো অতিরিক্ত পণ্য আমদানি হচ্ছে। আবার কখনো সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে ভোক্তাদের চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সেই পণ্য।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেল থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রতিবেদন দেওয়া হয় সচিবের কাছে। তবে সচিব ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারেন না প্রতিবেদনে কী থাকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিবেদনে মূলত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদর সম্পর্কে তথ্য থাকে। আমদানি করা বিভিন্ন নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ও স্থানীয় বাজারমূল্যের প্রবণতার তথ্যটি সচিবকে অবগত করা হয়। তবে কোনো সুপারিশ করা হয় না আর সুপারিশ করা হলেও সেগুলো কাজে আসে না।

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেল থেকে দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া গেলে তাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। এ বছর রমজানে দেশে বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হয়েছে। এতে অনেককেই লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এ-সংক্রান্ত আগাম তথ্য পাওয়া গেলে তাঁদের জন্য সুবিধা হতো।’

দেশের একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত প্রায় প্রতিটি সভায় উপস্থিত থাকেন। অথচ ওই সেল সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই প্রথম বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম।’

বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) মো. রেদোয়ানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাস সেল থেকে দেশের নিত্যপণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, মজুত ও আমদানি-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। পণ্যের মজুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমদানি করা যেত। এতে লোকসানের ঝুঁকি কম থাকত।’ এই সেলের পরিধি বাড়ানো এবং কার্যকর একটি সেলে পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি।

আরেকটি শিল্পগোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা বলেন, দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কাজ করতে পারে। ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অনেক দেশে এ ধরনের কার্যক্রম আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) নামে একটি সংস্থায় দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকে।

পদ ১১, আছেন ৩ জন
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল গঠিত হয়। এখানে যুগ্ম সচিব মর্যাদার একজন বাণিজ্য পরামর্শক, দুজন সহকারী পরামর্শক, দুজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তিনজন অফিস সহায়কসহ এগারোটি পদ আছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে মাত্র তিনজন কর্মরত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) মো. রুহুল আমিন বলেন, দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যভান্ডার তৈরি করতে একটি সফটওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সফটওয়ার নির্মাণের কাজ করছে।

ভারত সরকার ২০১৯ সালে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলে দেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে দেশে চিনির সংকট। এর মধ্যে কয়েক দফা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সেই দামে চিনি মিলছে না। এ ক্ষেত্রে পূর্বাভাস সেল কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

পূর্বাভাস সেল কার্যকর ও শক্তিশালী করার তাগিদ
পূর্বাভাস সেলের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীসহ ভোক্তা-অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা মনে করেন, সেলটি আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত।
দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেল সম্পর্কে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, উদ্যোগটি ভালো। তবে সেলটি যাতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত